শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবির জন্য মালবাহী জাহাজ এসকেএল-৩ এর চালকের বেপরোয়া গতি ও তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণের ত্রুটিকে দায়ী করেছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আঘাতকারী এই জাহাজটি অনুমতি ছাড়াই চলাচল করছিল।
সেতুর পিলার নদীর মধ্যে স্থাপন করায় এবং নৌপথে প্রতিবন্ধকতামূলক নির্মাণসামগ্রী রাখায় নৌপথ সরু হয়ে যাওয়াকেও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসাবে বলা হয়েছে। তবে জাহাজে প্রথম শ্রেণির সনদধারী চালক ছিল। প্রতিবেদনে, সেতুর পিলার সরিয়ে নদীর প্রশস্ততা বাড়ানো, ছোট আকারের সানকেন ডেকবিশিষ্ট লঞ্চ ক্রমান্বয়ে সরিয়ে দেওয়া, অলস জাহাজ যততত্র পার্কিং বন্ধ করাসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা সোমবার নৌসচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দীন চৌধুরীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। বেঁধে দেওয়া সাত কর্মদিবসের মধ্যেই কমিটি ২৭ পৃষ্ঠার রিপোর্ট জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে এসকেএল-৩ জাহাজের মাস্টার, ড্রাইভারের জবানবন্দি, ডুবে যাওয়া লঞ্চ সাবিত আল হাসানের বেঁচে যাওয়া মাস্টার, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ার, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রায় তিন পৃষ্ঠাজুড়ে রয়েছে সুপারিশ ও দুই পৃষ্ঠায় রয়েছে দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের নাম ও দায়িত্ব।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের বেঁধে দেওয়া সাত কর্মদিবসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।
নারায়ণগঞ্জ শহরের মদনঘাট এলাকায় গত ৪ এপ্রিল বিকালে নৌদুর্ঘটনায় সাবিত আল হাসান লঞ্চটি ডুবে গেলে ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ৮ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় নোঙর করা অবস্থায় কার্গো জাহাজ এবং জাহাজের চালকসহ ১৪ জনকে আটক করা হয়। আটকের আগেই জাহাজের রং বদলে ফেলা হয়।
নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আবদুছ ছাত্তার শেখকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাহাজটি প্রথম শ্রেণির মাস্টার ওয়াহিদুজ্জামান চালাচ্ছিলেন। অপর দিকে ডুবে যাওয়া লঞ্চে তৃতীয় শ্রেণির চালক জাকির হোসেন ছিলেন। কার্গো জাহাজের চালকের বেপরোয়া গতি, অদক্ষতা ও অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া জাহাজটির রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) রয়েছে। কিন্তু সার্ভে রিপোর্ট ছিল না। সার্ভে রিপোর্ট ছাড়া চলাচল করে অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ-১৯৭৬ এর সংশ্লিষ্ট ধারা লংঘন করেছে জাহাজটি। চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীতলক্ষ্যা নদীতে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুর অনেক স্থাপনা নদীর মধ্যে থাকায় চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। নদীর ভেতরে কয়েকটি পিলার বসানো হয়েছে। এতে নৌপথটি সরু হয়ে গেছে। এটিও নৌ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। প্রতিবেদনে সেতুর পিলার ও নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নদীর প্রশস্ততা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। দুদিক থেকে নৌযান যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে-সেই সুপারিশও করা হয়।
এ ছাড়া চালকদের অদক্ষতা ও অবহেলার বিষয়ে সচেতন করতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা, সার্ভেয়ারের সংখ্যা বাড়ানো, ঘটনাস্থল থেকে খেয়াঘাট সরানোর এবং যত্রতত্র অলস জাহাজ যাতে নোঙর না করতে পারে সেই পদক্ষেপ নেওয়াসহ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন