গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি জাতীয় জ্ঞানকোষ সম্প্রতি ১০ খণ্ডে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ’ প্রকাশ করেই তথ্যে বড় ধরনের ভুল করায় সমালোচনায় পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের দলিল নিয়ে কাজ করছেন এমন অনেকে নানাভাবে ভুলগুলো তুলে ধরে যথা শিগগির সম্ভব শুধরানোর দাবি নিয়ে হাজির হচ্ছেন। যদিও বইটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বলছেন, এসব বিষয়ে তিনি অবহিত নন।
১০ নম্বর খণ্ডে ৭ মার্চের ভাষণের অন্তর্ভুক্তিতে পৃষ্ঠা নং ১০০ তে দেখা যায় “ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণদান” শিরোনামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর একটা ছবি। ছবিতে স্পিচ টেবিলটি কাঠের, যা একটা মারাত্মক ভুল। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের ভিডিও ক্লিপ ও সংবাদপত্রে যা দেখা যায়, সেই অনুযায়ী স্পিচ টেবিলটি সাদা কাপড়ে মোড়ানো ছিল এবং টেবিলের ওপরে বঙ্গবন্ধুর চশমা ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষে ৭ মার্চের ভাষণের ভুল ছবি!
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক প্রবাসী মাহবুবুর রহমান জালাল হতাশা ব্যক্ত করে ফেসবুকে এ নিয়ে একটি পোস্ট দেন। পরবর্তীতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জ্ঞানকোষটি আগ্রহ নিয়ে দেখতে গিয়ে হতাশ হয়েছি। ১০ নম্বর খণ্ডে ৭ মার্চের ভাষণের অন্তর্ভুক্তিতে পৃষ্ঠা নং ১০০ তে আমরা দেখি ‘ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণদান’ শিরোনামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণরত একটা ছবি। ছবিতে স্পিচ টেবিলটি কাঠের যা একটা মারাত্মক ভুল। ভাষণের ভিডিও দেখলে ভুলটি স্পষ্ট হয়। প্রকৃত ভিডিও বা ছবিতে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যে ডায়াসের পেছনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন সেটি সাদা কাপড়ে মোড়ানো। কিন্তু জ্ঞানকোষে ৭ মার্চের ভাষণ ক্যাপশন দিয়ে যে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে সেটা কাঠের ডায়াস, সাদা কাপড়ের কোনও অস্তিত্ব সেখানে নেই। তাই আমি হতাশা ব্যক্ত করে ফেসবুক লিখি, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনার কাছেই সব অভিযোগ অনুযোগ নিয়ে আসতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, সরকারি মোটা অর্থে দীর্ঘ সময় নিয়ে করা এই বইয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণরত এই ছবি ব্যবহার করার অর্থ- যে বা যারা এই প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত তারা বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতি উদাসীন ।
৭ মার্চের ভাষণ
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর মনে করেন, ঐতিহাসিক বিষয়ে এ ধরনের ভুল কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ৭ মার্চের ভাষণ এখন বিশ্ব সম্পদে পরিণত হয়েছে। সেখানে অন্য ছবি দিয়ে যদি ৭ মার্চের ভাষণের ক্যাপশন দেওয়া হয় সেটি ক্ষমার অযোগ্য এবং সুস্পষ্টতই অবহেলা। একশ বছর পরে মানুষ কীভাবে জানবে এসব ভুল ইতিহাস। চোখের সামনে এখন ইউটিউব ভিডিওতে দেখা যায় যে বঙ্গবন্ধুর কোন ছবিটা ৭ মার্চের। সেখানে এ ধরনের কাজ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ দায় সম্পাদকদ্বয়কে নিতে হবে। ১২ হাজার টাকা মূল্যমান লেখা একটি কাজে এধরনের অবহেলা পাঠকদের সঙ্গে প্রতারণার নামান্তর।
জ্ঞানকোষের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাজাহান মিয়ার সঙ্গে যোগোযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ধরনের ভুলের বিষয়ে কোনও অভিযোগ তার কানে আসেনি। তিনি এ বিষয়ে প্রধান সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুন অর রশিদের সঙ্গে যোগোযোগের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে বলতে পারবো না।’
এই ভুল প্রসঙ্গে জ্ঞানকোষের প্রধান সম্পাদক হারুন অর রশিদকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমি ৭ মার্চের ভাষণের স্থানে ছিলাম না। আমরা সাইট থেকে ছবি নিয়েছি। এতো বড় কাজে যদি দুয়েকটা ভুল বের হয় সেটাকে কি বিকৃতি বলা যাবে।? কিছু মানুষ বিকৃতি করা হয়েছে বলে পোস্ট দিচ্ছে আমরা জেনেছি। আমরা যাচাই বাছাই করে দেখব তাদের দাবি সঠিক কিনা। পরের সংস্করণে সেটি সংশোধন করে দিব। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৫০ বছরে কেউ এই কাজ করেনি। গত ৬ বছর ধরে কাজ করেছি আমরা। ২১লক্ষ শব্দ পড়তে হয়েছে আমাকে। শব্দ পড়বো নাকি ছবি দেখবো। এধরনের একটা দুইটা ভুল কেউতো ইচ্ছে করে করেনি, ফলে এটাকে বিকৃতি বলা যাবে না। এ সমাজে কিছু মানুষ খুব নিষ্ঠুর। কোন দেশপ্রেমিক এতো নিষ্ঠুর হতে পারে না।
তবে শাহরিয়ার কবীর মনে করেন, ‘বইয়ের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে এর দায় নিতে হবে। আমি জানি না, অমুকে জানে বলে দায় এড়ানোর কোনও সুযোগ নেই।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন