জীবন্ত কিংবদন্তি গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি শুধু গীতিকবিই নন, একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, রচয়িতা ও সুরকার। উপহার দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান। বারিধারার পার্ক রোডের বাসায় কথা হয় বরেণ্য এ ব্যক্তির সঙ্গে। সেই আড্ডায় উঠে এসেছে তার বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিময় কথা। লিখেছেন- তারেক আনন্দ
একতারা তুই দেশের কথা
বলরে এবার বল
দেশ স্বাধীনের পর শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতিতে একটা বিবর্ণ অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। এমন অবস্থায় একদিন বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ টেলিফোন করে বললেন গাজী ভাই তোমার লেখা অনেক দেশের গান সর্বত্র সমাদৃত হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে তোমার লেখা ‘জয় বাংলা’ গানটি আন্দোলিত করেছে। অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে আমাকে একটি দেশের গান গাইতে হবে। আমি চাই তুমি এই গানটি লিখে দাও এবং পারভেজ ভাই (আনোয়ার পারভেজ) সুর করবেন।
শাহনাজ রহমতুল্লাহ আমার অতি আদরের ছোট বোন ছিল। তার আবদার ফেলতে না পেরে সম্মতি জানিয়ে দিই। রাতের বেলায় একা একা পায়চারি করছি, আর ভাবছি- কী ধরনের গান লেখা যেতে পারে। আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে একটা বিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছিল, আধুনিক হতে গিয়ে দিন দিন আমরা শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিলাম। সারা রাত নির্ঘুম কাটানোর পর সকালে মাথায় এলো- একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল...।
কিছুক্ষণের মধ্যে গানটি লেখা শেষ করে শাহনাজকে খবর দিলাম। ওই দিন বিকালে সুরকার আনোয়ার পারভেজ এবং শাহনাজ এলেন আমার বাসায়। তারা দুজনই গানটি দেখে উৎফুল্ল হলেন। এবং আনোয়ার পারভেজ হারমোনিয়াম নিয়ে সুর করতে বসে পড়লেন। গানটি সুর হওয়ার পর সেখানে এলেন আরেক প্রখ্যাত সুরকার আলাউদ্দিন আলী। তিনি গানটি শুনেই বললেন, গাজী ভাই চমৎকার একটি সৃষ্টি হচ্ছে। আশা করি এ গানটি দেশের মানুষের অন্তরে গেঁথে থাকবে। গানটির সুর হলো, গাওয়া হলো, বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠানটি প্রচার হওয়ার পর ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হলো। পরে এ গানটিও বিবিসি জরিপে সর্বকালের সেরা ২০ গানে স্থান পায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন