টিকা নেয়ার পরে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করছি না। নিত্যদিনের মতোই স্বাভাবিক কাজকর্ম করছি। ভ্যাকসিন গ্রহণের পর মানবজমিনের কাছে এমনই অনুভূতি প্রকাশ করেন অনেকে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন বলেন, ভালো আছি। গত বুধবারের টিকার এখন পর্যন্ত কোনো উপসর্গ নেই। এ ছাড়া গতকাল সকাল থেকে একশ’ জনের আরো যে টিকাদান কর্মসূচি ছিল সেটা নিয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করতে হয়েছে। বাকি যারা টিকা দিয়েছে তাদের
দেখভালের কাজও আমি করেছিলাম। কাজ শেষে এখন নিজেই গাড়ি চালিয়ে বাসায় যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমার দিক থেকে একদমই টিকা পরবর্তী কোনো উপসর্গ নেই। টিকা প্রসঙ্গে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে আমার মেসেজ হলো- বাংলাদেশে এই টিকাটি একদমই নতুন না। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকাটি নতুন। কিন্তু এই ধরনের টিকা দেশে ছোট শিশু বা নবজাতকরা জন্মের পরপরই নিতে শুরু করে।
ফলে আমাদের দেশে খুবই সফলভাবে এটা নেয়া যায়। দেশের সাধারণ মানুষ জানেন যে, একটি ইনজেকশন দেয়ার পর সাধারণত কি কি প্রতিক্রিয়া হয়। ইনজেকশনের ব্যথা থাকে। কারো কারো জ্বর অনুভূত হয়। গায়ে ব্যথা থাকে। এ ধরনের ব্যাপারটির সঙ্গে সকলেই পরিচিত। এই টিকাটিও এর বাইরের কিছু নয়। আর কোভিডের সঙ্গে আমাদের যে যুদ্ধ সে বিষয়ে প্রথম থেকে বেশকিছু নির্দেশনা এসেছে। কখনো মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, চিকিৎসা এবং এখন টিকার বিষয়টি এসেছে। যেহেতু এটা একটি যুদ্ধ তাই নির্দেশনাগুলো যেভাবে আসছে সেগুলো আমাদের সকলেরই মেনে চলা উচিত। অন্যথায় আমাদের আসলেই এই যুদ্ধে একা জয়ী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা টিকা নিয়েছি। এখন সবাইকেই টিকা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, আমি সম্পূর্ণভাবে সুস্থ আছি। ভালো আছি। অফিসের কাজ করছি। এমনিতে টিকা গ্রহণের পর কোনো শারীরিক সমস্যা অনুভূত হয়নি। যার যখন সুবিধা আসবে তারা যেন তখন টিকা নিয়ে নেয়। সবাই তো একসঙ্গে টিকা পাবে না। তিনি বলেন, টিকা নিয়ে ভীতি এটা একটি অপপ্রচার। এই টিকা সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ। সকলেই যাদের ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে গর্ভবতী নারী ছাড়া এবং যদি কারো খুবই অসুস্থতা না থাকে যেমন-অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ইত্যাদিসহ খারাপ অবস্থায় না থাকলে এই টিকা সকলেই নিতে পারবে। এটা নিরাপদ। এটার তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এবং এটা কার্যকর।
গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ভালো আছি। প্রতিদিন যেমন থাকি তাই আছি। টিকা নেয়ার স্থানটিতেও কোনো ব্যথা নেই। তিনি বলেন, করোনার টিকার প্রথম ডোজের কার্যকারিতা শুরু হয় ১২ দিন পরে। আর সবচেয়ে বেশি কার্যকারিতা প্রকাশ পায় তার দুই থেকে তিন মাস পরে। যখন দ্বিতীয় ডোজটি নেয়া হয়। কাজেই কোভিড স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে এখন যারা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। আর ভ্যাকসিন সম্পর্কে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। সেটা একদমই অবাঞ্ছিত। এই ভ্যাকসিনটি ইতিমধ্যে ভারতে অনেক দেয়া হয়েছে। বৃটেনে দেয়া হচ্ছে। আমার দুই প্রফেসর বন্ধু গতকাল জানিয়েছে তারা গত বুধবার এই ভ্যাকসিনটিই নিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন নয়। এটা একটি প্যাটার্ন। তবে যেটা এখনো পরীক্ষা নিরীক্ষাতে পরিষ্কার দেখা যায়নি সেটা হলো করোনার এই ভ্যাকসিনের প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ নিলে কতটুকু সুরক্ষা হবে এখনো নিশ্চিত না। যদিও ট্রায়াল হয়েছে। আরেকটু বেশি অনিশ্চয়তা হলো ৬৫ বছরের উপরের বয়সীরা এটা থেকে কতদূর সুরক্ষা পায় সেটা নিয়ে এ পর্যন্ত কোনো পরিষ্কার ধারণা নেই।
ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-মাসুম মোল্লা বলেন, টিকা নেয়ার পরে এখন পর্যন্ত ভালো আছি। বড় কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি। অফিস করছি। কাজ করছি। কোনো সমস্যা এখন পর্যন্ত হয়নি। যেখানে টিকা দিয়েছে ওই স্থানটিতে হালকা ব্যথা অনুভূত হয়েছে মাঝে মাঝে। টিকা নেয়ার পরবর্তীতে যেটা ছিল ‘গুড ফিলিং’। মিডিয়াকর্মী হিসেবে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার আছে এই ভালো লাগাটা ছিল। একটি ভালো কাজের মাধ্যমে মানুষকে উৎসাহী করলাম। টিকা নেয়া প্রসঙ্গে এই সাংবাদিক বলেন, কোনো ভয় নেই। কোনো গুজবে কান দিবেন না। নির্ভয়ে এবং নির্দ্বিধায় টিকা নিতে পারেন।
এনটিভি অনলাইনের স্টাফ রিপোর্টার মাসুদ রায়হান পলাশ বলেন, বেশ ভালোই আছি। এখনো পর্যন্ত তাই মনে হচ্ছে। আমি এখনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখিনি। তবে একটি প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এটাকে আমি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বলতে চাই না। টিকা নেয়ার পর রাতে একটু ঠাণ্ডা অনুভব করেছিলাম। শীত লাগছিল। অন্যদিনের তুলনায় বেশি শীত লাগছিল। পরবর্তীতে শরীরের তাপমাত্রা মাপতে গিয়ে দেখি ৯৮ ডিগ্রি। যেটা খুবই স্বাভাবিক। জ্বর আসেনি। কিন্তু শীত অনুভব করছিলাম অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি। এখন অফিসে কাজ করছি। টিকা নেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিকা নিয়ে যখন নানামুখী সমালোচনা শুরু হলো তখনই আসলে সিদ্ধান্ত নেয়া আমি টিকাটি নিতে চাই। এবং এটার অন্তত কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যদি থাকে সেটা আমার শরীরের ওপর দিয়ে যাক। তারপরেও আমি নিজে বুঝতে, অনুভব করতে এবং জানতে চাই। সেই তাগিদ থেকেই আসলে টিকা নেয়া। তিনি বলেন, টিকা নেয়ার পর থেকে যেমন ছিলাম এখনো তেমনই আছি। তবে প্রথম দিন টিকাটা নেয়ার পর একটু ভালোলাগা বোধ ছিল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন