‘বাংলাদেশের মানুষ ভ্যাকসিন নিতে চায় না, এটা অনুমান-নির্ভর বক্তব্য। কোনো সার্ভে হয়নি’
ভ্যাকসিন আসার আগে মানুষের আগ্রহ ছিল। আসার পর সেই আগ্রহে যেন ভাটা পড়েছে। ভ্যাকসিন নিয়ে এক ধরনের অনাস্থা দৃশ্যমান। চলছে বিতর্ক। শুধু বাংলাদেশেই নয়, কমবেশি আস্থাহীনতা ও বিতর্ক চলছে প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশে। ভ্যাকসিন নিয়ে অনাস্থা কেন? মূল কারণ কী?
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ভারতে উৎপাদন করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। যার ভারতীয় নাম ‘কোভিশিল্ড’। দেশীয় প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে সেই ভ্যাকসিনই কিনেছে বাংলাদেশ। ভারত থেকে যে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশ উপহার হিসেবে পেয়েছে, সেটাও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। এর বাইরে রয়টার্সের একটি সংবাদ নিয়ে দ্বিধা দেখা দিয়েছে যে, ভারত তাদের প্রতিষ্ঠান ‘ভারত বায়োটেক’ উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বাংলাদেশে করতে চায়। বায়োটেকের সেই ভ্যাকসিনের নাম ‘কোভ্যাক্সিন’। কিন্তু, সেটি বাংলাদেশে ট্রায়াল নিয়ে এখনো কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি। ভারত থেকে বাংলাদেশ উপহার হিসেবেও সেই ভ্যাকসিন পায়নি।
দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ, বায়ো মেডিকেল সাইন্স গবেষক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. খোন্দকার মেহেদী আকরামের সঙ্গে। ভারতের অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের দিল্লি সংবাদদাতা পল্লব ভট্টাচার্য্য।
ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মনে অনাস্থা আছে কি না, সেটা এখনই বলা কঠিন বলে মনে করেন অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এটা গ্রুপ থেকে গ্রুপে ভ্যারি করবে। যেমন: কিছু গ্রুপ আছে, যারা আমাকে জানিয়েছেন তারা ভ্যাকসিনটা পেতে চান। আমি যেন সে বিষয়ে চেষ্টা করি। তারা হলেন বয়স্ক ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত গ্রুপ। কারণ, তাদের মধ্যে সংক্রমণটা মারাত্মক হচ্ছে এবং মৃত্যুর হারও বেশি। তাদের মধ্যে একটা ভীতি রয়েছে। কাজেই তারা ভ্যাকসিন পেতে চায়।’
‘আবার চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। আমার ধারণা তারাও ভ্যাকসিন পেতে চাইবেন। আবার একটা শ্রেণিও আছে যারা গ্রামে থাকেন। তাদের সেখানে সংক্রমণও যেমন কম, তেমন সেখানে স্বাস্থ্যবিধি বা দূরত্ব মানার প্রবণতা নেই। ফলে করোনার টিকা নেওয়াটা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। আবার করোনার টিকা নিয়ে গুজবও মাঝেমধ্যে ছড়ায়। যেমন: এটার বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, ভ্যাকসিনে শুকরের কিছু জিনিস আছে, এটা নিলে মানুষের জেন্ডার পরিবর্তন হয়ে যায়। এসব অসত্য প্রচারণা নানা কারণে সমাজে থাকে। এখন সব মিলিয়েই দেখা যে, কী পরিমাণ মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী হবে। সেদিক থেকে যদি আমি দেখি, যারা নিম্নবিত্ত মানুষ তাদের টিকা নিতে অনেক কষ্ট করতে হয়, অর্থাৎ যদি তারা একদিনের জীবিকার কাজে যেতে না পারে, টিকাকেন্দ্র অনেক দূরে থাকে, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া কঠিন হয়, তাহলে তারা আগ্রহী হবে না। ঠিক একইভাবে শহরের বস্তি বা নিরক্ষর বা নিম্ন আয়ের মানুষেরাও আগ্রহী হবে না। আবার ধরুন, ঢাকায় যদি সামান্য সংখ্যক কেন্দ্র হয় এবং তাহলে অনেক মানুষ ভ্যাকসিন নিতে হলে গিয়ে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকতে হতে পারে কিংবা অনেক দূরে গিয়ে নিতে হয়, সেক্ষেত্রেও অনেকেই উৎসাহী হবে না’, বলেন তিনি।
এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ টিকা নিতে অনাগ্রহী, সেটা আমি জেনারালাইজ করে এভাবে বলতে চাই না। কিন্তু, আমি যদি এভাবে বলতে চাই যে, যেহেতু এই টিকাটা একদিকে যেমন মানুষের জীবন রক্ষার্থে, পাশাপাশি কিন্তু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্যেও। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য টিকাকে কেন্দ্র করে আমাদের কয়েকটা চাহিদা আছে। একটা হলো টার্গেটেড পপুলেশনকে এর আওতায় আনা। আরেকটি হলো নির্দিষ্ট শতাংশে পৌঁছাতে হবে। যেমন: একটি নির্দিষ্ট কমিউনিটিতে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা নিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্যে মানুষের অনাগ্রহী হয়ে ওঠা অবশ্যই একটা ব্যারিয়ার হিসেবে থাকবে। সেখানে লক্ষ্য রাখতে হবে।’
ভ্যাকসিন নিতে মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে প্রচার-প্রচারণা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সংশ্লিষ্টরা হাইফাই ঘরে বসায় অনেক সময় যেটা হয় যে, তারা সাধারণ মানুষের কথা ভুলে যান। প্রচার-প্রচারণা মানে তারা ভাবেন যে, টিভি-পত্রিকায় কিছু বিজ্ঞাপন দিলেই হবে। কিন্তু, তা ঠিক নয়। এটা কেবল বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিষয় না। এখানে কমিউনিটি এনগেজম্যান্ট বাড়াতে হবে। যেমন: আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা যদি একটি পরিবারে যায়, সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে কমিউনিকেট করবে। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যকর্মীদের কিছু প্রশ্ন করবে এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা যেগুলোর উত্তর দিবেন এবং ধীরে ধীরে তাদের আগ্রহী করে তুলবেন। এতে ধীরে ধীরে একটা জনগোষ্ঠী টিকা নিতে আগ্রহী হবে।’
উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, ‘যেমন আমাদের ইপিআই কর্মসূচির কথা ভাবেন। মানুষ টিকা সম্পর্কে কিছু জানত না। এরপর মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করায় মায়েরা এতটাই আগ্রহী হয়েছে যে, বাচ্চা গর্ভে থাকতেই মায়েরা টিকা নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করে দেয়। পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও কিন্তু একই পন্থায় হয়েছে। করোনার ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এভাবেই এগোনো দরকার। অন্যথায় ভ্যাকসিন কর্মসূচি যথাযথভাবে কার্যকর হবে না।’
সবশেষে তিনি বলেন, ‘মোদ্দা কথা, করোনার টিকার প্রচার-প্রচারণা দরকার। জাতীয় পর্যায়ে সাংবাদিক, নাগরিক সমাজ, তারকা, সবাইকে নিয়ে বৈঠক হওয়া উচিত। তখন তারা সবাই অপিনিয়ন বিল্ডার-লিডার হিসেবে কাজ করবে। তাদেরকে এনগেজ করতে হবে। একই কাজ জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ে করতে হবে। সিটি করপোরেশনে মেয়র-কাউন্সিলরদের, রাজনৈতিক দলগুলোকে ইনভলভ করা হলে কাঙ্ক্ষিত জনগণকে টিকাদানের আওতায় আনা যাবে। কিন্তু, দুঃখজনক হলো, এটি হচ্ছে না। যেমন দেখেন, জেলা পর্যায়ে ডিসি ও উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওকে প্রধান করা হয়েছে। কিন্তু, এটা তো স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কাজ। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের এই কাজে গুরুত্ব দিতে হবে।’
‘আরেকটা বিষয় যে, টিকা সম্পর্কে একেবারে সুনির্দিষ্ট বলতে পারা, কবে থেকে দেওয়া হবে, কারা পাবে, এগুলো যদি এখন প্রচারই না হয়, তাহলে যখন টিকা শুরু হবে, তখন দেখা যাবে কোথাও বেশি লোক আসছে, আবার কোথাও নেই। তখন আবার ভোটের মতো অবস্থাও হতে পারে। ভোটকেন্দ্রে যেমন লোক না গেলেও ভোট হচ্ছে, তেমন হয়তো দেখা যাবে টিকাকেন্দ্রে লোক না গেলেও টিকাদান হচ্ছে। সুতরাং সবমিলিয়ে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামা উচিত, স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্ব নেওয়া উচিত, প্রচার-প্রচারণায় স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়োজিত করা উচিত এবং জনগণের কাছে সঠিক সময়ে সঠিক বার্তা পৌঁছে দিতে হবে’, যোগ করেন অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ।
ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়া বা অনাস্থা তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে মনে করছেন ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম। তিনি বলেন, ‘সারা পৃথিবীতেই ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে বা পক্ষে মানুষের মাঝে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আসলে অসুখের গুরুত্বটা মানুষ কীভাবে নিচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করছে ভ্যাকসিন নিতে তারা কত আগ্রহী। বাংলাদেশের মানুষ করোনার সংক্রমণ বিষয়ে যত গুরুত্ব দেবে, ভ্যাকসিন নেওয়ার আগ্রহও ততটা বাড়বে।’
ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশে সার্ভে হলেও বাংলাদেশে সেরকম কিছু হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সার্ভের মাধ্যমে জানা যায় যে, কতজন ভ্যাকসিন নিতে চায়, কতজন নিতে চায় না আর কতজন দ্বিধায় রয়েছে। এর মাধ্যমে জনমনের অবস্থাটা বোঝা যায়। বাংলাদেশের সামাজিক বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের এই কাজটা করার কথা ছিল। বাংলাদেশে যে বলা হচ্ছে, ভ্যাকসিন নিতে মানুষের মনে দ্বিধা বা অনাস্থা আছে, সেটা তো তথ্য-উপাত্ত নয়, ধারণার ওপর ভিত্তি করে বলা হচ্ছে। এই সার্ভেটা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগেই এটা করা দরকার ছিল। এখন উচিত দুই সপ্তাহের মধ্যে এই সার্ভেটা করা।’
সার্ভের আলোকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অবস্থা সম্পর্কে এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে নভেম্বরে ভ্যাকসিন নিতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল ৬১ শতাংশ। জানুয়ারিতে সেটা বেড়ে হয়েছে ৮১ শতাংশ। আবার লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যারা আছে, তাদের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ভ্যাকসিন নিতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরে ৩৭ শতাংশ আগ্রহী থাকলেও জানুয়ারিতে বেড়ে হয়েছে ৫০ শতাংশ। একইভাবে এক মাসের ব্যবধানে ফ্রান্সে ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৬ শতাংশ হয়েছে। বর্তমানে সৌদি আরবে ৫৭ শতাংশ ও আরব আমিরাতে ৭০ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী। ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়াতেও এই হার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যেই।’
‘বাংলাদেশে এখানে ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার, রোগের প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া, এমন মানসিকতা বিরাজমান। সেখানে মানুষ ভ্যাকসিন নেবে না, এটাই তো স্বাভাবিক। তাই সার্ভেটা অবশ্যই করতে হবে। আগে কত শতাংশ নিতে চায়, কত শতাংশ নিতে চায় না বা দ্বিধায় আছে, সেটা জানতে হবে। এখন যদি ধরি যে, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন নিতে চাচ্ছে আর ৬০ শতাংশ চাচ্ছে না। এই ৬০ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ নেবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় আছে। কেন তারা দ্বিধায় আছে, সেটা জেনে তাদেরকে বোঝানো গেলে তারাও কিন্তু ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী হবে। তখন তো আগ্রহীদের সংখ্যা ৭০ শতাংশে উন্নীত হবে। আমরা দেখেছি, বিশ্বের অনেক দেশে আগ্রহীর সংখ্যা নভেম্বরের চেয়ে জানুয়ারিতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ তাদেরকে বোঝানো হয়েছে, তাদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা হয়েছে’, বলেন তিনি।
ড. আকরাম বলেন, ‘আমার মনে হয় বাংলাদেশের মানুষ ভ্যাকসিন নেবে। কিন্তু, তারা দ্বিধার মধ্যে আছে। তারা ভাবছে, ভ্যাকসিন কে আগে নেবে, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না, ভারতের ভ্যাকসিন ভালো হবে কি না। আমাদের এখানে দুটো সংবাদ পাশাপাশি এসেছে যে, ভারত বায়োটেক তাদের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বাংলাদেশে করতে চায়; আর সেরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। এই দুইটা নিয়ে মানুষের মনে জট লেগে গেছে, যেটা স্বাভাবিক। মানুষ ভাবছে, এটা ভারতের ভ্যাকসিন, এটা নেওয়া নিরাপদ হবে কি না। তাই অবশ্যই এটা পরিষ্কার করে জনগণকে বোঝাতে হবে যে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে ভ্যাকসিন যুক্তরাজ্যে ব্যবহার হচ্ছে, বাংলাদেশেও ভারত থেকে সেই একই ভ্যাকসিন এসেছে, যেটা সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদন করছে।’
সবশেষে করণীয় নিয়ে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতার তৈরির কোনো বিকল্প নেই। আগে সার্ভে করে বাংলাদেশে মানুষের অবস্থাটা বুঝতে হবে। এরপর সেই অনুযায়ী এগোতে হবে। তাদের অনীহার কারণ বের করে সেই অনুযায়ী তাদেরকে বোঝাতে হবে। পাশাপাশি এমপি, মন্ত্রীসহ জনপ্রতিনিধিদেরও ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এতে ভ্যাকসিন সম্পর্কে মানুষের মনে আস্থা তৈরি হবে। জনসচেতনতা তৈরিতে সরকারের পাশাপাশি সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক, ধর্মীয় শিক্ষক, তারকা, সংস্কৃতিকর্মীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তারা ভ্যাকসিনের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালালে, কথা বললে জনগণও ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।’
গত মাসে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ ভারতীয় ভ্যাকসিন নিতে অনীহা প্রকাশ করেছে বলে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে। ভ্যাকসিন নিতে ভারতীয়দের অনাস্থার বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারের দিল্লি সংবাদদাতা পল্লব ভট্টাচার্য্য জানান, শুরুর দিকে করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে ভারতের মানুষের মনে দ্বিধা বা ভীতি থাকলেও ধীরে ধীরে তা কেটে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘যেকোনো ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই শুরুর দিকে একটু ভীতি বা দ্বিধা থাকে। যা ধীরে ধীরে কেটে যায়। এর আগেও ভারতে কলেরা, জন্ডিস, নিউমোনিয়া বা ফ্লুসহ নানা ধরনের রোগের ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এরকম দ্বিধা ছিল। কিন্তু, ধীরে ধীরে সেসব ভ্যাকসিন নিয়ে জনমনের দ্বিধা কেটে গেছে। তেমনি করোনার ভ্যাকসিনও যেহেতু নতুন, আবার এ সম্পর্কে পৃথিবীতে নানা রকমের খবর ছড়াচ্ছে, ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, তাতে মানুষের মনে ভীতি দেখা যাচ্ছে।’
তবে, ভারতীয়দের সেই ভীতি কেটে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ভারতে অনেক রাজ্যের মানুষ বিপুল আগ্রহের সঙ্গে ভ্যাকসিন নিচ্ছে। আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত ভারতে মোট তিন লাখ ডোজেরও বেশি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আবার কয়েকটি রাজ্যের চিত্র বিপরীত। তবে, ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের কারণে জনমনের ভীতি ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বলা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সফলভাবে তাদের ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে, করছে।
‘একইসঙ্গে বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতনরাও ভ্যাকসিন নিয়েছেন, নিচ্ছেন। এতেও জনমনে আস্থা তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন যে, প্রধানমন্ত্রী কেন নিচ্ছেন না? কিন্তু ১৬ জানুয়ারি ভ্যাকসিন কর্মসূচি উদ্বোধনের সময় তিনি বলেছিলেন যে, আমাদের অগ্রাধিকার তালিকায় আছেন স্বাস্থ্যকর্মীসহ সম্মুখসারির যোদ্ধারা, ৫০ বছর বয়সের নিচে যাদের শারীরিক সমস্যা আছে এবং যাদের বয়স ষাটোর্ধ্ব, তারা। তাদেরই আগে ভ্যাকসিন দিতে হবে। রাজনৈতিক নেতা বলেই লাইন ভেঙে আগে গিয়ে ভ্যাকসিন নেবে, সেটা যেন না হয়। যখন সময় আসবে, তখন তারাও পাবে। রাজনীতিবিদরা এখন নিলে তখন অনেকে হয়তো বলত, তারা নিজেরা আগে নিরাপদ হয়ে গেল, আর বাকি লোক পড়ে রয়েছে’, বলেন দিল্লি সংবাদদাতা।
সবশেষে তিনি বলেন, ‘ভারতের মানুষ এখন টিকা নিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এক্ষেত্রে সরকারের সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন সফল হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। ধীরে ধীরে জনসাধারণের ভীতি আরও কেটে যাবে এবং আরও মানুষ ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন