অনুমোদনহীন, লেভেলবিহীন ও খোলাবাজার থেকে নেয়া অনিরাপদ কাঁচামালের সঙ্গে অ্যাসিড মিশিয়ে তৈরি করা হতো ত্বক ফর্সাকারী (স্কিন) ক্রিম। অনিরাপদ পরিবেশে অনুমোদহীন স্কিন ক্রিম তৈরি করার অভিযোগে রাজধানীর পুরান ঢাকায় বিপাশা কসমেটিকস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরিবেশ অধিদফতর ও বিএসটিআই থেকে লাইসেন্স না নিয়েও অবৈধভাবে লোগো ব্যবহার করে নকল পণ্য বাজারজাত করে আসছিলো প্রতিষ্ঠানটি। এসব অভিযোগে কারখানার কারিগরসহ প্রতিষ্ঠানের ২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এছাড়াও নকল কসমেটিকস জব্দ ও কারখানাটি সিলগালা করে দিয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সোমবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পুরান ঢাকার লালবাগের হায়দার বক্স লেনের একটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে চলা এই কারখানায় অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। র্যাব-৩, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।
অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘বিপাশা কসমেটিকস এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদনবিহীন ও অনিরাপদ কেমিক্যাল ব্যবহার করে নানা ধরনের ক্রিম তৈরি করে আসছিলো। তারা লোকাল বাজার থেকে কাঁচামাল ব্যবহার করে এসব পণ্য উৎপাদন করতো। তারা যে কাঁচামাল ব্যবহার করছিল তার মধ্যে একটির গায়ে লেখা বি-৩, কিন্তু এটি কোন জাতীয় কাঁচামাল তা কারখানার কারিগর ও বিএসটিআইয়ের প্রতিনিধি কেউই চিহ্নিত করতে পারেননি। একইভাবে বি-অক্স নামের আরও একটি কাঁচামালের বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে পারেননি তারা। এগুলো প্রতিটিই লেভেলবিহীন।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র দেখাতে পারেনি। এমনকি তাদের কয়েক ঘণ্টা সময় দেয়ার পরেও প্রতিষ্ঠানের মালিক আসেননি। কারখানায় শিশু শ্রমিকদের দিয়ে পণ্য তৈরির কাজ করতেও দেখা গেছে। এছাড়া কোনও ধরনের সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার না করে সম্পূর্ণ অনিরাপদ উপায়ে পণ্য তৈরি করা হতো।’
র্যাবের এই ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘তারা গরম পানির সঙ্গে ভেজলিন, স্টারিক এসিড, বোরাস ও পালম্যাকসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে এই ক্রিম তৈরি করতো। কারখানায় তাদের কোনও কেমিস্ট্রের দেখা মেলেনি। কারখানার ভেতরে ছোট একটি ল্যাবরেটরি বানিয়ে সেখানে কিছু জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে কিছুই জানতেন না তারা। ক্রেতারা এসব পণ্য ব্যবহার করলে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুরান ঢাকায় এমন আরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরনের নকল পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করছে। তাদের নকল পণ্য বাজারজাত করার নেটওয়ার্ক খুবই শক্তিশালী এবং উৎপাদিত পণ্যগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাশপাশি রাজধানীসহ সারা দেশের মার্কেটগুলোতেও বিক্রি হয়। যার ভুক্তভোগী আমাদের সমাজের সবাই।’
অনিরাপদ উপায়ে এমন নকল পণ্য তৈরির অভিযোগে মোহাম্মদ নাসের (৪৯) নামে মালিকপক্ষের একজন প্রতিনিধি ও কারিগর আনোয়ার শেখকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি গ্রেফতারকৃতদের ও কারখানার মালিক মো. নাজিম উদ্দিনকে পলাতক দেখিয়ে লালবাগ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা রুজু হয়েছে বলেও জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন