প্রথম কাহিনি৷ মেয়ের প্রশ্ন শুনে প্রথমে অবাক হয়ে তারপর হাসিতে ভেঙে পড়েছিলেন আমার এক বন্ধু৷ মেয়ে বড় হয়েছে৷ বিয়েও ঠিক হয়েছে৷ পাত্র নিজের পছন্দ করা৷ বছর দশেক ধরে প্রেম চলছে৷ তারপর একদিন হঠাৎ মেয়েটি তার বাবাকে বলে, হবু বর ফ্ল্যাট চেস্টেড, এটা তার আদৌ পছন্দ নয়৷ বিবাহিত জীবন সুখের হবে তো? প্রথমে হাসলেও তারপর বন্ধু তাঁর মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ধরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে৷ জানিয়েছে, সকলেই যে বলিউড নায়কের মতো সিক্স প্যাকের শরীর নিয়ে ঘুরবে, এটা মনে করা বাতুলতা৷ সিক্স প্যাক নেই বলে কেউ বিয়েতে অসুখি হয়েছে বলে খুব একটা শোনা যায়নি৷ তাহলে তো পালোয়ানরাই সেক্সের ক্ষেত্রে সব চেয়ে পটু হতো৷ সেক্স প্রসঙ্গে খোলামেলা কথা হয়েছিল বাবা-মায়ের সঙ্গে মেয়ের৷ মেয়ে বুঝেছিল৷ বিয়ের পর মেয়ে সুখে আছে৷
দ্বিতীয় কাহিনি৷ আমার আরেক বন্ধুর স্ত্রীকে তাঁর ছেলে প্রশ্ন করেছিল, লিভ ইন রিলেশনে অসুবিধা কোথায়? সে তো প্রথমে লিভ ইনে থাকতে চায়৷ দেখে নিতে চায়, প্রেমিকাকে বিয়ে করে একসঙ্গে থাকতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো! ছেলের বাবা ও মা দুজনেরই লিভ ইনে প্রবল আপত্তি ছিল৷ কিন্তু খোলা মনে আলোচনা করার পর ছেলের যুক্তি মেনে নিতে হয়েছিল তাঁদের৷
এই দুইটি ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান সুখের হয়েছিল, কারণ, বাবা-মা তাঁদের গোঁ ধরে বসে থাকেননি৷ ছেলে-মেয়ের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছেন৷ সেক্স বা লিভ ইন নিয়ে নিজেদের ধারণা জোর করে চাপিয়ে দিতে চাননি৷ নিজেদের মধ্যবিত্ত মানসিকতা থেকে বাইরে আসতে পেরেছেন৷ নিজেদের ধ্যান-ধারণার বদল ঘটাতে পেরেছেন৷
মধ্যবিত্ত জীবনে সেক্স বললেই সকলে ছ্যাঁকা খান৷ জীবনযাপনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে সবসময় কার্পেটের তলায় গোপনে রেখে দিতে চান৷ বাচ্চাদের সঙ্গে এনিয়ে আলোচনার তো প্রশ্নই ওঠে না৷ শিক্ষক, বাবা, মা, আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী কেউই বাচ্চাদের সঙ্গে আলোচনা দূরস্থান, সেই প্রসঙ্গের ধারেকাছে থাকতে চান না৷ হয়ত বাবা-মা থাকেন কলকাতা বা শিলিগুড়িতে, ছেলে বা মেয়ে দিল্লি বা মুম্বই৷ সেখানে তাঁরা হয়তো লিভ ইনে আছে কারো সঙ্গে৷ কিন্তু শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে তারা সেই কথা বাবা-মায়ের কাছে গোপন করে যায়৷ আর বাবা-মা জানলেও তা সন্তর্পনে গোপন করতে চান৷ যেন বাচ্চারা কোনো পাপ করছে৷
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন