রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানোয় অভিযুক্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অধীনস্থ সংস্থার সঙ্গে ব্যবসা করছে আদানি শিল্পগোষ্ঠীসহ ভারতের একাধিক কোম্পানি।
বিবিসি জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এসব সংস্থা জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের রিপোর্টে অভিযুক্ত হওয়ার পরও তাদের সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানি ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে।
এই কোম্পানিগুলো নৈতিকতার সঙ্গে আপস করেই মিয়ানমারে ব্যবসা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক তোয়ে তোয়ে থেইন।
এদের মধ্যে ভারতের আদানি শিল্পগোষ্ঠী বা ইনফোসিসের মতো টেক সংস্থাও রয়েছে বলেও তিনি জানান।
২০১৭ সালে মিয়ানমারে রাখাইন প্রদেশে মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছিল, তার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলছে।
এরপরেও দেশটির সেনা সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক বয়কটের মুখে পড়তে হচ্ছে না বলেই তোয়ে থেইনের পর্যবেক্ষণ।
বস্তুত চীন বা ভারতের মতো দেশগুলোর বিপুল পরিমাণে বাণিজ্যিক স্বার্থ আছে বলেই রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রশ্নে তারা সেভাবে মিয়ানমারের সমালোচনা করে না। বিষয়টি গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় আসছে।
অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক গবেষক ও অধ্যাপক তোয়ে থেইনের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টেও সেই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।
পার্থ থেকে টেলিফোনে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘জাতিসংঘের প্রতিবেদনে এই প্রথমবারের মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানির সমালোচনা করা হয়েছে- যারা মিয়ানমারের সেনার সঙ্গে অংশীদারত্বে সে দেশে ব্যবসা চালাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার আর্মির অধীন দুটি সংস্থা, মিয়ানমার ইকোনমিক করপোরেশন (এমইসি) ও মিয়ানমার ইকোনমিক হোল্ডিং লিমিটেডের (এমইএইচএল) ব্যবসার মুনাফা যে সরাসরি সেনা অভিযানে ব্যবহার করা হয়েছে, জাতিসংঘ তারও প্রমাণ পেয়েছে। সে কারণেই জাতিসংঘ এই সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে এই কোম্পানিগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে।’
জাতিসংঘের যে মিশন এই রিপোর্ট দিয়েছে, তার সদস্য ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক মানবাধিকার কমিশনার ক্রিস সিডোটি, ইন্দোনেশিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মার্জুকি দারুসমান ও শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার আইনজীবী রাধিকা কুমারাস্বামী।
অধ্যাপক থেইন মনে করছেন, এইচএসবিসি বা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের মতো ব্যাঙ্কিং জায়ান্টরা কিংবা ভারতের আদানি পোর্টস এই মিশনের মতামতকে মিয়ানমারে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করার নীতি নিয়েছে।
তার ভাষ্য, ‘মিয়ানমারে যাদের সঙ্গে ব্যবসা করবেন, তাদের ব্যাপারে ভালো করে খোঁজ নেওয়া বা ডিউডিলিজেন্স খুব জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘আমি এটা মানি মিয়ানমারের সেনা কোম্পানিগুলোর বন্দর, রিয়েল এস্টেট, মাইনিং, অবকাঠামো ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে যেমন মনোপলি বা একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ আছে কিংবা যে বিপুল জমির মালিকানা আছে তাতে তাদের বাদ দিয়ে ব্যবসাপাতি করা খুব মুশকিল, কিন্তু একেবারে অসম্ভব নয়।’
অধ্যাপক থেইন বলেন, ‘কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আছে, তাদের সঙ্গে সরাসরি ব্যবসায় জড়িয়ে এই কোম্পানিগুলো নৈতিকতার সঙ্গে বিরাট আপস করছে বলেই মনে করি।’
তোয়ে তোয়ে থেইন অবশ্য এটাও স্পষ্ট করে দিতে চান, তিনি কখনোই মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক লগ্নির বিরোধী নন।
বরং তিনি চান মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আরও বেশি করে আসুক- কিন্তু তারা যেন ‘হাতে রক্তের দাগ লাগা’ সেনাবাহিনীর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কে না জড়ায়।
মিয়ানমারে নৈতিকতার সঙ্গে আপসের প্রশ্নে আদানি গোষ্ঠীর জবাব কী, সে প্রসঙ্গে তাদের কাছে ইমেইল পাঠানো হলেও এখনও জবাব মেলেনি।
তবে গত মাসেই আদানি পোর্টস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইয়াঙ্গুনে তারা যে অ্যাহলোন বন্দর টার্মিনাল বানাচ্ছে সেটা স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাবে, অন্তত এগারোশো স্থানীয় বাসিন্দা সেখানে চাকরি পাবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন