ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) মারুফ হোসেন। মাত্র ৬০ টাকার খাজনা দাখিলা নিতে তহশিলদারকে দিতে হয় দুই হাজার টাকা ঘুষ। যোগদানের পর থেকে ঘুষ, দুর্নীতি, জালিয়াতিসহ নানা ধরনের অনিয়ম স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন ওই অফিসে। তার রয়েছে নিজস্ব দালাল সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তহশীলদার হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। ভূমি অফিসের চৌকাঠ পেরোলেই তহশিলদারের নিজের করা আইন মানতে হয় ভূমিসেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ভূমি অফিসে খাজনা দিতে গেলে ভূমি কর্মকর্তা নানাভাবে হয়রানি করেন। খাজনা দাখিলা দিতে গেলেও যেনো শেষ নেই হয়রানির। প্রথমে নায়েব বলেন, খাজনা দাখিলার মুড়িবই নেই। পরে তার চাহিদা পূরণ করলে মুড়িবই বের করে খাজনা জমা নেন।
এসব বিষয় নিয়ে খলিলনগর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) মারুফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৬ ডিসেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসীসহ সেবাগ্রহীতারা। লিখিত অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, খলিলনগর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) হিসাবে যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
অভিযোগকারীর মধ্যে একজন খলিলনগর ইউনিয়নের হাজরাকাটি মোহাম্মাদীয়া মাদ্রাসার শিক্ষক শফিকুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় দানবীর মৃত মিয়াজান শেখ অত্র মাদ্রাসাটি প্রতিষ্টার জন্য ১৯৭৪ সালে ৩৮ শতক সম্পত্তি দান করেন। মাদ্রাসার দান করা সম্পত্তির মিউটিশন করার জন্য খলিলনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) মারুফ হোসেন তার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নিয়ে জমির মিউটিশন করে দেন।
কিন্তু মিউটিশন করে দেওয়ার পরে ওই সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আরো ১৭ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় মাদ্রাসার প্রতিপক্ষ স্থানীয় মেম্বর আ. রবের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) বাদী হয়ে মিউটিশনের বিরুদ্ধে আপিল কেস করেছন। এখানেই শেষ নয়, এরকম পাহাড়সমান অভিযোগ ওই তহশিলদারের বিরুদ্ধে।
খলিলনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা কবির মোড়ল এ প্রতিনিধিকে জানান, জমির খাজনা দাখিলা কাটতে এসে ছিলেন তিনি। জমির খাজনা ১২ শত টাকা হয়। কিন্তু ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা অতিরিক্ত আরো ৪ শত টাকা উৎকোচ দাবি করেন। এ টাকা না দেওয়া পর্যন্ত খাজনার চেক দাখিলা তাকে দেওয়া হয়নি।
ভূমি অফিসে সেবা নিতে আশা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘোষনগর গ্রামের কয়েক জন ব্যক্তি এ প্রতিনিধিকে বলেন, ভাই, আমাদের নাম প্রকাশ করবেন না। কারণ তহশিলদারের কাছে আমাদের আরো কাজ আছে। নাম প্রকাশ করলে ঘুষ দিলেও আর আমাদের কাজ করে দেবেন না তিনি। তারা বলেন, নায়েব ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই করেন না। ৬০ টাকার খাজনার চেক দাখিলা কাটলেও তাকে দিতে হয় ২ হাজার টাকা। আমরা গত চার দিন ধরে এখানে এসে ফিরে যাচ্ছি। সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সময়মত অফিসে আসেন না। তিনি খুলনা থেকে এসে অফিস করেন। এখন বেলা ১১টা বাজে, তবুও তার দেখা নেই। আর দেখা মিললেও ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না।
খলিলনগর ইউনিয়নের হাজরাকাটি আনসার ভিডিপি ক্লাবের সদস্য সুরমান গাজী এ প্রতিনিধিকে জানান, ক্লাবের পাঁচ শতক জমির মিউটিশন করার জন্য নায়েব মারুফ হোসেনের কাছে গেলে মিউটিশনের খরচ বাবদ ৬ হাজার টাকা দাবি করা হয়। ৬ হাজার টাকা না দিলে মিউটিশন হবে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সরকারি নিয়মে মিউটিশন খচর ১১৫০ টাকা। অথচ নায়েব সাহেব তাদের কাছে অতিরিক্ত ৪ হাজার ৮ শত ৫০ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এত বড় ঘুষখোর নায়েব আমার জীবনে কখনো দেখিনি। এরকম অসংখ্য অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসীসহ বাজারে অবস্থিত দোকানদারদের।
এ বিষয়ে খলিলনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব (তহশিলদার) মো. মারুফ হোসেন দাম্ভিকতার সাথে এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমি কোনো ঘুষ খাই না। মামলার ভয় পাই না।তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, সরকারি নিয়মের বাইরে কোনো কাজ তিনি করেন না। এমনকি কোনো মিউটিশন কেস নেন না।
তালা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানান, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা এম এম মাহমুদুর রহমান অভিযোগের বিষয়ে এ প্রতিনিধিকে বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসক অবগত আছেন। তার সাথে কথা বলেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের সাথে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন