কিউবার বিপ্লবের মহানায়ক ফিদেল কাস্ট্রো বলেছিলেন ‘পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা গবেষনাগারে জীবাণু তৈরী করে। এই জীবাণু প্রথমে মানবদেহে ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে বিপর্যস্ত করে। তারপর ঔষধ বাণিজ্যের জন্য টিকা আবিস্কার করে। সেই টিকা সঠিক হলো কিনা, তা দেখতে তৃতীয় বিশ্বের মানুষজনকে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করে। যখন সব ঠিক হয়, তখন শুরু হয় টিকার সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক ব্যবসা।’
আর এজন্যই তিনি কিউবার জন্য ব্যতিক্রমী স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। এখনও কিউবা স্বাস্থ্য সেবায় বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি দেশ।
সারা বিশ্বে করোনা ভ্যাক্সিন নিয়ে হৈ চৈ চলছে, তখন ক্যাস্ট্রোর বক্তব্য নতুন করে সামনে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানী তাদের দেশের কোভিড ভ্যাক্সিনের সফলতা নিয়ে নিত্য নতুন তথ্য দিচ্ছে। এসব তথ্য কতটা সত্য বা কতটা মিথ্যা তা নিয়েই গবেষণা হতে পারে।
তবে, এসব ভ্যাক্সিনের চুড়ান্ত কার্যকারিতা বুঝতে আরো অন্তত এক বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে গবেষকরা মনে করছেন। যুক্তরাজ্যের ইমপেরিয়াল কলেজের একদল গবেষক বলছেন ‘ভ্যাক্সিন নিয়ে বিশ্ব তাড়াহুড়ো করছে। আসলে তৃতীয় ট্রায়াল বা মানব দেহে ট্রায়ালের জন্য যে পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং গবেষণা দরকার তা সংকুচিত করা হয়েছে। বরং এখন বাজারে যে ভ্যাক্সিন দেয়া হবে, সেটি প্রকৃত অর্থে হবে তৃতীয় ট্রায়াল। এর মাধ্যমে ভ্যক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং দূর্বলতা গুলো বোঝা যাবে।’
মজার ব্যাপার হলো, তড়িঘড়ি করে ভ্যাক্সিন আবিস্কার ‘সফল’ দাবীদার প্রতিষ্ঠানগুলো টার্গেট করেছে বাংলাদেশের মতো অপেক্ষাকৃত কম উন্নত এবং বেশী আক্রান্ত দেশ গুলোকে।
বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক; বাংলাদেশ অক্সফোর্ড আবিস্কৃত এস্টোজেনিকা এবং সিরাম উৎপাদিত ভ্যাক্সিন ক্রয় করতে যাচ্ছে। এই মর্মে বাংলাদেশ চুক্তিও করেছে। অক্সফোর্ডের এই ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একটি পরীক্ষায় এটি ৭০ ভাগ পযন্ত কার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরাই বলছে, এই ভ্যাক্সিনের আরো পরীক্ষা প্রয়োজন। কিন্তু ফাইজার এবং মর্ডানা যখন ভ্যক্সিন অনুমোদনের ঘোষণা দিয়েছে তখন, অক্সফোর্ড পিছিয়ে থাকে কি করে? এটা হলো পুজিবাদী বিশ্বের প্রতিযোগিতার এক অদ্ভুত উদাহরণ। আর বিশ্বের এই বহুজাতিকের অনৈতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ কি জিম্মী হয় কিনা, সেটি দেখার বিষয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন