অভাবে দুধের বদলে ময়দা গোলা পানি খাওয়ানো আলোচিত শিশু সাফিয়া-মারিয়ার জীবন বদলাতে শুরু করেছে। সন্তানদের নিয়ে যেন কষ্ট করতে না হয় এজন্য রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় শিশু দুটির বাবা আনিসুর রহমানের হাতে একটি ইজিবাইক তুলে দেয়া হয়েছে। এর উপার্জনের টাকাই চলবে তাদের সংসার। শিশু সাফিয়া ও মারিয়ার বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের ফয়জুল্লাহপুর গ্রামে।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনির উদ্দিন আহমেদের উদ্যোগে বাস্তবায়ন হয়েছে এটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারবর্গ মিলে এ সহায়তা করেছেন বলে জানিয়েছেন সহকারী অধ্যাপক মনির উদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, অভাবের তাড়নায় তারা দুধের বদলে ময়দা গোলা পানি খেয়েছে টানা কয়েক মাস। এটি ব্যথিত করেছে আমাদের। বাচ্চা দুটির বাবা ভ্যান চালায়। তার কাছ থেকে জেনেছি, পায়ের ভ্যানে এখন আর রোজগার হয় না। মানুষ উঠতে চায় না। এ বিষয়টি বিবেচনা করে পরিবারটিকে স্বাবলম্বী করতে একটি ইজিবাইক দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেটি তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এটি থেকে রোজগার দিয়েই এখন থেকে আনিসুর রহমান সংসার চালাবেন ও বাচ্চা দুটিকে ভালোভাবে দেখবেন।
এর আগে গত ৩১ জুলাই ৫ মাস ধরে ময়দা গোলা পানি খায় যমজ শিশু শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের পর সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাশীষ চৌধুরীসহ অনেক হৃদয়বান মানুষ তাদের পাশে দাঁড়ান এবং বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন।
গত ৭ অক্টোবর শিশু দুটির জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দের দুই কক্ষের একটি ঘর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাশীষ চৌধুরী।
তিনি জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যে দুই কক্ষের ঘর বরাদ্দ আসবে প্রথম ধাপেই দুই শিশুর জন্য একটি ঘর বরাদ্দ দেয়া হবে। তারা খুব অসহায় মানুষ। কথা বলে জেনেছি তাদের সামান্য পরিমাণ নিজস্ব জমি রয়েছে। তবে থাকার জন্য ঘর নেই।
ইজিবাইক হাতে পাওয়ার পর সাফিয়া-মারিয়ার বাবা আনিসুর রহমান জানান, আমি খুব খুশি। যে স্যারেরা মিলে আমার বাচ্চাদের জন্য আমাকে এ সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি চিরঋণী হয়ে থাকবো।
শিশু দুটির মা স্বপ্না বেগম বলেন, বাচ্চাদের দুধের সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখন ইজিবাইকও পেয়েছি। আমাদের আর অভাব থাকবে না। এতেই আমরা চলতে পারবো। যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
ইজিবাইক প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইজ্ঞিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো.হযরত আলী।
তিনি বলেন, জাগো নিউজের সংবাদ দেখার পর মনিরউদ্দীন স্যার মূলত পরিবারটিকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ লক্ষেই শিশু দুটির বাবা আনিসুর রহমানকে একটি ইজিবাইক কিনে দেয়া হলো। আমরা তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখবো।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন