হেফাজতে ইসলামের আমীর ও ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারি মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা আহমদ শফির ইন্তেকালে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এমনকি পুলিশের আইজিও শোক বার্তা দিয়ে নিজেদের গভীর বেদনার কথা প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষায় প্রকাশিত বেদনা ও শোকে কাতরতা নিকট অতীতের কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। নিকট অতীতে তারাই আল্লামা আহমদ শফিকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে নানা অশ্রাব্য কথা বলতেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে দলটির অন্যান্য নেতৃবর্গ এবং সরকারের মন্ত্রিদের মুখে অতীতে অহরহ আল্লামা আহমদ শফিকে নিয়ে শোনা যেত কটু অশ্লীল বাক্য। রাজনীতির মাঠেই শুধু নয়, খোদ জাতীয় সংসদে পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা বিশ্রি ভাষায় আল্লামা শফিকে গালমন্দ করেছেন। আর এসব বক্তব্যকে ইনিয়ে বিনিয়ে প্রকাশ করেছে আওয়ামী ও ইন্ডিয়াপন্থি ইসলাম বিদ্বেষী খবরের কাগজগুলো।
২০১৩ সালের ১৩ জুলাই দৈনিক প্রথম আলোর ‘গণভবনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী, আহমদ শফির বক্তব্য নারীদের জন্য অবমাননাকর’ শীর্ষক প্রতিবেদনটির দিকে নজর দেয়া যেতে পারে। এই প্রতিবেদনটিতে দেখা যায় পুরোটা জুড়েই শেখ হাসিনার দ্বারা কটু, বিশ্রী ও অশ্রাব্য বাক্যবাণে আক্রান্ত আল্লামা আহমদ শফি।
এ খবরে দেখা যায়, অনুষ্ঠান ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৮৮টি বাস উদ্বোধন উপলক্ষ্যে। বাস নিয়ে সংবাদে কোন কথা নেই। বাস যেন চালিয়ে দেয়া হয়েছে আল্লামা আহমদ শফির উপর দিয়ে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী শেখ হাসিনার পুরো বক্তব্যটাই যেন ছিল আল্লামা শফির প্রতি বিষোদগার। এই প্রতিবেদনে দেখা যায় আল্লামা শফিকে ‘তেঁতুল’ হুজুর আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, “উনি যে নেত্রীর পাশে বসতেন, তাকে যদি তেঁতুল মনে করে উনার জিবে পানি আসে, তাহলে আমার কিছু বলার নাই।” আল্লামা আহমদ শফির ওয়াজের বয়ানে একটি বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা সেদিন বলেন, উনার বক্তব্য ‘জঘন্য’। তিনি (আল্লামা আহমদ শফি) কি মায়ের পেট থেকে জন্ম নেন নাই? মায়ের সম্মানটুকু উনি রাখেন না? উনার কোন বোন নেই, স্ত্রী নেই? সেদিন শেখ হাসিনা আল্লামা শফির বিরুদ্ধে নারীদের উস্কে দিয়ে বলেন, নারীদের উচিত এনিয়ে প্রতিবাদ করা।
শেখ হাসিনার বক্তব্যকে অনুসরণ করে পরের দিন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় সংসদেও এ নিয়ে তীব্র সমালোচনামূলক বক্তব্য রাখেন। ২০১৩ সালের ১৪ জুলাই বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত-“হেফাজতের সমালোচনায় মুখর নারীরা” শীর্ষক এক প্রতিবেদনে উঠে আসে জাতীয় সংসদে আল্লামা শফিকে নিয়ে তাদের বক্তব্যের অংশ বিশেষ। এসব অশ্রাব্য ভাষায় কুৎসিত বক্তব্য অবশ্যই জাতীয় সংসদের প্রসিডিংসে সংরক্ষিত রয়েছে। বিবিসি’র ওই দিনের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে-“সংসদ অধিবেশনের শুরুতেই পয়েন্ট অব অর্ডারে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফির বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন।” এ প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ। মতিয়া চৌধুরী সেদিন আল্লামা আহমদ শফিকে তেঁতুল হুজুর আখ্যায়িত করে চরম ধিক্কার জানিয়েছিলেন জাতীয় সংসদে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের নারী আসনের সংসদ সদস্য বেবি মওদুদ, শেখ ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী, তারানা হালিম, তৎকালীন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি সেদিন জাতীয় সংসদে আল্লামা আহমদ শফিকে গালমন্দের প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। যে বক্তব্য গুলো জাতীয় সংসদের নিয়মিত প্রসিডিংসে এখনো সংরক্ষিত আছে।
সেদিন বিএনপি’র একমাত্র মহিলা সংসদ সদস্য সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া আল্লামা আহমদ শফির বক্তব্যকে নিয়ে মিডিয়া ক্যু করা হয়েছে বলে আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগের সদস্যদের জবাব দিয়েছিলেন।
২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি আওয়ামীপন্থি দৈনিক সমকালে-“আহমদ শফির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবী” শীর্ষ এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাসদ আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়। মন্ত্রিত্বে থাকতে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু উঠতে বসতে আল্লামা আহমদ শফিকে ‘তেঁতুল’ হুজুর নামে আখ্যায়িত করতেন। আল্লামা শফি সংবিধান বিরোধী বক্তব্য রাখছেন এমন দাবী করে ইনু আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেন।
শোকে কাতর হয়ে এখন বিবৃতি দেয়া পুলিশের আইজি বেনজির আহমদ তো ছিলেন আরও একধাপ উপরে। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের আহ্বানে জড়ো হওয়া মাদ্রাসার আলেম ও সাধারণ জনগণের উপর সশস্ত্র হামলা চালানো গণহত্যার নেতৃত্বে ছিলেন বেনজির নিজে। অথচ আজ তাদের মুখেই শোনা যায় শোকগাথা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন