করোনা মহামারির এই সংকটকালে অর্থনৈতিক মন্দায় জর্জরিত গোটা বিশ্ব। গত কয়েক মাসে জনজীবনে টানা স্থবিরতায় বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাও অকেটাই ধীর হয়েছে। এই সময়কালে ঋণ আমানতের মুনাফা হারের ব্যবধান কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমানতের সুদহার কমার সঙ্গে সঙ্গে ঋণের সুদহারও কমেছে। তবে গ্রাহক পর্যায়ে এর সুফল পৌঁছুচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যান মতে, ঋণ আমানতের সুদহারের ব্যবধান কমে গত জুন মাসে নেমেছে ২ দশমিক ৮ শতাংশে। যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ ব্যবধান কমার অনুমোদন দেয়া আছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হলেও আমানতের সুদহার রাতারাতি কমানো সম্ভব হয়নি। তুলনামূলকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলো আমানত হারানোর ভয়ে আমানতের সুদহার কমাতে পারছে না। তাতে করে একদিকে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যব বাড়ার পাশাপাশি তারা কম সুদে ঋণ বিতরণও করতে পারছে না। ফলে গ্রাহকদের জন্য কোনও সুফলই থাকছে না।
এ বিষয়ে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হালিম চৌধুরী গতকাল গণমাধ্যমকে জানান, স্প্রেড বা ব্যাপ্তি কমে যাওয়ায় প্রতিটি ব্যাংকেরই বছর শেষে মুনাফা কমে যাবে। কারণ, ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। তবে অনেক ব্যাংকই এখনও আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামাতে পারছে না। ফলে স্প্রেড কমে যাচ্ছে।
সামনের দিনগুলোতে ধীরে ধীরে তা আরও বেড়ে যাবে। কারণ, বেশিরভাগ ব্যাংকই আমানতের সুদহার কমিয়ে দিচ্ছে। মেয়াদি আমানতের সুদহার ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে নেমে এসেছে বলেও জানান তিনি।
এই ব্যাংক কর্মকর্তার মতে, সুদহার ব্যাংকের জন্য বড় বিষয় নয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো খেলাপি ঋণ। এক ধরনের গ্রাহক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না। আবার তাদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনও আইনি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে না। তাতে করে ব্যাংকে মন্দ মানের খেলাপি ঋণ দিন দিন বাড়ছে। তাতে ব্যাংকের তহবিল ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঋণ খেলাপিরাই নতুন করে করোনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে নতুন করে ঋণ নিয়ে ব্যাংকে ব্যাংকে ঘুরছেন জানিয়ে তিনি জানান, ব্যাংক সবসময়ই একজন ভালো গ্রাহককে ঋণ দিতে আগ্রহী থাকে। স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু মন্দ গ্রাহককে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক কিছু হিসাব-নিকাশ করতে হয়। এজন্য বর্তমান বাস্তবতায় অনেকে ঋণ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যানে ঋণ আমানতের সুদহারে দেখা যায়, গত বছরের জুন মাসে ঋণ আমানতের সুদহারের গড় ব্যবধান যেখানে ছিল ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ, চলতি বছর জুন মাস শেষে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৮ শতাংশে। এর মধ্যে ৬টি ব্যাংকের ঋণের গড় সুদের হারের চেয়ে আমানতের গড় সুদহার বেশি হয়েছে।
জুন মাস নাগাদ আমানতের গড় সুদ হার কমে ৫ দশমিক শূণ্য ৬ শতাংশে নেমেছে। সেখানে আগের ঋণের গড় সুদহার কমে নেমেছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে।
গেল বছরের জুনে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তবে ঋণের গড় সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন