জাহাঙ্গীর কবির নানক। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। স্কুলজীবন থেকে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির’ দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছেন। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই নেতা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন যুবলীগের চেয়ারম্যানও। তিনি ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঢাকা-১৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
সম্প্রতি দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি-এর মুখোমুখি হন এই রাজনীতিক। তার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় উঠে আসে সমসাময়িক রাজনীতি ও জাতীয় পরিস্থিতির নানা দিক এবং অজানা অনেক তথ্য-উপাত্ত। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ সারির এই রাজনীতিকের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ব্রেকিংনিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রাহাত হুসাইন।
ব্রেকিংনিউজ : আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে বারবার আলোচনা হলেও বিষয়টি কোন পর্যায়ে রয়েছে?
জাহাঙ্গীর কবির নানক : অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগের জন্য শুভকর নয়। আমি মনে করি, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল যেমন- জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যারা অনুপ্রবেশ করেছে তাদের দল থেকে ছেঁকে বের করে দিতে হবে। শাহেদরা কার হাত ধরে দলে অনুপ্রবেশ করলো তাদেরও বিচার হতে হবে। আমি পার্টি মিটিংয়ে এ দাবি উত্থাপন করব। এ বিষয়টি কার্যকর হতেই হবে। আমরা যারা এ দলের আষ্টেপিষ্টে আছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দলটিকে একটি সাচ্চা দল হিসেবে গড়ে তুলতে চান। মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা অনুপ্রবেশকারীদের দল থেকে বের করার জন্য বার বার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশনা অমান্য যারা করেছে, আমরা চাই তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হোক।
ব্রেকিংনিউজ : এর আগেও অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করেছিলো আওয়ামী লীগ; সেই তালিকা কতটুকু আলোর মুখ দেখেছ?
জাহাঙ্গীর কবির নানক : অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করা হয়েছিল; সেই তালিকা অনুযায়ী অনুপ্রবেশকারীদের দল থেকে বের করে দেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। তালিকার নাম নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। এর মধ্যে করোনা চলে আসে, এ কারণে কিছু কাজ এলোমেলো হয়ে গেছে। যারা ফাঁকফোকর দিয়ে দলে অনুপ্রবেশ করেছে তারা কারো না কারো হাত ধরে অনুপ্রবেশ করেছে। যার হাত ধরে অনুপ্রবেশ করেছে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে আগে।
ব্রেকিংনিউজ : আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির শূন্য পদে কারা আসতে পারে?
জাহাঙ্গীর কবির নানক : এটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ওপরে। আমাদের দল জাতীয় কাউন্সিলে বিষয় নির্ধারণী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, নেত্রী শেখ হাসিনা যাকে যেখানে যোগ্য মনে করবেন, তিনি সেভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। যে পদগুলো খালি রয়েছে এগুলোর বিষয়ে মাননীয় নেত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন।
ব্রেকিংনিউজ : আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পরও করোনাকালে স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে উঠেছে। দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে এ বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
জাহাঙ্গীর কবির নানক : এটি দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক, অনভিপ্রেত ও অপ্রত্যাশিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, সড়ক-পরিবহন ঢেলে সাজাতে চেয়েছেন। স্বাস্থ্যখাতে যে অনিয়ম, অচলায়তন দেখা দিয়েছে সেটা আমাদের প্রত্যাশিত ছিল না। নেত্রী স্বাস্থ্যসেবাকে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে গেছেন। এর মাঝে যে পরিস্থিতি হয়েছে তাতে শুধু আমরা নয়, মাননীয় নেত্রীও ক্ষুব্ধ। নেত্রী ক্ষুব্ধ বলেই সমস্ত স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। ঢেলে সাজানো শুধু নয়; যারা স্বাস্থ্যখাত নিয়ে অনিয়ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এটা সকলের জন্য গ্রিন সিগন্যাল। আমরা আশা করি স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা শুধু স্বাস্থ্য অধিদফতর বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয়, সকলেই এই সিগন্যাল অনুধাবন করে সেভাবেই চলবে।
ব্রেকিংনিউজ : ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনে আপনার নাম শোনা যাচ্ছে, প্রস্তুতি নিচ্ছেন কিনা?
জাহাঙ্গীর কবির নানক : ঢাকা-১৮ আসনে আমার নির্বাচন করার প্রস্তুতি বড় বিষয় নয়, দলের নেত্রী আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই হলো মূল বিষয়। আমি মনে করি, এ আসনে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন আমাদের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতা ছিলেন। এ আসনের এমপি ছিলেন; দীর্ঘ সময় ধরে সংসদ সদস্য ছিলেন। দলীয় লোক হিসেবে মনে করি, ত্যাগ-তিতিক্ষায় পরীক্ষিত এমন কাউকে এখানে মনোনয়ন দেয়া হোক।
আসনটি ঘিরে আমাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে শুধু তা নয়; বাহাউদ্দিন নাছিম সাহেবেকে নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা হতেই পারে। কর্মীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকতেই পারে; যেহেতু সাহারা আপা ছিলেন একজন কর্মীবান্ধব নেত্রী। উনি আমাদের থেকে চিরবিদায় নেয়ার পরে ওই এলাকার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সকল সহযোগী সংগঠন ও তৃণমূলের কর্মীরা একজন ত্যাগী-কর্মীবান্ধব পরীক্ষিত নেতা চাইতেই পারে।
ব্রেকিংনিউজ : ঢাকা-১৮ আসনে একজন ব্যবসায়ী নেতাও মনোনয়ন চাইছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
জাহাঙ্গীর কবির নানক : আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে যেটা চাই, সেটা হল ঢাকার দুটি আসনের উপনির্বাচনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে মনোনয়ন দেয়া হোক। এটা আমার বুকভরা প্রত্যাশা। প্রত্যাশা আমার থাকতেই পারে। আমি রাজনীতি করে আসা মানুষ তো, আমি চাইবো- ‘রাজনীতিবিদদের হাতেই রাজনীতিটা থাকুক’।
ব্রেকিংনিউজ : সময় দিয়ে কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জাহাঙ্গীর কবির নানক : আপনাকে ও ব্রেকিংনিউজ পরিবারকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন