আলোহীন স্যাঁতসেঁতে ছোট্ট একটি ঘর। এখানেই খাওয়া-ঘুম। দিনের পর দিন অর্ধাহারে, অনাহারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার উপক্রম মোহাম্মদ উল্লাহর। এই ঘরের মেঝেতে শিকলবাঁধা অবস্থায় জীবনের দুটি বছর কেটে গেছে তার। অভিযোগ রয়েছে তা উদ্ধারে প্রশাসনের সবাই শুধু দেখছেন তো দেখছেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও তাকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ।
স্থানীয়রা ধারণা করেন, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে মোহাম্মদ উল্লাহকে বঞ্চিত করতে কৌশলে তাকে 'পাগল' বলে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ভুক্তভোগীরে বাবার অভিযোগ নিজ ছেলে শিকলেবন্দি জানি, চোখে দেখার ক্ষমতা তার নেই। এর আগেও কয়েক দফা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ব্যর্থ এই অসহায় বাবা। তিনি এখন নিরুদ্দেশ- বাড়ি ছাড়া।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পারিবারিক রোষানলের শিকার মোহাম্মদ উল্লাহ তালুকদার। একটানা দু’বছর থাকছেন ছাগলের খোয়ারে। দু’পায়ে, দু’হাতে শিকলে বাঁধা, ৪ তালায় আবদ্ধ মোহাম্মদ উল্লাহ। এখন একটি মানুষরুপি কঙ্কালসার একটি জীব। মোহাম্মদ উল্লাহ পাগল, অভিযোগ পরিবারের। তবে সরকারি প্রশাসন যন্ত্র, সমাজপতি বা সমাজের মোড়লেরা কিংবা মানবাধিকার সংগঠনের কেউ এগিয়ে আসেনি উদ্ধারে।
জানা গেছে, বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া গ্রামের ৮ নং ওয়ার্ডের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অহিদুল আলম তালুকদারের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ। উচ্চ শিক্ষিত, বিদেশ ভ্রমণ করেছেন কয়েকবার। এখন তিনি পাগল। এ কারণে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে।
মোহাম্মদ উল্লাহর ছোট বোন লায়লার অভিযোগ ভাই পাগলামি করে তাই বেঁধে রাখা হয়েছে।
মোহাম্মদ উল্লাহর অপর ভাই আহাম্মদ উল্লাহ জানান, ভাই পাগল তাই বেঁধে রাখা হয়েছে। পাগল না হলে আপন ভাইকে এভাবে বেঁধে রাখা হয়?
মোহাম্মদ উল্লাহর মা রেবেকা বেগম এর সাথে কথা বলতে চাইলে তাকেও পাওয়া যায়নি। মায়ের সন্ধান দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক অহিদ মাস্টার রয়েছেন পলাতক। অজ্ঞাতস্থান থেকে অহিদ মাস্টার ফোনে বাড়ির বিষয়ে শোনালেন রুপ কথার গল্প। তিনি বলেন আমার ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহকে আগে বাঁচান। এভাবে ছেলেটিকে বন্দিকরে রাখা হলে মারা যাবে। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় স্থানীয় অনেকের সাথে। অহিদুল মাস্টার (তালুকদার) পরিবার সম্পর্কে স্থানীয় কেউ কোন মুখ খুলছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি জানান, বিষয়টি নিয়ে আলাপ করে লাভ নেই। এর সমাধান দিতে পারেনি এসপি, থানা পুলিশ, চেয়ারম্যান, মেম্বার এমনকি উপজেলা প্রশাসন। বিষয়টি হিজলা, মুলাদি, মেহেন্দিগঞ্জ, কাজিরহাট সহ বিভিন্ন প্রশাসন জানেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহিম মোল্লা জানান, বিষয়টি খুবই জাটিল মেম্বার হিসাবে তিনিও মন্তব্য করতে রাজি নন। গুয়াবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান তালুকদার জানান, ওই পরিবার সম্পর্কে তার ধারণা নেই।
হিজলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন ঢালী জানান, মোহাম্মদ উল্লাহ পাগল নন। তাকে পাগল সাজানো হয়েছে। অহিদ মাস্টারের সম্পত্তি এককভাবে ভোগ করার জন্য এ নাটক। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান- থানা পুলিশের কাছে গেলে সেখানেও পুলিশ একচোখা দৃষ্টিতে দেখছে। মোহাম্মদ উল্লাহকে উদ্ধার করতে সক্ষম হলে বেড়িয়ে আসবে আসল রহস্য।
মোহাম্মদ উল্লাহর ফুঁপু শুরমা বেগম জানান, বাবার বাড়ি যাওয়ার অধিকার নেই তার। শেকলবন্দি ছেলেটির কথা বলতে গেলেই কথায় কথায় চলে তার এবং ভাতিজার ওপর নির্যাতন। এখন আর ওই বাড়ির খোঁজ খবর নেন না। ভাই অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অহিদুল আলম তালুকদার বাড়ি ছাড়া, নিরুদ্দেশ। বাড়ি একটি আধা পাকা ঘর রয়েছে, ওটিও খালি। আর তার ছেলেকে শেকলবন্দি করে রাখা হয়েছে ছাগলের খোয়ারে। এ যে কি অমানবিক-কার কাছে বিচার দেব?
আমদের সমাজ এবং সমাজ ব্যবস্থায় এর কোন বিহিত ব্যবস্থা নেই ? নেই মোহাম্মদ উল্লাহর বাঁচার অধিকার ? মোহাম্মদ উল্লাহকে বাঁচাবে কে ? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন