এইতো যদি এ বছরের হিসেবই করেন। পাপিয়াকাণ্ডে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়ে গেলো। পাপিয়ার নিয়ন্ত্রণে ছিলেন ১ হাজার ৭০০ জন ‘সুন্দরী নারী’। তাঁদের নানাভাবে ফুসলিয়ে বা ব্ল্যাকমেল করে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের দিয়ে পাপিয়া অপরাধ জগতের সরদারিনি হয়েছিলেন। তিনি উঁচুমহলের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করতেন। বড় বড় হোটেল ছিলো তার বুকিং করা। পাপিয়াই জানিয়েছেন, কপালের দোষে তাঁকে ধরা পড়তে হয়েছে। কিন্তু এই ব্যবসায় শত শত নারী আছেন। পাপিয়ার নেটওয়ার্কও যে নানা এলাকায় বিস্তৃত, সে কথা পত্রিকাগুলোতেই এসেছে। সে হিসাবে কয়েক লাখ না হলেও কয়েক হাজার নারী যৌন দাসত্বের বলি হয়ে আছেন। যেহেতু এই পেশা অত্যন্ত গোপনীয় এবং আড়ালের ও অন্ধকার জগতের-অনুমানও করা কঠিন কার কন্যা বা মা বা বোন কখন পাপিয়াদের শিকারে পরিণত হচ্ছেন।
এ কথা বোঝার জন্য রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না যে পাপিয়ার মতো অন্য সব সরদারনীর নিয়ন্ত্রণাধীন একটি বড় অংশ সরদারনী হয়ে উঠতে চাইবে। কারণ, কাঁচা টাকার হাতছানি। চোখের পলকে সরদারনীদের ধনী থেকে মহাধনী হতে দেখার অভিজ্ঞতা এবং তা হতে তৈরি হওয়া লোভ। নতুন সরদারনী বাড়লে দেশের ভেতরে-বাইরে দুই জায়গাতেই নারী পাচার বাড়ে।
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যায় দন্ডিত আসামিদের মধ্যে দুজন নারী তার সহপাঠী। এর একজন কামরুন নাহার মণি। আগুনে পুড়িয়ে হত্যার সময় নুসরাতের হাত বাঁধেন এবং তাকে চেপে ধরেন তিনি। হত্যার জন্য নুসরাতকে ক্লাস থেকে ডেকে ছাদে নিয়ে যান এবং ওড়না দিয়ে হাত পেছনে নিয়ে বাঁধেন উম্মে সুলতানা নামে আরেক নারী। মণি ও সুলতানা পেশাদার খুনি নন। কিন্তু নিজ সহপাঠীকে নির্মমভাবে তারা হত্যা করেছেন। নুসরাত হত্যার পরিকল্পনায় অংশ নিয়ে এবং অন্য হত্যাকারীদের সহযোগিতা করে মণি ও সুলতানা দেশজুড়ে সমালোচিত হন।
শুধু হত্যা নয়, জঙ্গিবাদ, মানব পাচার, স্বর্ণ পাচার, মাদক ব্যবসা, প্রতারণা, শিশু চুরি, ছিনতাই ও অপহরণের মতো বড় বড় অপরাধেও নারীরা সম্পৃক্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারী কোনো অপরাধে জড়িত থাকতে পারেন সমাজ তা বিশ্বাস করে না। আর অপরাধী সিন্ডিকেট সমাজের এই বিশ্বাসকে কাজে লাগায়। ফলে তারা নারীকে দিয়ে সহজেই নানা ধরনের অপরাধ করাতে পারে।
নারীরা বহু আগে থেকে নারী পাচারের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িত। বিশেষ করে পাচারকারী সিন্ডিকেটের সঙ্গে থাকা নারী সদস্যরা ফুসলিয়ে, ভালো কাজের আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন বয়সী নারীদের পাচারের ফাঁদে ফেলেন।
ইদানিংকালে নারীদের যে অপরাধগুলোর খবর আমাদের চোখে পড়ে:
প্রতারণার ফাঁদ : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে প্রথমে সখ্য গড়ে তোলে। এরপর ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রেমের মিথ্যা সম্পর্ক গড়ে তুলে একপর্যায়ে অপরাধী সেই নারী চক্র ভুক্তভোগীকে বাসায় ডেকে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। এই অবৈধ মেলামেশার ছবি তারা গোপনে ভিডিও করে রাখে। পরে সেই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের ব্ল্যাকমেইল করে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। এমন প্রায়ই খবর পাওয়া যায়। এই প্রতারণা হয় নানাভাবে। কিছুদিন আগে এক বন্ধু তার স্ত্রীকে ব্যবহার করে আরেক বন্ধুকে বাসায় ডেকে খুন করেছে।
জঙ্গিবাদে নারী : সাম্প্রতিক সময়ে নারীরা কেউ কেউ স্বামীদের প্ররোচনায় এবং কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। গেল কয়েকবছরে বেশ কয়েকজন নারী জঙ্গি ধরাও পড়েছেন। র্যাব-পুলিশের দেওয়া তথ্যে, জেএমবির নারী জঙ্গিরা মূলত অর্থ ও সদস্য সংগ্রহ করে। কিছু ক্ষেত্রে কোনো নাকশতা ঘটানোর পূর্বে সে স্থানের রেকি করেন এবং নাশকতায় পুরুষ সদস্যদের সাহায্য করেন। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো অনেক উচ্চশিক্ষিত নারীও এই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন।
নারী অপরাধের সবশেষ আলোচিত সংযোজন সাবরিনা। এই সাবরিনাদের খোঁজ খুব একটা মেলে না। সমাজে এমন অনেক সাবরিনা আছে যারা শিক্ষাদীক্ষায় কোন অংশে কম নয়। তাদের অর্থ প্রতিপত্তিরও অভাব নেই। কিন্তু তারা আরো ক্ষুধা জাগায়, আরো অপরাধে জড়ায়। কর্পোরেট জগতে এই নারী অপরাধীরা নানাভাবে যুক্ত আছেন। মুখোশ পড়ে হয়তো তারা কোন বড় অপরাধীকে সাহায্য করছেন, নয়তো নিজেই জড়িয়ে পড়ছেন অপরাধে। আড়ালে আবডালে এই শিক্ষিত নারী সমাজের যারা অপরাধের সঙ্গে নিজেরা জড়াচ্ছেন, তাদের মুখোশ উম্মোচন দরকার। তাহলেই হয়তো অনেক অপরাধী নারী হওয়ার সুযোগটা নেবে না। অনেকে নারীদের দিয়ে অপরাধ করার সুযোগটা নেবে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন