করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে স্বল্প পরিসরে গত ১ জুন থেকে চালু করা হয় গণপরিবহন। শর্ত হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয় স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতা। শুরুতে শর্ত মেনে চলার কিছু নজির দেখা গেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চিত্রটা বদলে গেছে।
রাজধানীর গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দুই সিটে একজন যাত্রী আর মাস্ক পরে যাতায়াত করতে দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে সেটাও মানা হচ্ছে না। অনেক যাত্রীর মুখেই দেখা যায় না মাস্ক। আবার অনেক বাসেই দুই সিটে পাশাপাশি দু’জন যাত্রী বসে থাকতে দেখা যায়। যানবাহনে উঠার সময় না চাইলে জীবানুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে না। যাত্রীরা বলছেন, এখন কাগজে-কলমের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সড়কে গণপরিবহন চলছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিশ্বরোড মোড়, ইসিবি চত্বর, ফার্মগেট, কাজীপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া, আগারগাঁও, তালতলা, কালশীর মোড়, মিরপুর ১২, ১১, ১০, ৭, ৬, ২ ও ১ নম্বর এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, কিছু বাসে এক সিট ফাঁকা রেখে সড়কে চলছে। আবার কোনো কোনো বাসে এসবের বালাই নেই। যাত্রীরা কেউ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছেন, আবার কেউ কেউ মানছেন না। অনেক বাসের দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতেও দেখা যায়। বেশিরভাগ বাসে দেখা যায় যাত্রী, বাসচালক, হেল্পার মাস্ক পরা থাকলেও হাতে হ্যান্ড গ্লাভস নেই।
পরিবহনে ওঠার সময় যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করার কথা থাকলেও কোনো পরিবহনে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে দেখা যায়নি। এছাড়াও গণপরিবহন সংশ্লিষ্টদের পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ব্যবহার করে গণপরিবহন চালানোর কথা থাকলেও কাউকে ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
এদিকে এক সিটে দুই যাত্রী বসানোয় দুই যাত্রীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন বিকল্প অটো সার্ভিস পরিবহনের কন্ডাক্টর মো. বাবু। বাব অভিযোগের সুরে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট এক সিটে দুই যাত্রী বসা দেখলে আমারে ছয় হাজার টাকা জরিমানা করবে। যাত্রীদের নেমে যাইতে বলছি তবুও নামছে না। দেখেন এখন একজন বাসে দাড়িঁয়ে আছেন। বাসে কিছু হলে, সব দোষ ড্রাইভার আর কন্ডাক্টরের। যাত্রীদের কোনো দোষ নাই।
রাজধানী পরিবহনের যাত্রী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে আমি সকাল থেকে বেশ কয়েকটি জায়গায় বাসে করে যাতায়াত করেছি। দেখলাম প্রতি বাসে একজন করে বসানো হচ্ছে। আর বাসে ওঠার সময় এখন আগের তুলনায় স্প্রে কম করা হচ্ছে। কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত কোনো বাসে শরীরের তাপমাত্রা মাপতে দেখেনি। এখন আর বাসে কন্ডাক্টর আর চালককে হ্যান্ড গ্লাভস পড়তে দেখছি না। এখন নামেমাত্রই স্বাস্থ্যবিধি।
প্রজাপতি পরিবহনের যাত্রী মো. আকাশ বলেন, ‘প্রথম প্রথম যে পরিমাণ স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়েছিল, এখন মনে হয় তাও মানা হচ্ছে না। কয়েকদিন আগে বাসচালক ও কন্ডাক্টরকে হ্যান্ড গ্লাভস পরে বাস চালাতে দেখা গেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে না। আগে তাদের নিজ তাগিদে স্প্রে করতে দেখা গেছে। কিন্তু এখন না চাইলে জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করছে না।
পরিস্থান পরিবহন লি. বাসের কন্ডাক্টর জহির হোসেনের কাছে হ্যান্ড গ্লাভস পড়েন নাই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গরম লাগে। এই কারণে পরি নাই। কতক্ষণ গ্লাভস পরে থাকা যায়? আপনাদের যেমন জীবনের ভয়ে আছে, আমাদেরও আছে। আমরা প্রতিদিন গাড়ি চালাই না। একদিন পরপর চালাই।’
গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না মানার ব্যাপারে সড়কে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট (তেজগাঁও জোন) শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘গণপরিবহনে যাত্রী, চালক ও কন্ডাক্টর সবাই মাস্ক পরছেন। নিয়মিত যাত্রীদের হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। এক সিট ফাঁকা রেখেই গণপরিবহন চলছে। আগে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই এখনো মানা হচ্ছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন