করোনাকালীন সময়ে ছোট বেলায় ফিরে গেছে অনেকে। অবসর সময়ে নীল আকাশে ঘুড়ি উড়িয়ে সময় পার করছেন অনেকে। আর চিরাচরিত ঘুড়ির ধারাকে পাল্টে দিয়েছেন পাবনা বেড়া উপজেলার ছোট পায়না গ্রামের রিকশা চালক মুক্তিযোদ্ধা মোজ্জাফর মোল্লা। তার ঘুড়ির সুনাম এখন সারাদেশে। করোনাকালীন এই চার মাসে তিনি ঘুড়ি বানিয়েছেন অর্ধশত। উপার্জন করেছেন প্রায় তিন লাখ টাকা।
জানা যায়, করোনাকালীন সময়ে মোজ্জাফর একদিন আকাশে বেশ বড় একটি ঘুড়ি উড়তে দেখেন। এরপর বাড়িতে বসে দীর্ঘ ৫০ বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেন একটি ঢাউশ ঘুড়ি। আর সেই ঘুড়ি বানানোর ভিডিও ও ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেন স্থানীয় কয়েক যুবক।
এরপর থেকে প্রতিদিন মোজ্জাফরের কাছে ঘুড়ি তৈরির জন্য ফোন আসতে থাকে। প্রথম যে বায়নাটি নিয়ে ঘুড়ি বানিয়ে ছিলেন সেই ঘুড়ির মজুরি নিয়ে ছিলেন সারে চার হাজার টাকা। তিন দিন সময় নিয়ে তৈরি করেন ২৫০ হাত লেজের বিশাল সাপা ঘুড়ি। পাকা বাঁশ, পলি, টেপ আর সুই-সুতার কাজ করতে হয় ঘুড়ি তৈরিতে।
‘মুক্তিযুদ্ধ করে স্বীকৃতি না পেলেও ঘুড়ি সম্মান এনে দিয়েছে’
বেকার সুবিধা বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা মোজ্জাফর এখন মাসে আয় করছেন ৬০ হাজার টাকা। রিকশা চালানো ছেড়ে দিয়েছেন প্রায় দুই বছর হলো। ফেসবুকের সুবাদে তার বানানো ঘুড়ির সুনাম এখন জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে সারাদেশে।
অবসর সময়ে মুক্ত আকাশে ঘুড়ি উড়াতে সবারই ভালো লাগে। আর করোনাকালীন সময়ে গ্রামের বাড়িতে ছোট বড় সবার হাতে এখন ঘুড়ি আর নাটাই। সুবিশাল আকাশে সুন্দর এক দৃশ্য তৈরি হয় নীল আকাশের দিগন্তে। এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত ঘুড়ি তৈরি করে বিক্রি করেছেন তিনি। এক একটি ঘুড়ির লেজ নিচে ৫০ হাত থেকে শুরু করে চাহিদা মতো ৩০০ হাত লেজের ঘুড়িও তৈরি করেছেন তিনি। বিশাল বিশাল একটি ঘুড়ি উড়াতে চার থেকে পাঁচ জন মানুষ প্রয়োজন হয়। বাতাস কম থাকলে এই ঘুড়ি উড়তে চায় না। বৃষ্টিতে ভিজলে ক্ষতি হয়না ঘুড়ির। ডাউশ, সাপা, ডোল, ফ্যাসকা, মাছ, প্রজাপ্রতি, চিল, উড়জাহাজ, কৌড়সহ চাহিদামত ঘুড়ি বানিয়ে দেন তিনি। ফেসবুকের ছবি দেখে কুষ্টিয়া, রাজবাড়ি, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, উল্লাপাড়া, বাঘাবাড়িসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ আসছে ঘুড়ি কেনার জন্য।
এ বিষয়ে মোজ্জাফর মোল্লা বাংলানিউজকে মোল্লা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করেও এখনো স্বীকৃতি পাইনি। শখের বসে ঘুড়ি বানিয়েছি। প্রতি বছর একটি করে ঘুড়ি আমি তৈরি করি। তবে এই বছর ঘুড়ি আমাকে অনেক সম্মান এনে দিয়েছে।
পাবনা জেলা প্রশাসক কবির মাহামুদ বাংলানিউজকে জানান, আমি নিজেও ফেসবুকে তার ঘুড়ির ছবি দেখেছি। সংশ্লিষ্ট উপজেলার কর্মকর্তাকে তার বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় কোনো মুক্তিযোদ্ধা সমস্যায় থাকতে পারে না। অবশ্যই বিষয়টি দেখা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন