সাম্প্রতিক সময়ে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজত আমির শতবর্ষী আল্লামা শাহ আহমদ শফী অসুস্থ হওয়ায় মাদ্রাসার মোহতামিম এবং মুঈনে মোহতামিম নিয়োগসহ হেফাজতের নানা ইস্যুতে সংগঠনটির আমির ও মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে চলে আসছিল স্নায়ুযুদ্ধ। তবে পক্ষকালের ব্যবধানে অবশেষে বহুল আলোচিত এ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতের শীর্ষ দুই নেতার চরমে পৌঁছা বিরোধ অবসান ঘটেছে।
গত ৮ জুলাই (বুধবার) সন্ধ্যায় হাটহাজারী মাদ্রাসার অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে প্রায় ২০ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পাশে বসা এবং হেফাজত আমিরের ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীও তাদের পাশে অবস্থান করছেন।
এ সময় হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারী মাদ্রাসা, দেশ ও জাতির মধ্যে সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং ভুল বুঝাবুঝির নিরসনের লক্ষ্যে এ ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে জানিয়েছেন। এছাড়া তিনি হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও তারই হাতে গড়া সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এবং মাদ্রাসারকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য না করারও অনুরোধ জানান।
এছাড়া উভয়ের সমঝোতায় উপনীত হয়েছে এমনটা দাবি করে ফেসবুক লাইভে হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আনাস মাদানীকে ভাই হিসেবে সম্মোধন করে তার ও হেফাজত আমিরের লিখিত বক্তব্য পাঠের অনুরোধ করেন।
আনাস মাদানীর পাঠ করা লিখিত বক্তব্যে হেফাজত মহাসচিব বলেন, হুজুর ছেলে আনাস মাদানী আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আমাদের মাঝে কোন দূরত্ব নাই। কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে মাত্র। এছাড়া হেফাজত আমির সর্বজন শ্রদ্ধেয়। আমাদের জন্য নেয়ামতে উজমা। আমাদের মাথার ছায়া, মুকুটহীন সম্রাট। আমরা যারা হুজুরের মনে কষ্ট দেব তা আল্লাহর ওলির সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করার শামিল।
কিন্তু দুঃখের বিষয় আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও তার ছেলে আনাস মাদানীকে নিয়ে দৈনিক পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং ফেসবুক পেইজে বিরুপ মন্তব্য ও লেখালেখি করা হচ্ছে। এতে আমাদের ভুল বুঝাবুঝি ও দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই আপনারা যারা ইসলাম, আলেম-ওলামা ও দ্বীনকে ভালবাসেন তারা এ ধরণের বিরুপ মন্তব্য বন্ধ করবেন, দূরে থাকবেন। এটাই আমার অনুরোধ।
এদিকে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিবেশ শান্ত আছে। আমাদের মধ্যে কোন প্রকার ভুল বুঝাবুঝি নাই। তাছাড়া ইসলাম রক্ষায় দেশবাসীকে নিয়ে হেফাজতে ইসলাম আগের মত কাজ করবে। এখানেও কোন গ্রুপিং নেই। সংগঠনটির দায়িত্বশীলগণ মহাসচিবসহ সকলে স্ব স্ব পদে বহাল আছেন। এগুলো যা শুনছেন সব অপপ্রচার মাত্র। শাপলা চত্বরের আন্দোলন বিশেষ কোন দল বা গোষ্টির সহযোগিতার ব্যাপারে ভুল বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। আমি এসবের ব্যাপারে অবগত আছি।
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিশ্চিুক হেফাজতের এক কেন্দ্রীয় নেতা মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, বিরোধের অবসান! আমার তো মনে হয় না, শেষ হয়েছে। এটা সাময়িক একটি কৌশল মাত্র। সাম্প্রতিক হেফাজত ও হাটহাজারী মাদ্রাসা নিয়ে দৈনিক পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং ফেসবুক পেইজে বিরুপ মন্তব্য ও লেখালেখি করা হচ্ছে তার থেকে পরিত্রাণ পেতে এ কৌশলটি উভয়ে বেছে নিয়েছে। তবুও প্রকৃত পক্ষে বিরোধের অবসান হয়ে থাকলে আমরা খুব খুশি। সে যাক, আল্লাহ সবাইকে হেদায়াত দান করুক। আমরা এই জন্য দোয়া করি।
প্রসঙ্গত, এরমধ্যে শূরা কমিটির মাধ্যমে মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে সরিয়ে দিয়ে মাদ্রাসার সিনিয়র মহাদ্দিস মাওলানা শেখ আহমদকে ওই পদে স্থলাভিষিক্ত করে। ফলে হেফাজতের এ দুই শীর্ষ নেতার স্নায়ুযুদ্ধ এক পর্যায়ে প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এছাড়া হেফাজত আমিরের পুত্র মাওলানা আনাস মাদানীর একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হলে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়।
এরপর হেফাজতের এ দুই শীর্ষ নেতা গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতির মাধ্যমে মুখ খুলতে শুরু করে। বিবৃতিতে উভয়ে হেফাজতের শাপলা চত্বর ট্র্যাজেডির জন্য একে অপরকে বিরুপ মন্তব্য করে দোষারোপ করেন। যা নিয়ে মিডিয়াপাড়া ও ফেসবুক-ইউটিউবে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বেশ সরব ছিল।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন