প্রথমে মনে করা হয়েছিল যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক শ্রেনীর অযোগ্য, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অথর্ব ব্যক্তিদের কারণে স্বাস্থ্যখাতের এই বেহাল দশা তৈরি হয়েছে। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে ততই এই ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে যে, এটা অযোগ্যতা বা দায়িত্বহীনতা নয়, এটা একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ বা স্যাবোটাজ। সরকারকে বিতর্কিত করা, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা এবং দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এই ধারণা স্পষ্ট হয়েছে যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ব্যর্থতা নয়, বরং এই ভুলগুলো বা অপকর্মগুলো তাঁরা করছে ইচ্ছাকৃতভাবে। বিভিন্ন সময় ‘বাংলা ইনসাইডার’ এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিএনপি-জামাতের একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তাঁরা পরিকল্পিতভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের দিয়ে এই ধরণের অপকর্মগুলো করাচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে, সেই সন্দেহগুলো স্পষ্ট হচ্ছে এবং এখন এটা সরলরেখার মতো স্পষ্ট এবং দিবালোকের মতো সত্য যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা যদি এই ষড়যন্ত্রগুলো খতিয়ে দেখি তাহলে দেখা যাবে যে, শুরু থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই অপকর্মগুলো করছে। এই অপকর্মের কয়েকটি দিক নিচে তুলে ধরা হলো-
১. এন-৯৫ মাস্ক এবং পিপিই কেলেঙ্কারি
শুরু থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিম্নমানের এন-৯৫ মাস্ক এবং পিপিই এনেছিল এবং এর ফলে আমাদের বহু চিকিৎসকের প্রাণহানি ঘটেছিল। বিশ্বে করোনা মোকাবেলায় যে দেশগুলোতে সবথেকে বেশি সংখ্যক চিকিৎসক মারা গেছেন সেই দেশগুলোর তালিকায় প্রথম স্থানে বাংলাদেশ। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন যে, চিকিৎসকরা পিপিই পরা জানতো না বলেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন মনে করেন যে, নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রীর জন্যেই শুরুর দিকে চিকিৎসকদের এই করুণ মৃত্যু ঘটেছে। এটা শুধু দুর্নীতি বা অবহেলা ছিলোনা, এটা ছিল একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিল যেন চিকিৎসকরা হাত-পা গুঁটিয়ে নেন, তাঁরা দায়িত্ব পালন না করেন। তাহলে সরকার একটি গভীর সঙ্কটে পড়বে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং সাহসি পদক্ষেপের কারণে শেষ পর্যন্ত এই চিকিৎসকরা কাজ করে যাচ্ছেন এবং বীরোচিত ভূমিকা পালন করছেন।
২. আরটি পিসিআর মেশিন কেলেঙ্কারি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা সঙ্কটের প্রথম থেকেই অল্প পরীক্ষা করার মাধ্যমে একটা ধুম্রজাল সৃষ্টি করার চেষ্টা করছিল। প্রথমে ধারণা করা হচ্ছিল যে, প্রধানমন্ত্রীকে খুশী করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ এই কাণ্ডটি করছেন। পরে বোঝা গেল যে, এটা একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। কম পরীক্ষা করে সারাদেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তা মোকাবেলা করা কঠিন হবে। এই জন্যেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কম পরীক্ষার কৌশল নিয়েছিল বলে মনে করেন অনেকে। আর এটার প্রমাণ পাওয়া যায় প্রতিটি ধাপে। প্রথমে কম পরীক্ষা, দ্বিতীয়ত ঢাকার বাইরে পরীক্ষা না করা, তৃতীয়ত করোনা শনাক্তে যে পিসিআর মেশিন আনা হলো তা ২০০৯ সালের মডেলের এবং এর কিট এখন পাওয়া যাচ্ছেনা। এই সমস্ত পরিস্থিতি তৈরি করে জনগনকে সরকারের প্রতিপক্ষ বানানো ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেলেঙ্কারির প্রধান লক্ষ্য।
৩. স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালকের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শুরু থেকেই একের পর এক দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়েছেন। শুরুতে তিনি বলেছিলেন যে, বাংলাদেশে করোনার ব্যাপকতা হবেনা, এরপর বলেছেন বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি ভালো এবং তাঁর সাথে পাল্লা দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন যে, বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি ইউরোপ-আমেরিকা থেকে ভালো। আর সর্বশেষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন যে, আগামী ২-৩ বছর আমাদের করোনার সঙ্গে বসবাস করতে হবে। যদিও তিনি এই বক্তব্যের জন্য পরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন, তবে ক্ষতি যা হওয়ার হয়েই গেছে।
৪. জিকেজি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিজস্ব উদ্যোগে জিকেজিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের। এই ক্ষেত্রে তাঁরা জালিয়াতি এবং প্রতারণা করে। জিকেজি’র প্রতারককে ধরা হলে এখন পর্যন্ত জিকেজি’র ব্যাপারে কোন তদন্ত হয়নি এবং এর সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কারা জড়িত বা কিভাবে জড়িত সে ব্যাপারেও কোন সুস্পষ্ট তথ্যাদি দেওয়া হয়নি। এটাও ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেকটি ষড়যন্ত্র।
৫. রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারি
যেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ আরো অনেকের সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার মোহাম্মদ সাহেদের ছবি দেখা যাচ্ছে, সেখানে এই হাসপাতালটি ২০১৪ সালের পর অনুমোদন না পাওয়ার পরেও তাঁকে কেন করোনা পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হলো এই প্রশ্নের উত্তর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে দিতে হবে। এটাও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক ব্যক্তি আছেন যারা রাজাকারের উত্তরাধিকারী। যাঁদের পরিবারের অনেকেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সহযোগিতা করেছিলেন। এরাই এখন করোনা পরীক্ষা জালিয়াতি করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে চাইছে। অনতিবিলম্বে এই সমস্ত ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করা উচিত বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন