আমারে ডিভোর্স দিয়া সাগরের সঙ্গে সংসার পাতলি, আমার বাচ্চাদেরও দেখতে দিচ্ছি না, তোরে আর দুনিয়ায় রাখবো না। এক্কেবারে পরপারে পাঠিয়ে দিবো-বলেই সাবেক স্ত্রী সায়মাকে (২০) উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করি। এরপর পালিয়ে যাই।
গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে এভাবেই স্বীকারোক্তি দিয়েছে সবুজবাগে ছুরিকাঘাতে নিহত ওই গৃহবধূ সায়মার সাবেক স্বামী শাহ আলম।
গত ১৯ জুন রাতে সবুজবাগে সায়মাকে বাসা থেকে ডেকে এনে খুন করে শাহ আলম। চেষ্টা চালিয়ে রোববার গাইবান্ধা থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। এরপর ঢাকায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশকে এসব তথ্য দেয়।
শাহ আলম জানায়, ২০১২ সালে সায়মার সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের দুটি সন্তান হয়। তাদের নিয়ে আদাবরে মেহেদী হাউজিং এলাকায় ভাড়া থাকতো। কিন্তু আয় উপার্জন না থাকায় সে পরিবার নিয়ে গাইবান্ধার গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। কিন্তু সায়মা কিছুদিন পরপরই একা ঢাকায় চলে আসতো।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সাগর মিয়া ঢাকায় থেকে সিএনজি চালায়। তার সঙ্গে সায়মার পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি শাহ আলম জানার পর সংসারে অশান্তি শুরু হয়।
খোঁজ নিয়ে শাহআলম জানতে পারে সায়মা সাগরের সহযোগিতায় ঢাকায় গাঁজার ব্যবসা করে। সংসারে অশান্তি দেখা দিলে প্রায় ৭মাস আগে সায়মা শাহআলমকে ডিভোর্স দিয়ে সাগরকে বিয়ে করে। দুই সন্তানকেও রেখে দেয় সায়মার সঙ্গে।
সবুজবাগের আহম্মদবাগ বিটু মিয়ার বস্তিতে সাগরের সঙ্গে বসবাস করতে থাকে সে। এদিকে শাহ আলম কিছুদিন পরপরই তার সন্তানদেরকে দেখতে সেখানে যেতো। কিন্তু তাকে তার সন্তানদের দেখতে দিতো না সায়মা ও সাগর।
শাহ আলমের দাবি, সাগর একদিন তাকে এ নিয়ে মারধোরও করে। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ২০০ টাকা দিয়ে একটি চাকু কিনে। গত ১৯ জুন রাত ১০টার দিকে সবুজবাগ থানাধীন ৩৬/৩ আহাম্মদবাগ বাসার পূর্ব পার্শের গলিতে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে সায়মাকে ডেকে আনে। সায়মা সেখানে এলে তাকে কথাবার্তার একপর্যায়ে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, সায়মার আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। সায়মার দ্বিতীয় স্বামী সাগর তাকে তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে সায়মাকে রেখে সাগরও পালিয়ে যায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ জুন সায়মা মারা যায়।
সবুজবাগ জোনের সিনিয়র সহকারি পুলিশ কমিশনার মোঃ রাশেদ হাসান যুগান্তরকে বলেন, প্রথমে হত্যাকাণ্ডটি অনেকটা ক্ল্যুলেস ছিল। সায়মার সাবেক এবং বর্তমান স্বামী কাউকেই পাওয়া যাচ্ছিল না। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রোববার কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে সায়মার সাবেক স্বামী শাহ আলমকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশের কাছে সায়মা হত্যার কথা স্বীকার করে। তার সঙ্গে আর কেউ ছিল কিনা এ বিষয়ে তদন্ত এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সায়মার বড় ভাই ফারুক বাদি হয়ে সবুজবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় আজ মঙ্গলবার ফৌজদারী কার্যবিধির স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দির জন্য শাহ আলমকে আদালতে হাজির করবে পুলিশ।
মামলার বাদি ফারুক যুগান্তরকে বলেন, শাহ আলম ইয়াবার নেশায় আসক্ত। সে স্ত্রীর উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ নিয়ে সংসারে অনেক ঝামেলা ছিল।
তিনি বলেন, আমার বোনের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাইনা। তার সম্পর্কে আপনি পুলিশের কাছ থেকে জানুন।
ফারুক বলেন, সাগরকে ফোন দিলেও সে সামনে আসছে না। সায়মার দুই ছেলেমেয়ে কোথায় আছে তাও জানি না। শাহ আলমকে থানায় জিজ্ঞাস করলাম। সে বললো ওরা সাগরের কাছেই আছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন