আবারও নারায়ণগঞ্জ করোনা হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে উঠেছে। রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যূ হওয়া এক ব্যবসায়ীর লাশ অনেকটা অর্ধঢাকা অবস্থায় বেওয়ারিশ লাশের মতোই পড়েছিল জরুরি বিভাগের বাইরে। মৃতের স্বজনেরা লাশ ঢাকতে একটি চাদর চেয়েও পাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।
‘ওরা ১১জন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা এসে লাশটি সৎকারের জন্য নিয়ে যায়। তবে লাশ নেওয়ার জন্য একটি লাশবাহী ব্যাগ চেয়েও পাননি এই সংগঠনের সদস্যরা।
সমর কুমার সাহা (৫৫) নামের ওই ব্যবসায়ী গত ১ জুলাই থেকে হাসপাতালের ২২নং ওয়ার্ডের ২০ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
জানা গেছে, শহরের আমলাপাড়া এলাকার ভাড়াটিয়া সমর কুমার পেশায় একজন হোসিয়ারী ব্যবসায়ী। সন্তানহীন সমর কুমারের দেখভাল করতেন তার ভাগ্নে অরবিন্দ সাহা। গত ১ জুলাই বিকেলে করোনা উপসর্গ নিয়ে নগরীর খানপুর ৩শ শয্যা বিশিষ্ট (করোনা হাসপাতাল) হাসপাতালে ভর্তি হন সমর কুমার সাহা। ২জুলাই তার নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে করোনা পজেটিভ ধরা পরে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জুলাই রাত আড়াইটায় তার মৃত্যূ হয়।
সমর কুমার সাহার ভাগ্নে অরবিন্দ সাহা বলেন, মামার মৃত্যুর খবর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার মোবাইল ফোনে জানালে আমি সাথে সাথেই সেখানে যাই। উনি হাসপাতালের ২য় তলার ২২নং ওয়ার্ডের ২০নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে গিয়ে দেখি ওয়ার্ডের বাইরে স্ট্রেচারের উপর আমার লাশ রেখে দেওয়া হয়েছে। এ সময় মৃত্যুর কারণ ও শেষ অবস্থা জানতে চাইলে ওয়ার্ডের ডাক্তার বা নার্স কেউই কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি লাশ ঢেকে রাখার জন্য একটি সাদা চাদর চেয়েও পাইনি। আমার একার পক্ষে লাশ নামানো সম্ভব নয় জানিয়ে সাহায্যের জন্য বললে একজন লোককে সাহায্যের জন্য দেওয়া হয় যিনি নিজেও পক্ষাঘাতে আক্রান্ত।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ওরা ১১ জন’ এর সমন্বয়ক রিপন ভাওয়াল দেশ রূপান্তরকে জানান, আমরা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে এসে দেখি করোনা রোগীর লাশ বেওয়ারিশের মত পরে আছে। জরুরী বিভাগে থাকা একজনকে লাশের ব্যাগ চাইলে তিনি বললেন, হাসপাতাল থেকে ব্যাগ দেওয়া হয় না। আমরা অনেক অনুরোধ করে ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, লাশটি জীবানুমক্ত করার ব্যবস্থা বা কোন জায়গা দেওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলেও তারা নিরুত্তর ছিলেন।
রিপন ভাওয়াল ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এই হাসপাতালের জন্য, হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমান অর্ধ কোটি টাকার উপরে ব্যক্তিগতভাবে ব্যয় করছেন শুধুমাত্র চিকিৎসা সেবা থেকে যাতে মানুষ বঞ্চিত না হয়। সেখানে সকাল সাড়ে ৫টা বাজে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে একজন ছাড়া কাউকেই খুজে পেলাম না।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. গৌতম রায় দেশ রূপান্তরকে জানান, আমরা তো শুধু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা যারা দাহ করবে তাদেরকে জানাবো। বাকিটা তো তারা করবে। ব্যাগও তারাই নিয়ে আসবে। শুধু জানানোটা আমাদের দায়িত্ব। আর লাশ ফেলে রাখার ব্যাপারটি সঠিক নয়, কারণ মৃত ব্যক্তির আত্মীয়ের কাছে লাশ বুঝিয়ে দিয়ে মৃত্যূর প্রমাণ পত্র দেওয়া হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন