চাকরিজীবনে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। পদবি মাঠ কর্মী। রাজধানী ঢাকা শহরে এই কর্মচারীর ১৬টি ফ্ল্যাট-প্লট রয়েছে। এ েছাড়া সরকারি জমি বিভিন্ন ব্যক্তিকে দেওয়ার নাম করে কমপক্ষে ৪২ ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন ১৫ কোটি টাকা। এছাড়া বিলাসবহুল গাড়িও আছে তার। অভিযোগ পেয়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী মোস্তফা কামাল শাহীনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চিকিৎসক দম্পতি হোসনে আরা ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম। ২০১৪ সালে মিরপুরের রুপনগর দুয়ারী পাড়ার সেকশন ৮ এর ’খ’ ব্লকের ২নং প্লটটি বরাদ্দ পেতে ২৮ লাখ টাকা দিয়েছেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মিরপুর এলাকার দায়িত্বে থাকা মোস্তফা কামাল শাহীন ও তার সহযোগী জামাল মাস্টারকে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সংযোগের পাশাপাশি ১৫ লাখ টাকা খরচ করে ঘরও তুলেছিলেন তারা। কিন্তু গতবছর উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে যায় হোসনে আরা-আমিনুল দম্পতির স্বপ্ন।
একই অবস্থা এই এলাকার, মোহাম্মদ মনির, খোরশেদ আলম, ইসমাইল কাজী, আমিনুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, এস এম নেকবার আলী, আব্বাস আলী, শমসের আলী জিয়াসহ ৪২ জন মানুষের। কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে শাহীন গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।
৪২ জন ভুক্তভোগীর তালিকা সারাবাংলার হাতে রয়েছে। ভুক্তভোগীরা যে টাকা দিয়েছেন তার রশিদও সারাবাংলার কাছে সরবরাহ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টাকা নেওয়ার দীর্ঘদিনেও তারা প্লট না পেয়ে শাহীনের দ্বারস্থ হয়েছেন বহুবার। শাহীন প্রত্যেকবারই তাদের বলেছেন, আপনারা প্লট পাবেন। কিন্তু গত বছর উচ্ছেদের পর সেই স্বপ্নও ভেঙে যায় সবার। এরপর শাহীনের কাছে গেলে শাহীন উল্টাপাল্টা কথা বলতে থাকেন। টাকা ফেরত চাইলে শাহীন বলেছেন, কিসের টাকা। আপনারা কেউ টাকা পাবেন না।
ভুক্তভোগীদের দাবি, প্লট দেওয়ার কথা বলে শাহীন টাকা নিয়েছে। এখন সেই প্লট দিতে না পারলে দ্বিগুণ ও তিনগুণ হারে টাকা ফেরত দিতে হবে। শাহীন তো সামান্য কর্মচারী। সে একা এই কাজ করতে পারে না। তার পেছনে আরও কারা আছে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মিরপুরের দুয়ারী পাড়ায় ১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকে তিন নম্বর সড়কে একটি প্লট, একই এলাকায় ৪০ নম্বর সড়কে ১২ নম্বর প্লট, কুষ্টিয়া হাউজিং এস্টেটের ডি ব্লকে ২০ নম্বর সড়কের ১/১ প্লট, কক্সবাজার হাউজিং স্টেটের চার নম্বর ভবনে একটি ফ্ল্যাট, তার আপন ভাই আরিফ হোসেনের নামে আট নম্বর সেকশনে ১৬ নম্বর সড়কের ৯ নং প্লটসহ নামে বেনামে ১৬টি প্লট ও ফ্ল্যাটের তথ্যও রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, শুধু ঢাকাতেই নয় বাড়ি-গাড়ি নয় বরং কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে দুই কোটি খরচ করে একটি ডুপ্লেক্স বাড়িও বানিয়েছেন শাহীন। একটি প্রিমিয়ার প্রাডো গাড়িও রয়েছে তার।
এ সব বিষয়ে জানতে মোস্তফা কামাল শাহীনের নম্বরে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার নিকটাত্মীয় শাহিনের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। প্রাথমিক তদন্তে তার বিরুদ্ধে দূর্নীতির সত্যতাও পেয়েছে দুদক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক (এডি) সাইফুজ্জামান নন্দন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গণপূর্তের মাঠ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল শাহীনের নামে অভিযোগ তদন্ত শুরুর পর জানতে পারি তাদের নামে ঢাকা-১ এ তদন্ত চলমান রয়েছে। এরপর আমি তদন্ত বন্ধ করে দেই। কারণ একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এক জায়গায় তদন্ত হয়।’ এখন সেখানে খোঁজ বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানান সাইফুজ্জামান নন্দন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের ঢাকা-১ এ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহীনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
এদিকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফাইল তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তবে ফাইল তলবের বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সারাবাংলা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন