বগুড়ার সোনাতলায় মরিচ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামকে (৫০) শ্বাসরোধে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন গৃহবধূ রেহেনা বেগম, তার পরকীয়া প্রেমিক মহিদুল ইসলাম, ছেলে জসিমসহ আরও এক আসামি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আছমা মাহমুদ তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি গ্রহণ করেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সোনাতলা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদ হোসেন মন্ডল। তিনি বলেন, গতকাল শনিবার দুপুরে আসামিদের আদালতে হাজির করলে তারা হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
আদালতে পৃথকভাবে জবানবন্দি প্রদান করেছেন নিহত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রেহেনা খাতুন (৩৭), তার পরকীয়া প্রেমিক একই গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মহিদুল ইসলাম (৪৭), ছেলে জসিম (১৮) ও ভাগ্নে তেকানিচুকাইনগর গ্রামের করিম আকন্দের ছেলে শাকিলকে (২১)।
জবানবন্দিতে রেহেনা বলেন,পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধতেই রফিকুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। আর এ কাজে তিনি প্রেমিক মহিদুল ইসলাম, নিজের ছেলে জসিম এবং বোনের ছেলে শাকিলকে ব্যবহার করেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার নিখোঁজের ১১ মাস পর মরিচ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে নয়াপাড়া পুলের ভাটি নামক স্থানে রেল সড়ক সংলগ্ন ধানের জমি খুঁড়ে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
যেভাবে ঘটে হত্যার ঘটনা
গত বছরের ১৪ জুন হাট থেকে মরিচ বিক্রি করে রাতে বাড়ি ফেরে রফিকুল ইসলাম। পরিকল্পনা মতো খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে রাতে খেতে দেয় স্ত্রী রেহেনা বেগম। এরপর রফিকুল খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লে স্ত্রী রেহেনা বেগম, তার বোনের ছেলে শাকিল হোসেন, প্রেমিক মহিদুল ইসলাম ও তা ছেলে জসিম মিলে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। লেখাপড়া নিয়ে বকা খাওয়ায় জসিম বাবার ওপর বিরক্ত ছিল। সে সুযোগ নিয়েই মা তাকে নিজের দলে নেয়।
এরপর গভীর রাতে রফিকুল ইসলামের লাশ বস্তাবন্দী করে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে নয়াপাড়া পুলের ভাটি নামক স্থানে রেল সড়ক সংলগ্ন নিজের ধানের জমিতে নিয়ে গিয়ে পুঁতে রাখে পরকীয়া প্রেমিক মহিদুল ইসলাম, জসিম ও শাকিল।
পরের দিন অর্থাৎ গত ২০১৯ সালের ১৫ জুন মরিচ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম নিখোঁজ হিসেবে সোনাতলা থানায় জিডি করেন তার ভাই শফিকুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। কিন্তু কোনো কুল কিনারা করতে পারছিল না।
সম্প্রতি রেহেনা বেগমের বাড়িতে তার বোন ফতে বেগম বেড়াতে আসেন। এসময় তার ভ্যানিটি ব্যাগের মধ্যে নিখোঁজ রফিকুল ইসলামের মোবাইল দেখতে পায় তার ছোট ছেলে ওয়াসিম। বিষয়টি নিয়ে চাচাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বিষয়টি জানতে পেয়ে বোনের বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় বড় বোন ফতে বেগম। এতে আরও সন্দেহের সৃষ্টি হয় রফিকুল ইসলামের ছেলে ও তার চাচাদের মধ্যে। এরপর বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য ও থানা পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ প্রেমিক মহিদুল ইসলামকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুল ইসলাম হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে আটক মহিদুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে লাশ উদ্ধারে নামে পুলিশ।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা ধরে খোঁড়াখুড়ির পর দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে রফিকুলের পঁচে যাওয়া লাশের সন্ধান মেলে। এ সময় রাণীরপাড়াসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের হাজার হাজার লোক সেখানে জড়ো হন। লাশটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য সেটি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শিবগঞ্জ ও সোনাতলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কুদরত-ই খুদা শুভ জানান, রফিকুল ইসলামের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার জিডিটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হবে। বড় ভাই শফিকুল ইসলামকে বাদী করে মামলাটি দায়ের করা হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন মন্ডল জানান, আদালতে জবানবন্দি প্রদানের পর আসামিদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
রফিকুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয় যেখান থেকে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন