হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অনুমতি না নিয়ে জামিনে থাকা সাবেক মন্ত্রী এম মোরশেদ খান দেশ ছেড়েছেন। এভাবে তার বিদেশ যাওয়াকে গর্হিত অপরাধ বলে মনে করছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
জাগো নিউজকে তিনি বলেছেন, এভাবে বিদেশ চলে যাওয়া সন্দেহের উদ্রেক করে। তাছাড়া আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চ খোলার পর আদালতের নজরে আনা হবে। তিনি বলেন, আমার জানা মতে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেননি কোনো আদালতে।
পুরো একটি প্লেন ভাড়া করে মোরশেদ খানের এভাবে বিদেশ যাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে যাওয়া সুপ্রিমকোর্টের অপর আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে স্বাভাবিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ। এর মধ্যেই দেশ ছাড়লেন বিএনপি নেতা এম মোরশেদ খান। তিনি বলেন, যদি কোর্টের অনুমতি না নিয়ে থাকেন তাহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যক্তিগত বিমান দিয়ে উনাকে বিদেশ পাড়ি দেওয়ার অনুমতি দিল কী করে?
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, এম মোরশেদ খান এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের একটি মামলা আপিল বিভাগে পেন্ডিং। যে মামলায় তাদের সাজা দিয়েছিল বিশেষ আদালত। হাইকোর্ট এ মামলায় খালাস দিলে দুর্নীতি দমন কমিশন আপিল করে। আপিলে লিভ গ্র্যান্ট হয়। এখন মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
তিনি বলেন, এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের একটি মামলা পেন্ডিং। যে মামলায় হাইকোর্ট তাকে আদেশ দিয়েছিলেন নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার জন্য। উনি নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন। জামিন নিয়ে আদালতকে অবহিত না করে বিদেশ যাওয়া গর্হিত অপরাধ। নিয়মিত আদালত খুললে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হবে।
শুক্রবার একটি বিদেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানির চার্টার্ড ফ্লাইটে (ভাড়া করা বিমান) করে দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন মোরশেদ খান ও তার স্ত্রী। ফ্লাইটে যাত্রী ছিলেন কেবল তারা দুই জনই।
এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জাগো নিউজকে বলেন, হয়তো তিনি আদালতের অনুমতি নিয়েছেন যেটা দুদক নাও জানতে পারেন। আবার হয়তো তিনি অসুস্থ থাকতে পারেন, তাই বিদেশে চিকিৎসার জন্য গেছেন।
মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার ভিতরে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন। যেখানে দেশের পরিবহন সেক্টর বন্ধ এবং বিমান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যদি ইংল্যান্ডে একটি বিমানের ফ্লাইট যায় সেখানে তো দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। তিনি (সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান) যখন ব্যক্তিগত বিমানের অনুমতি নিতে গেলেন তখন কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উনার কাগজপত্র দেখেনি। তারা কি খোঁজ-খবর নেননি ওনার বিদেশে যাওয়ার ভিসা হয়েছে কি-না। তিনি যদি কোর্টের অনুমতি না নিয়ে থাকেন তাহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যক্তিগত বিমান দিয়ে উনাকে বিদেশ পাড়ি দেওয়ার অনুমতি দিল কী করে? আবার আদালত অবমানার অভিযোগও আনতে পারে।
মোরশেদ খানের ব্যক্তিগত সহকারী সমীর জানান, মোরশেদ খানের বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা আছে। এজন্য চেকআপ করাতে লন্ডনে গেছেন। তাদের ছেলে সেখানে বর্তমানে অবস্থান করছেন।
মোরশেদ দম্পতি ও তার ছেলের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর রমনা থানায় মামলা দায়ের করে দুদক। মামলার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ৪টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে দেশের বাইরে ৩২১ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ তদন্তে মোরশেদ খানের ছেলে ফয়সাল খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তলব করা হয়।
মোরশেদ খান ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। এছাড়াও তিনি দেশের একজন ব্যবসায়ী। সিটিসেল, প্যাসিফিক মোটরস, আরব বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে তার বিনিয়োগ ও সম্পত্তি রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন