ঘূর্ণিঝড়ে যতটা না ক্ষতি হয়েছে বাঁধ ভেঙে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় মানুষের। একটি ঝড়ের রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আঘাত হানে আরেকটি ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস। এতে নষ্ট হয়ে যায় তিলে তিলে গড়া সম্পদ। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে বাঁধ ভেঙে উপকূলের বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশাশুনির প্রতাপনগরের মানুষ জোয়ার-ভাটার মধ্যে বাস করছে। এজন্যই আবারও টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বাঁধ ভেঙে জনপদ প্লাবিত
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের নেববুনিয়া, বুড়িগোয়ালীনির দাতিনাখালি, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ঝাপা, বন্যতলা, কামালকাটি, কুটিকাটা প্রতাপনগর ইউনিয়নের দিঘলারাইট, কুড়িকাহুনিয়া, সুভদ্রাখালি, হিজলিয়া কুলা, শ্রীউলা ইউনিয়নের মাড়িয়ালা ও খুলনার কয়রা এলাকার পানি উন্নয়ন বেড়িবাঁধের কোথাও ২ কিলোমিটার কোথাও ৫ কিলোমিটার ভেঙে নদীর পানি প্রবেশ করছে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা। এসব অঞ্চলের মানুষের ত্রাণ নয় বাঁধ চায়। কিছুদিন পরপর নদীর বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়ে সব কিছু হারাতে হচ্ছে।
স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত
শ্রীউলা ইউনিয়নের মাড়িয়ালা এলাকার মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘এই এলাকার বসবাস করার মতো নেই। কিছুদিন পরপর বেড়িবাঁধ ভেঙে সব নিয়ে চলে যায়। খেটেখুটে কিছু সঞ্চয় করি সেগুলো নতুন কোনও ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কিছুই রেখে যায় না। আমরা সরকারের কাছে ত্রাণ চাই না। আমাদের কোনও কিছু দিতে হবে না। টেকসই বাঁধ নির্মাণ করুন, তাতেই আমরা খুশি।’
বুড়িগোয়ালিনী এলাকার ছালমা বিবি বলেন, ‘এবার ঈদে আমাদের বেদনার। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি টেকসই বাঁধ নির্মাণ করে দেওয়া হোক।’
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব করিব বিন আনোয়ার উকূলের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গেলে গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল টেকসই বাঁধ নির্মাণ করে দেওয়া দাবি জানান।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘আম্পানে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকা ও খুলনার কয়রার বেড়িবাঁধগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক জায়গায় মেরামত করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে খুব কষ্ট লাগলো মানুষ সব পানির মধ্যে বসবার করছে। ঝড়ের আগে আমরা কাজ শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে কাজ শুরু করতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষের কাছে শুনেছি তারা ত্রাণ চান না, টেকসই বেড়িবাঁধ চান। আমরাও তাদের টেকসই বাঁধের আশ্বাস দিয়েছি। আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত খুব খারাপ স্থানগুলো চিহ্নিত করে ছোট ছোট প্রজেক্ট নিয়ে বাঁধগুলো সুউচ্চ করে নির্মাণ করা হবে। ছোটখাটো ভাঙনগুলো আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মেরামত করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপকূলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ডেলটা প্ল্যান ঘোষণা করেছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে এই এলাকার জন্য এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। উপকূলের জন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হবে। ঘূর্ণিঝড়ের আগে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বাঁধ মেরামতের কাজ করেছি। কিন্তু জলোচ্ছ্বাস হলে তাতে করার কিছু থাকে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন