গ্রামে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ঢাকাবাসী। বিষয়টি অবাস্তব মনে হলেও তাই ঘটছে। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে যারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামে গেছেন, যাচ্ছেন তারাই সংক্রমণের ঝুঁকি বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি। শুরুতে সংক্রমণ ঠেকাতে ঈদে ঢাকা থেকে গ্রামে যাওয়া কিংবা গ্রাম থেকে ঢাকায় আসাকে নিরুৎসাহিত করা হলেও গত দুদিনে চিত্র বদলে গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত পরিবহনে ঢাকার বাইরে যাওয়ার অনুমতি মিলেছে। এই সুযোগে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ।
প্রতিবারই ঈদের আগে গ্রামে ফেরে মানুষ। রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, ফেরি ঘাটে লাখো মানুষের ভিড় চোখে পড়ে। এবার রেল ও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় স্টেশনগুলোতে সেই চিত্র চোখে পড়েনি। তবে বিকল্প হিসেবে পায়ে হেঁটে বিপুল সংখ্যক লোকের ঢাকা ছাড়ার ছবি প্রতিনিয়তই সামনে আসছে। মানুষকে কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। কিছুতেই বারণ শুনছেন তারা। যে করেই হোক বাড়ি যেতে পথে নেমেছেন কর্মজীবী মানুষেরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা থেকে গ্রামে যাওয়া এসব মানুষের কেউ যে করোনার জীবাণু শরীরে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন না, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তারা গ্রামে গেলে মানুষের সাথে মিশবেন। সেই থেকে ভাইরাসটির সংক্রমণ বাড়ার ভয় আছে গ্রামে। তাই তাদের পরামর্শ গ্রামে গেলেও তারা যেন নিজ নিজ বাড়িতে থাকেন। এড়িয়ে চলেন জনসমাগম।
চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া কোভিড–১৯ বা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশে দ্রুতই বাড়ছে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরীক্ষার বিপরীতে আক্রান্তের হারও ঊর্ধ্বমুখী। আর ক্রমেই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাটাও। শনাক্ত যেভাবে বাড়েছে তাতে পরিস্থিতি খারাপের শঙ্কা জাগাচ্ছে। গত চারদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। নতুন পরীক্ষাও হয়েছে সর্বোচ্চ সংখ্যক।
এই পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎই খুলে দেওয়া হয় প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ ব্যক্তি গাড়ি। এর ফলে রাজধানী ছেড়ে ঈদ উদযাপন করতে গ্রামে ছুঁটছে সাধারণ মানুষ। অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি সিএনজি, ট্যাম্পু, অটোরিকশা, নছিমনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বাড়ি ফিরছে। তবে পাবলিক পরিবহণ বা বাস চলাচল এখনও বন্ধ রয়েছে।
আট বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শক দল এর আগে সরকারকে একটি পূর্বাভাস দিয়ে বলেছিলেন, ‘১৬ থেকে ১৮ মের মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণের পর্যায় শুরু হবে। চলবে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত। ঈদের পর সংক্রমণ কোনো দিন বাড়বে আবার কোনো দিন কমবে।’সেই অবস্থা এখন চলছে। তবে প্রবণতা কমার দিকে থাকবে বলেও মত দিয়েছিল বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টগুলো ঘুরে দেখা গেছে- ঢাকা ছাড়তে গ্রামমুখী মানুষ গাবতলী বাস টার্মিনালে আসছে। সেখান থেকে লেগুনা কিংবা সিএনজি চালিত অটোরিকশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছাচ্ছে। সেখান থেকে ফেরি পার হয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে। একই দৃশ্য রাজধানী থেকে বের হওয়ার আরেকটি পথ যাত্রাবাড়ীতেও।
৮ মার্চ দেশে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ার পর সাত দফায় ৩০মে পর্যন্ত ছুটি বর্ধিত করা হয়েছে। একইদিন পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়কে বাস কিংবা পাবলিক পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
গাদাগাদি করে ছোট ছোট পরিবহনে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। সামাজিক দূরত্ব কিংবা কোন ধরণের স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ। ফেরিতেও একসঙ্গে গাদাগাদি করে পার হচ্ছে। এতে করোনার ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে বলে মত চিকিৎসকদের। দলবেধে মানুষ ঢাকা ছাড়লেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা দিতে দেখা যায়নি। তাছাড়া চেকপোস্টগুলোতেও কমানো হয়েছে সদস্য সংখ্যা।
এদিকে গত সপ্তাহের শুরুতে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে এবং ঈদের ছুঁটি কাটাতে ঢাকার বাইরে কাউকে যেতে কিংবা ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিলো না। মঙ্গলবার পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা থেকে কাউকে বের হতে কিংবা বাইরে থেকে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কেউ বের হবার চেষ্টা করলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর আগে ডিএমপির পক্ষ থেকেও কড়া হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
তারপরও অনেকে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে ঈদের আগে বাড়ি ফিরতে চেষ্টা করেন। তবে আমিনবাজার এবং যাত্রাবাড়িতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে গিয়ে তা দমন করে। জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া কাউকে ঢাকায় ঢুকতে কিংবা বের হতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু তারপরও অনেকে পায়ে হেটে বাড়ির পথে রওনা হয়।
তবে সেই অবস্থা অনেকটা শিথিল করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, ঈদে বাড়ি ফিরতে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসসহ ব্যক্তিগত যানবাহনে আসা-যাওয়া করা যাবে। কিন্তু পাবলিক পরিবহন চলবে না। এরই মধ্যে ঢাকার দুই প্রবেশ পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। ঈদের দুদিন বাকি থাকতে হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
জানা গেছে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় রাজধানীর গাবতলী এবং যাত্রাবাড়ী এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। এরই মধ্যে গাবতলী ও যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের চেকপোস্ট 'ইন' ও 'আউট' তুলে নেওয়া হয়েছে।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন