করোনাভাইরাসের বিস্তার সরকার ঘোষিত ছুটির মধ্যে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য সংসদ টিভিতে পাঠদান শুরু হয়েছে। 'ঘরে বসে শিখি' শিরোনামে এই পাঠদান কার্যক্রমে অজস্র ভুল বানান, উচ্চারণগত ত্রুটিসহ শিক্ষকদের দুর্বল উপস্থাপনা দেখা গেছে।
করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটি ১১ এপ্রিলের পরিবর্তে ১৪ এপ্রিল করায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটিও বেড়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের নির্ভর হতে হচ্ছে টিভি পাঠদানের উপর।
সংসদ টিভিতে চলছে মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের বিষয়ভিত্তিক ক্লাসগুলো। প্রাক প্রাথমিক থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের পরীক্ষামূলক সম্প্রচার মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে।
সংসদ টিভিতে দেখা গেছে, দুপুর দুইটা থেকে শুরু হয়ে পাঠদান শেষ হয়েছে বিকাল চারটায়। প্রতি ক্লাসে নির্ধারিত সময় ছিলো ২০ মিনিট করে। কিন্তু পাঠদানে আসা শিক্ষকদের উচ্চারণগত ত্রুটির বিষয়টি বেশ শ্রুতিকটু পাশাপাশি টিভি স্ক্রিনে দেখানো বাক্যগুলোর বিভিন্ন শব্দের ভুল বানানও লক্ষ্য করা গেছে।
তৃতীয় শ্রেণীর প্রাথমিক বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদানের সময় টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে ওঠা 'বৈশিষ্ট্য' বানানটির য-ফলা ছিল না। প্রতিবার একই ভুল বানান পর্দায় ভেসে উঠেছে। এমনকি বাড়ির কাজও দেয়া হয়েছে সেই ভুল বানানে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালক ফসিউল্লাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'ভুল বানানের বিষয়টি আমাদেরও চোখে পড়েছে। আর আর উচ্চারণগত সমস্যাগুলো আমরা দেখছি। যেহেতু পরীক্ষামূলক সম্প্রচার হচ্ছে, আগামীতে এই ত্রুটিগুলো সংশোধনের চেষ্টা করব।'
এদিকে দেখা গেছে, প্রায় প্রত্যেক শিক্ষকই ক্লাস নেওয়ার সময় টিভির পর্দার মাঝখানে চলে এসেছেন। ফলে ঢাকা পড়ে গেছে পর্দার লেখাগুলো। টেলিভিশনের পর্দার মাঝখানে এভাবে এসে পাঠদান অবশ্যই বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে সতর্ক করেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু তারেক ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'শিক্ষকরা যেহেতু টিভিতে পাঠদান করছেন তার মানে টিভির পর্দাটা হচ্ছে বোর্ডের বিকল্প। তাই বোর্ডে বা পর্দায় যে বিষয়টি লেখা থাকবে সেটি শিক্ষক মুখেও বলবেন। তাহলে দেখা এবং শোনা দুটোরই ব্যবহারেই শিক্ষার্থীরা শিখতে পারবে। এটাকে বলে চক এন্ড টক। অর্থাৎ কলম এবং কথা দুটি পাশাপাশি চলবে।
তাই টিভির পর্দা হোক কিংবা বোর্ড হোক শিক্ষককে সঠিক ভাবে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু সেখানে টিভির পর্দাজুড়ে শিক্ষকের অবস্থান থাকলে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে। ফলে এটা কোন ভাবেই বিজ্ঞানসম্মত নয়।'
জানা গেছে, সংসদ টিভিতে প্রাথমিকের পাঠদানে প্রথম প্রতিটি ক্লাস ২০ মিনিট করে সপ্তাহে তিনদিন সম্প্রচার করা হবে। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণভাবে শিক্ষাদান শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না বলেও মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
গণসাক্ষরতা অভিযানের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে এবং মাধ্যমিকের পরে প্রাথমিকের টিভি পাঠদান শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের আরো দক্ষ হতে হবে এবং এই প্রক্রিয়াটা আরো শিক্ষার্থী বান্ধব হতে হবে।'
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন