দূরদেশ বৃটেন ২১ দিনের লকডাউনে। চব্বিশ ঘণ্টার সময় চক্রে মোদিও ঘোষণা করলেন লকডাউন। বাংলাদেশে কি হতে যাচ্ছে? এ নিয়ে এন্তার অলোচনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে কি থাকবে? খোলাশা হলো সবকিছুই। ধীরে ধীরে সবই নিয়ন্ত্রিত হতে লাগল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে গোটা দেশ। জেলায় জেলায় ‘লকডাউন’। কেয়ারেন্টিনে গোটা জাতি।
সাংবাদিকতা নতুন চ্যালেঞ্জে? দেশের বিভিন্নস্থান খবর আসতে লাগল হকাররা কাগজ নেবে না। তাহলে পত্রিকা প্রকাশের যৌক্তিকতা কি? যা হোক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার নামই নাকি সভ্যতা। সুতরাং, যশ্মিন দেশে যাদাচার। অনলাইন-ই হয়তো আগামী দিনে সংবাদকর্মীদের রুটি-রুজি মাধ্যম হতে যাচ্ছে। কখনও এই শহরে সাইকেল নিয়ে পথে নামব ভাবিনি। তাই করতে হলো। গত্যন্তর না দেখে ভাগ্নের সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রাস্তায়। টিকাটুলির পথঘাট নীরবতায় ছেয়ে আছে। গুলিস্তান পাড় হতে গিয়ে এক অন্যরকম দৃশ্য চোখে পড়লো। জিপিওর মোড়ে একটি মাইক্রোবাস থামতেই গোলাপশাহ মাজারের দিক থেকে ছুটে আসছে ছিন্নমূল মানুষের দল। ওদের সকলের হাতে পলিথিন। সকলেই গাড়িটি ঘিরে ধরেছে।
একরকম আতঙ্ক আমাকে গ্রাস করতে লাগল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখলাম গাড়ি থেকে কিছু খাবার প্যাকেট বিলি করা হচ্ছে। মোবাইল ক্যামেরা বের করতেই ছবিটি মিলিয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে আলোকচিত্রী জীবন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করি আর কোথায় এমন মানুষের ভিড় পাব? বুয়েটের কথা বলতেই সাইকেল নিয়ে গেলাম পলাশীর মোড়ে। প্যাডেল থামাতেই সাইকেল ঘিরে জটলা একদল ছিন্নমূল মানুষের। কাছাকাছি দাঁড়ানো তামান্না, মোবারক, সাদিয়া। সকলেরই বয়স আট থেকে দশের মধ্যে। ময়লা আর ক্লাšন্ত মুখ নিয়ে তামান্নার জিজ্ঞাসা, ভাই আমগোরে আফনে কিছু দিবেন? অসহায় মনে হলো নিজেকে? পেশার কথা বলতেই ফুটপাতে থাকা নানান বয়সি ছেলে বুড়ো তাদের কষ্টের কথা জানাতে এগিয়ে এল। সকলকে দূরে থেকে কথা বলতে হবে, করোনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে কথা বলি তাদের সঙ্গে।
আশির্ধ্বো লিবাসা খাতুন। থাকেন পলাশী এলাকাতেই। দুপুরে আজ খেতে পাননি। ভিক্ষা করেই তার বেশিরভাগ দিন খাবার জুটে। নাজমা আক্তার জানালেন, বাসায় ছুটা বুয়ার কাজ করতাম। অহন না কইর্যা দিছে। কবে থাইকা কাম করতে পারমু কিছুই জানিনা। চোহে আন্দার দ্যাখতাছি। স্বামী নূর আলম রিকশা চালায়। হেরও কামাই কইমা গ্যাছে। চাইরডা পোলাপান। আমরা কি করমু? আমডার কথা তো কেউ ভাবল না?
কাগজ কুড়িয়ে সংসার চালান ফাতেমা। বয়স পঁতাল্লিশের কোঠায়। স্বামী ফজলুল হক রিকশা চালান। লকডাউন কি না বুঝলেও এটকু বুঝতে পারেন সব বন্ধ। কি এক ব্যারাম আইসে দ্যাশে, তাই বললেন। কদিন এমনভাবে চলবে, এ নিয়েই দুঃশ্চিন্তা। একইরকমের চিত্র জানা গেল শেফালি (৪৫), রহিমা আক্তার (৩৫), আসিয়া (৪০) ও পান্নার (৪০) সঙ্গে কথা বলে।
কথা বলার সময়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি গাড়ি নিরবে পাশে এসে দাঁড়ায়। সংবাদকর্মীর পরিচয় দিতেই মনে করিয়ে দিলেন, জটলা করে দাঁড়ানো যাবে না। সহকর্মী জীবনকে ইশারা করতেই তার হোন্ডা স্টার্ট করে। আমরা পৌঁছে যাই পরবর্তী গন্তব্য হাইকোর্ট মাজারের গেটে। এখানে ছিন্নমূল মানুষের জটলা ছিল চোখে পড়ার মতো। কেই দাঁড়ালেই ভিড় করছে। দল বেঁধে ছুটে আসছে। সকলেই ভাবছে, এই বুঝি খাবার আসছে। তাদের চাওয়া একটাই, সরকার যেন তাদের কষ্ট আমলে নেয়। কাজ নেই, খাওয়াও নেই। কি করবে তারা?
ফুটনোট: সাইকেল নিয়ে ছুটি অন্য কোনো রিপোর্টেে খোঁজে। মন পড়ে থাকে ছিন্নমূল মানুষের উদ্বিগ্ন-হতাশ চেহারার দিকে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন