রামপালে সরকারিভাবে নির্মিত ঘরগুলোয় ৩ মাসেই ফাটল
৩ মাসেই ঘরের দেয়ালে দেয়ালে ফাটল । ছবি: যুগান্তর
বাগেরহাটের রামপালে ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের আওতায় অসহায়দের জন্য নির্মিত ২২টি সেমিপাকা ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
ঘরগুলোয় তিন মাসেই ফাটল ধরেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঘরের পিলারসহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। মেঝে ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ঘরে লাগানো নিম্নমানের কাঠ কোথাও কোথাও বেঁকে গেছে।
অথচ এই ঘর পেতে স্থানীয় অসহায়দের প্রত্যেকের খরচ হয়েছে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা।
উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের ছোট সন্ন্যাসী গ্রামের রমেশ মণ্ডলকে ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের আওতায় একটি সেমিপাকা ঘর বানিয়ে দেয়া হয়েছিল।
সেই ঘর পেতে তাকে পরিবহন বাবদ গুনতে হয়েছে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া মিস্ত্রি ও শ্রমিকদের খাবার বাবদ গুনতে হয়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।
আর সেই ঘর পাওয়ার তিন মাসের মাথাতেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ফাটল ধরেছে এর দেয়ালে দেয়ালে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রমেশ মণ্ডল জানান, তাকে দেয়া ঘরে লাগানো হয়েছে নিম্নমানের কাঠ। ইট ও বালি বাবদ গুনতে হয়েছে ১৫০০ টাকা।
একইভাবে উপজেলার হুড়কা ইউনিয়নের চাড়াখালী গ্রামের অসুস্থ আজাহার আলী শেখকে একটি ঘর করে দেয়া হয়েছে। ওই ঘরেও তাকে পরিবহন বাবদ গুনতে হয়েছে ৪০ হাজার টাকা।
আজাহারের স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন, ‘এই ঘর করতে তার পরিবহন বাবদ খরচ তার হয়েছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। আর সরকারিভাবে দেয়া সেই ঘরেই থাকতে ভয় লাগছে। ঘর করার সময় শুনেছিলাম আমাদের খরচ ফেরত দেয়া হবে। কিন্তু এখনও সেই টাকা ফেরত পাইনি। আমাদের মতো অসহায়দের এভাবে ঠকানো ঠিক নয়।’
উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নের সায়রাবাদ গ্রামের আকরাম শেখের স্ত্রী আফরোজা বেগমের বাড়িতে গেলে তিনি জানান, ৪০ হাজার টাকা খরচ করে যে ঘর তিনি পেয়েছেন, সেগুলোর কাঠ এই তিন মাসেই পচা শুরু করেছে। যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে।’
এভাবে হুড়কা ইউনিয়নের ছিদামখালী গ্রামের অজয় মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার ঘরের ও বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে।
তিনি বলেন, ‘আমার এই ঘরের মালামাল পরিবহন, মিস্ত্রি ও শ্রমিকদের খাওয়া বাবদ খরচ হয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। সেগুলো তো পাইনি; বরং এখন এই নিম্নমানের ঘর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
জানা গেছে, ‘গ্রামীণ অবকাঠামো (টিআর) রক্ষণাবেক্ষণের বিশেষ কর্মসূচির আওতায় উপকূলীয় অঞ্চলের হতদরিদ্রদের মাঝে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ও জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে এসব ঘর বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে গৃহহীনদের অনেকেই এই ঘর পাননি। যারা পেয়েছে তাদের গুনতে হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা।’
এ ছাড়া এসব ঘর নির্মাণের অনেক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ঘরের চালে, দরজা, জানালায় ব্যবহার করা হয়েছে নিম্মমানের নির্মাণ সামগ্রী। পরিবহন ব্যয়ও উপকারভোগীদের বহন করতে হয়েছে। মেঝেতে বালির পরিবর্তে দেয়া হয়েছে মাটি। উপকারভোগীদের শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ করে তাদের পারিশ্রমিক দেয়া কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। উল্টো দু-বেলা আহার জোগাতে হয়েছে অসহায় এই পরিবারগুলোকে।
এদিকে মাত্র ৩ মাসেই এ সমস্থ ঘরে বড় বড় ফাটল দেখা দেয়ায় সঠিকভাবে প্রশাসনের তদারকি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ ব্যাপারে রামপাল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. নাহিদুজ্জামান বলেন, ‘মাত্র তিন মাসে ঘরে ফাটল ধরার কথা না। আমাকে কিছু ছবি দেন আমি দেখি। যাচাই বাছাই করে অনিয়মের বিষয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পাল বলেন, ‘যে সমস্থ ঘরে ফাটল ধরেছে, তারা আমার নিকট অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেউ পরিবহন খরচ হিসাবে টাকা নিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. মামুন উর রশিদ বলেন, ‘অনিয়মের বিষয়গুলো আমার জানা নাই। নির্দিষ্ট তথ্য পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন