যুবলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের পর তাদের বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে নানাভাবেই তথ্য সংগ্রহ করছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনে পাপিয়া বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করতেন। সেগুলোর তথ্যও সংগ্রহ করছে র্যাব। হোটেল কর্তৃপক্ষও র্যাবকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। পাঁচ তারকা এই হোটেলে মাসের পর মাস অবস্থান করে নানা অপকীর্তি চালিয়েছিলেন শামীমা। বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত পাপিয়া ওয়েস্টিনের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট’ ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে যে আয় করতেন, তা দিয়ে শুধু হোটেল বিলই দিতেন কোটির টাকার বেশি।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শামীমা নূর পাপিয়ার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে গেলে কেউই তথ্য দিতে রাজি হননি। সেখানে হোটেলের লবিতে অভ্যর্থনা কক্ষে যোগাযোগ করলে অপেক্ষা করতে বলা হয়। বেশ কিছুক্ষণ পর হোটেলের মার্কেটিং বিভাগের একজন নারী কর্মকর্তা আসেন। তার কাছে পাপিয়ার বিষয় জানতে চাইলে, তিনি কোনও উত্তর না দিয়ে হোটেলের মার্কেটিং কমিউনিকেশনের সহকারী পরিচালক সাদমান সালাউদ্দিনের একটি কার্ড দিয়ে তার সঙ্গে ফোনে অথবা ই-মেইলে যোগযোগ করতে বলেন। ওই ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি তথ্যের জন্য বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা চাইলে ওয়েস্টিন সব তথ্য দেবে। তবে মামলা তদন্তের দায়িত্ব এখনও আমরা পাইনি। মামলার তদন্তভার চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব র্যাবকে দেওয়া হলে আমরা হোটেল থেকে সব তথ্যই নেবো।’
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে ওই পাঁচতারকা হোটেল থেকে আমরা সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করছি। তারাও আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে।’
হোটেল ওয়েস্টিন
প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র্যাব-১ এর একটি দল। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন, পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। তারা অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, নানা অনৈতিক কাজ, জাল নোট সরবারহ, রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে জানায় র্যাব।
গ্রেফতারের পর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর দেওয়ার তথ্য অনুযায়ী ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে হোটেল ওয়েস্টিনে পাপিয়ার নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট এবং ফার্মগেট এলাকার দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে আরও ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩ টি ব্যাংক চেকবই, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করে র্যাব।
র্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাপিয়া-মতি সুমন দম্পতির সুনির্দিষ্ট কোনও পেশা নেই। ঢাকা ও নরসিংদীতে তাদের গাড়ির শো-রুম ও কার ওয়াশ সলিউশন সেন্টার থেকে বাৎসরিক আয় মাত্র ১৯ লাখ টাকা। প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমনের অনেক অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা ঢাকা ও নরসিংদী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা করে অঢেল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও তাদের আয়ের অরেকটি উৎস হলো- নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। ৭ নারীকে ব্যবহার করতো পাপিয়া। এছাড়াও হোটেল ওয়েস্টিনে সবসময় পাপিয়ার নামে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট বুক থাকতো। সর্বশেষ গত বছরের ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫৯ দিন ঢাকা ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইটে অবস্থান করে পাপিয়া ও তার সহযোগীরা। সেখানে আনুষাঙ্গিক খরচসহ সর্বমোট ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা নগদ পরিশোধ করে পাপিয়া।
রাজধানীর ফার্মগেটের ২৮ নং ইন্দিরা রোডের ‘রওশনস ডমিনো রিলিভো’ ভবনে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে পাপিয়া-মতি সুমনের। এছাড়াও নরসিংদী শহরে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদীর বাগদী এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লট রয়েছে। তাদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য রয়েছে কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি। এছাড়াও তেজগাঁও বিএফডিসি গেটের পাশে অংশীদারিত্বে পাপিয়ার ‘কার একচেঞ্জ’ নামে একটি গাড়ির শো-রুম রয়েছে। নরসিংদী জেলায় ‘কেএমসি কার ওয়াস অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও গ্রেফতার পাপিয়া-মতি সুমন দম্পতির দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামের এ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত থাকার তথ্যও রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন