মোট ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের চার মামলায় ক্রিসেন্ট গ্রুপের মালিক এম এ কাদেরের জামিন দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৫ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী হযরত আলী সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জামিনের শুনানির সময় আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘আসামি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ১৬ হাজার কর্মচারী তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। তিনি কারাগারে থাকলে এগুলো চলবে কেমন করে? তাছাড়া আমরা টাকা নিয়েছি, টাকা তো দিচ্ছি। তিনি অসুস্থ। জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না। এগুলো প্রতিষ্ঠান রেখে চলে যাবেন না। যে কোনো শর্তে তাঁর জামিন প্রার্থনা করছি।’
অপরদিকে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘আমদানি করবেন এমন কাগজ দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলেন আসামি। কিন্তু আমদানি করেননি, কিছু করেননি। বরং টাকাগুলো আত্মসাৎ করে বিদেশ পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। জামিন পেলে আসামি পলাতক হবেন। তাঁর জামিনের ঘোর বিরোধিতা করছি।'
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামির জামিন আবেদন মঞ্জুরের ওই আদেশ দেন।
আদালত সূত্র জানায়, মেসার্স ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের নামে রফতানি ঋণ সুবিধা গ্রহণ করে ৬৮ কোট ৩৪ লাখ ৯৫ হাজার ১২০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করা হয়। একইভাবে লেক্সকো লিমিটেডের নামে ৭৪ কোটি ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৯ টাকা, মেসার্স রূপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার লিমিটেডের নামে ৪৫৪ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮৪ টাকা ও মেসার্ম ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের নামে ৫০০ কোটি ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯৯ টাকা আত্মসাৎ এবং পরবর্তীকালে তা স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে পাচার করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান এমএ কাদের। গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়। প্রতিটি মামলায় এমএ কাদেরসহ ১৬ থেকে ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে পৃথক চার মামলায় ক্রিসেন্ট গ্রুপের মালিক এমএ কাদেরের মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর কয়েক দফায় আসামিপক্ষে জামিন আবেদন করা হলেও শুনানি শেষে আদালত তা নাকচ করেন। মামলাগুলো তদন্ত করছেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান।
এদিকে এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ‘৯১৯ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫) অনুযায়ী রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস লিটুল জাহান (মিরা) এবং অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম.এ. কাদের এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস সুলতানা বেগম (মনি) ও জনতা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ১৩ জন কর্মকর্তাকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার মডেল থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করে এনবিআর।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আসামিদের মধ্যে আছেন—রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটুল জাহান মিরা, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের চেয়ারম্যান এম এ কাদের এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতানা বেগম মনি।
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন