হাওর বাওড় ঘেরা সবুজ বাংলা ধন্য যে জন্য- হারিয়ে যাচ্ছে সেই কৃষক প্রকৃতির নিদারুণ বাস্তবতার জন্য। এক সময় হাওড় ঘেরা জনপদ ছিল কোলাহলপূর্ণ। কি বৈশাখ, কি শরৎ কিবা বর্ষায় সবসময়ে কর্ম সাধনে লিপ্ত থাকত কৃষক।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বর্ষায় উজান হতে বয়ে আসা মাত্রাতিরিক্ত পলিমাটি হাজার হাজার একর উর্বর ভূমিকে করেছে অনুর্বর, বন্ধুর, আগাছাপূর্ণ। পলির সাথে আগাছার বীজ আগমন বিশাল হাওরকে করেছে অরণ্য। এ যেন মিনি সুন্দরবন!
ভাবা যায় না কি সর্বনাশের কবলে হাওরের কৃষক। ধান চাষ সে তো সম্ভব নয় এ বন্ধুর ভূমিতে। নাই বিকল্প কর্মসংস্থান! ছুটছে মানুষ শহরে।
কি আর করা নিজের জমিটুকু চেনাই দুরূহ এ অরণ্যে। উপরন্তু জমি চাষযোগ্য না থাকায় বেচা কেনা দুরূহ। যেটুকু জমি আছে আবাদযোগ্য তাতে নেই সেচের পানি। যেটুকু ফসল পাকা হয়ে আসে তখনই শুরু হয় উজানের অসময়ের পানির স্রোতধারা। তলিয়ে নেই কৃষকের শেষ আশা।
আবার যেটুকু ফসল আনা হয় বাড়ির আঙ্গিনায় তাতে কাস্তে , নৌকা বা গাড়ির খরচ তারপর ধান প্রক্রিয়ার খরচ হিসাবকষা কৃষককে বোবা বানিয়ে দেয়। সাথে নেই ধানের দাম অথচ উৎপাদন খরচ লাগামহীন।
কৃষকের এই দুর্দশা বুকফাটা আর্তনাদ কখনও কেউ শুনেনি। সেই সুনামগঞ্জ থেকে কিশোরগঞ্জ হবিগঞ্জ নেত্রকোনা সর্বই এই নিদারুণ বাস্তবতা।
যে হাওরের ধানের গোলায় মজুত থাকত আগামী বছরের ব্যয় ভাবনা। এখন শূন্য গোলা। ব্যয় মেটাবে কিসে? কত বড় -ছোট কৃষককে দেখেছি চোখের জল মুছে মুছে সন্তান স্ত্রী নিয়ে শিকড়গড়া বাবা মায়ের ভিটে ছেড়ে শহরে চলে যেতে।
যা কখনও মানবতাকে সংহত করবে না বরং শহরমুখী হওয়ায় সামাজিক সমস্যা তীব্রতর হবে। মানুষ হবে শিকড়হীন। কাঙ্খিত দক্ষতা না থাকায় কৃষক শহরে বাস্তবতায় ধুঁকবে। তাই কৃষককে নিজ ভূমিতে ফেরাতে- কাল বিলম্ব না করে গ্রামে তথা হাওর জনপদে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি সময়ের দাবী।
সেই সাথে হাওরকেন্দ্রিক গবেষণা কেন্দ্র গড়ে সমস্যা চিহ্নিত করে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অতি জরুরী। মুজিববর্ষ হোক সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যেখানে কৃষকের বেঁচে থাকার স্বপ্ন জাগ্রত হবে সরকারের সঠিক পদক্ষেপে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন