প্রমত্তা তিস্তা নদীতে এখন হাঁটুপানি। পায়ে হেঁটেই পারাপার হচ্ছে দুই পাড়ের বাসিন্দারা। মাঝনদীতে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর-ডুবোচর। পানিপ্রবাহ না থাকায় নৌপথ প্রায় বন্ধের পথে। পানির অভাবে নৌঘাটগুলো নদীর পাড় থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। প্রতিদিনেই পানি কমতে থাকায় নাব্যতা সংকটে ঘাটগুলো সরিয়ে নিতে হচ্ছে। ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় তিস্তা নদী শুকিয়ে এখন আবাদি জমিতে রূপ নিয়েছে।
আজ বুধবার পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নে তিস্তা নদীর চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, পানিপ্রবাহ না থাকায় ও পলি জমে এক সময়ের খরস্রোতা তিস্তা নদী আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। পায়ে হেঁটেই তিস্তা পারি দিচ্ছে দুই পাড়ের বাসিন্দারা। তিস্তার বুকে জেগে ওঠা ধু ধু বালুচরে এখন সবুজের সমারোহ। শুরু হয়েছে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ। চরের পলি ও দো-আঁশ মাটিতে চাষাবাদ হচ্ছে পিঁয়াজ, রসুন, বাদাম, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা ও গমসহ নানা জাতের ফসল। কৃষকরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন ফসল পরিচর্যায়।
পায়ে হেঁটেই বেশির ভাগ নদী পাড়ি দিয়ে আসা ছাওলা ইউনিয়নের মরিয়ম বেগম বলেন, নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নৌকা ঠিকমতো চলতে পারে না। ঘাট অনেক দূরে। তিস্তাতে এখন কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও আরো কম। উলিপুর থেকে আসতে অল্প একটু নদী নৌকা দিয়ে পার হতে হয়। আর বাকি পথ হেঁটেই যাতায়াত করতে হচ্ছে।
গাবুড়ার চরের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, তিস্তা নদীতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বোরো চাষিরা বিপাকে রয়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বোরো চাষ কঠিন হয়ে পড়ে। তবে গত কয়েক বছর থেকে রবি শস্যের চাষাবাদ বাড়ছে।
স্থানীয় খেয়াঘাটের মাঝি মোন্তাজ আলী বলেন, প্রতিবছর এ সময় নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। নদীও ছোট হয়ে আসে। এতে যাতায়াতকারীদের পাশাপাশি আমরা যারা নৌকা চালাই তারও দুর্ভোগে পড়ি। এ সময় আয় প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে পীরগাছা উপজেলায় রবি শস্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া চরাঞ্চলে দুই হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে রবি শস্যের আবাদ হচ্ছে।
পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমুর রহমান বলেন, তিস্তা নদীতে শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ নেই বললেই চলে। এত দিন বেশির ভাগ চরের জমি পতিত ছিল। এখন সেই জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আসছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন