রেলপথে ফের সক্রিয় মাদক চোরাকারবারিরা। চট্টগ্রাম থেকে রেলপথে দেশের অন্যত্র পাঠানোর আগমুহূর্তে গত দুই মাসে অন্তত ১৩টি মাদকের চালান আটক করে কোতোয়ালি থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ। একইভাবে স্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত বছর বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক উদ্ধার করেছে রেলওয়ে থানা পুলিশ। পুলিশ বলছে, চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে করে ইয়াবার চালান যাচ্ছে এবং চট্টগ্রামে ঢুকছে গাঁজা ও ফেনসিডিল। মাদক পাচারের নিরাপদ রুট হয়ে উঠেছে এখন রেলপথ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ে ট্রেনে চড়তে পারলেই পুলিশের তল্লাশির ঝামেলায় আর পড়তে হয় না বহনকারীদের।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা জানান, ট্রেনে শুধু চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা যাচ্ছে তা নয়; ফেনসিডিল, গাঁজার ৮০ শতাংশ চালানই আসছে রেলপথে। সড়ক পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ির কারণে মাদক পাচারকারীরা ট্রেনকেই নিরাপদ হিসেবে বেছে নিয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ ট্রেন স্টেশনগুলোতে স্ক্যানার কিংবা আর্চওয়ে না থাকায় পাচারকারীরা নির্বিঘ্নে মাদকসহ নানা চোরাচালান নিয়ে গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। কথা হয় চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি মোস্তাফিজ ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে প্রতিদিন আন্তঃনগর, মেইল, ডেমু ও লোকালসহ ২১টি ট্রেন ছেড়ে যায়। সমপরিমাণ ট্রেন চট্টগ্রামে ঢুকে। এসব ট্রেনে প্রতিদিন অন্তত ৪০ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। সীমিত জনবল দিয়ে এতসংখ্যক রেলযাত্রীকে তল্লাশির আওতায় আনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ট্রেনে পণ্য পরিবহনের আড়ালে কোনো মাদকদ্রব্য বহন করা হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করাও কঠিন এবং সেজন্য রেলস্টেশনের প্রবেশপথে স্ক্যানার ও আর্চওয়ে বসানো জরুরি।’ সম্প্রতি ট্রেনের যাত্রী ও মালামাল তল্লাশির আওতায় আনতে স্ক্যানার ও আর্চওয়ে চেয়ে পূর্বাঞ্চল মহাব্যবস্থাপকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেয়া হয়েছে বলেও জানান ওসি। চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানা পুলিশ জানায়, গত বছর রেলস্টেশন এলাকা এবং ট্রেন থেকে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় ৩২টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় ৪৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ১২ হাজার ৯২৫ পিস ইয়াবা, ৪২ বোতল ফেনসিডিল ও ৮ কেজি গাঁজা।
কোতোয়ালি থানা পুলিশ বলছে, সড়কপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ির কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা ট্রেনকে নিরাপদ হিসেবে বেছে নিয়েছে। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে অন্তত ৯টি মাদকের চালান ধরা পড়েছে। যেগুলো ট্রেনে করে নিজ নিজ গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে গ্রেফতার ব্যক্তিরা পুলিশকে জানিয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর কোতোয়ালি থানা পুলিশের অভিযানে নতুন রেলস্টেশনে প্রবেশমুখে গ্রেফতার করা হয় অজিফা বেগম (৩৫) নামে এক নারীকে। পরে তার কাছে থাকা স্কুলব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয় ৭ হাজার ৯৫০ পিস ইয়াবা। গ্রেফতার অজিফা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, ‘কক্সবাজার থেকে এসব ইয়াবা কমদামে সংগ্রহ করে গাজীপুরের মো. আবীর (৩৫) নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রির জন্য ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। ট্রেনে উঠার আগে স্টেশনের সামনে গ্রেফতার হয় অজিফা।
কোতোয়ালি থানার ওসি মহসীন যুগান্তরকে বলেন, সম্প্রতি ইয়াবাসহ গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানিয়েছে- ট্রেনেই তাদের গন্তব্যে যাওয়ার কথা ছিল। অনেক বহনকারী বলেছে, ট্রেনে উঠতে পারলেই তাদের আর তল্লাশি নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন ঝামেলাও নেই। অন্যদিকে সড়ক পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ির কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা ট্রেনকে নিরাপদ হিসেবে বেছে নিয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন