দেশের চাকরির বাজারে রাজনৈতিক পরিচিতিকে বড় করে না দেখে ব্যক্তির যোগ্যতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানী গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংলাপে এ মন্তব্য করেন রেহমান সোবহান। ‘প্রান্তিক যুব সমাজের কর্মসংস্থানে সরকারি পরিষেবার ভূমিকা’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে সিপিডি এবং দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন-বাংলাদেশ।
সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপত্বিতে সংলাপে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘প্রবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে আমরা যে সামষ্টিক অর্থনীতির কথা বলি, সেটার বদলে আমরা কত কর্মসংস্থান করতে পারলাম, এটাকে লক্ষ্য রেখে সামষ্টিক অর্থনৈতিক বা উন্নয়নের ধারাকে সামনে আনতে হবে। বাংলাদেশে বাধ্যতামূলকভাবে ও আইনগতভাবে যুব কর্মসংস্থান প্রকল্প নেওয়া যায় কি না, যেটা বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম ও বাজারের ভিত্তিতে হবে।’
সামগ্রিক বিষয় রাষ্ট্রের ভূমিকার কথা তুলে ধরে সিপিডির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সব কিছুর শেষে রাষ্ট্রের একটা ভূমিকা আছে। রাষ্ট্রের এই ভূমিকা পালন করতে হলে রাষ্ট্রকে একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতির মধ্যে রাখতে হবে। যে প্রতিযোগিতার ভেতরে মানুষ তার মেধা, উদ্যোগ, শ্রম স্বীকৃতি পাবে। তার রাজনৈতিক পরিচয়টি এখানে বড় হবে না, অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে ব্যক্তির যোগ্যতা। এটার ফলে রাষ্ট্র এবং সরকার অনেক বেশি উপকৃতি হবে।’
যুবকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান না পেয়ে ইয়াবা ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছেন বলেও মনে করেন রেহমান সোবহান।
সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। গবেষণা প্রবন্ধ তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন করণীয় উল্লেখ করেন। তিনি জানান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের অন্যান্য সামাজিক উদ্যোগের পাশাপাশি বাসস্থান সংক্রান্ত বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। এ ক্ষেত্রে বাসস্থানের বিষয়টি উন্মুক্ত বা অনিষ্পন্ন না রেখে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামর্থ্যের বিবেচনায় তাদের সুবিধাজন এলাকায় বাসস্থানের ব্যবসা করা জরুরি। এসব জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার সংকট নিরসনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উল্লেখযোগ্য কাজ করছে। সরকারের উচিত হবে আরও কার্যকরভাবে প্রান্তিক যুব জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য এসব সংস্থাকে ব্যবহার করা, বিশেষত বাসস্থান ও অন্যান্য পরিষেবার সমস্যা সমাধানের জন্য।
কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ ও সরকারি পরিষেবার কার্যকারিতায় করণীয় প্রসঙ্গে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, সরকার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে যে শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে, সেখানে প্রান্তিক যুবগোষ্ঠীর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজের সুযোগ রাখা যেতে পারে। দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাধারি শিল্পের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো সুবিধাসহ বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তুললে প্রান্তিক যুব জনগোষ্ঠী নিজেদের এলাকায় কাজের সুযোগ পেতে পারে।
সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক আরও জানান, বিশ্বের অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রচলিত পন্থায় কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পাশাপাশি বিকল্প পন্থায় দক্ষতা সৃষ্টি ও কর্মসংস্থানের কথা বিবেচনায় নেওয়া যায়। এসব প্রান্তিক যুব গোষ্ঠীর দক্ষতা ও নৈপুণ্য বিচারে প্রান্তিক যুব জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক খেলাধুলা যেমন, ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট, সাঁতার, জিসনাস্টিক, ট্রাক অ্যান্ড ফিল্ড, বক্সিং, নৌকাবাইচ ইত্যাদি খেলায় দীর্ঘ মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। একইভাবে বিভিন্ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে তাদের দীর্ঘ মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। এসব প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়াবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত করা যেতে পারে।
এই সংলাপে আরও অংশ নেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক চুন্নু, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক, বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা, ইউসেপ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক তাহসিনা আহমেদ, জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (জেসিআই) সভাপতি সারাহ কামাল, বিডি জবস্-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার।
সিপিডি‘র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। এই সংলাপে দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, মাদ্রাসার শিক্ষক, তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য, শারীরিক প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন সংস্থার অনেকেই অংশ নেন। এ ছাড়া দেশের বাইরে থেকেও কয়েকজন এই সংলাপে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন