শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নশাসন ইউনিয়নের ৮৮নং ডগ্রী মাদবর কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখল করে দোকানঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। দোকানঘরটি তুলছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্বামী নশাসন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন তালুকদার।
এ ব্যাপারে জমির পরিমাণ ও সীমানা নির্ধারণ এবং কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছ থেকে জমি ফিরে পাওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম তালুকদার নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে গত ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোনো সমাধান হয়নি।
লিখিত অভিযোগ ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে মাদবর কান্দি গ্রামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্থানীয় হাজি আদম আলী মাদবর, মো. আলী মাদবর, আব্দুল আজিজ মাদবর, আব্দুল হামেদ মাদবর, কামাল মাদবর, ইয়াসিন মাদবর, জয়নাল মাদবর মিলে ৪০ শতাংশ জমি দান করেন। সেখানে ছোট একটি খেলার মাঠ রয়েছে। বর্তমানে এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩০০। কিন্তু বর্তমানে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জমি দখল করার পর বিদ্যালয়ে অবশিষ্ট জমি রয়েছে ২৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর বিদ্যালয়ের পাশের সড়ক ঘেঁষে বিদ্যালয়ের জমিতে বেশ কয়েকটি দোকানঘর করে ভাড়া দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম তালুকদার বলেন, বিদ্যালয়ের মোট ৪০ শতাংশ জমি। সামনের সড়কে বিদ্যালয়ের কিছু জমি গেছে। কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বিদ্যালয়ের জমি অবৈধভাবে দখল করে দোকানঘর তুলেছে। ওই জমি পাওয়ার জন্য নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে গত ২০১৫ সালে ২৫ নভেম্বর লিখিত আবেদন করেয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান পাইনি।
তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের যে নতুন ভবন করা হয়েছে সেখানে দেলোয়ার হোসেন তালুকদারের চারটি দোকান ছিল। ভবন করার জন্য দোকানগুলো ভেঙে দেয়া হয়। পশ্চিম-উত্তর কোণায় ৭ বছর আগে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগার’ নামে একটি ভবনে এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বসতো। সেই ভবনে তিন-চারদিন যাবত দোকান করার জন্য সংস্কার কাজ চলছে।
তবে দেলোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, জমিটি হচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের, বিদ্যালয়ের না। ডগ্রী বাজারের দোকানগুলো অনেক বছর আগেই উঠেছে। যারা দোকান করেছে পরবর্তীতে তাদের নামেই জমিগুলো রেকর্ড হয়েছে। পাঁচ বছর আগেও এই জমি নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা করেছিল। মামলায় বিদ্যালয় জমি পায়নি।
তিনি বলেন, আমি যেখানে দোকানঘর করছি এটা বিদ্যালয়ের না, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগারেরও না। বিদ্যালয়ের জমিতে ঘর তুলিনি। আমার ব্যক্তিগত জমিতে দোকানঘর তুলছি। দখল সূত্রে আমি এর মালিক।
দোকানঘর ভাড়া নেয়া সেকেন্দার দেওয়ান মোবাইল বলেন, আমি নশাসন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদারের কাছ থেকে দোকানটি ভাড়া নিয়েছি। খুব শিগগিরই ব্যবসার জন্য দোকান চালু করবো।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সানজিদা তালুকদার ডালিয়া বলেন, জমি বিদ্যালয়ের কি-না আমার জানা নেই। বিস্তারিত জেনে জানাবো।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ব্যাপারে আমি শুনেছি। তবে দেলোয়ার হোসেন তালুকদার কোন ধরনের লোক সবাই জানেন। বিদ্যালয়ের জমিতে দোকানঘর নির্মাণ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। নড়িয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাহবুর রহমান শেখ বলেন, বিদ্যালয়টির বিষয়ে জানলাম। খোঁজ নিয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন