দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চাষিদের দুর্ভোগের কথা আগে না ভাবলেও বর্তমান পেঁয়াজ সংকটের কারণে সরকার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দেশের তিনটি জেলায় মোট ছয়টি গুদাম নির্মাণ করবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। খবর দেশ রুপান্তর।
মৌসুমে পেঁয়াজের কেজি যখন ১৫-২০ টাকায় নামে, তখনো ভারত থেকেও অবারিতভাবে আমদানি হয় পেঁয়াজ। পেঁয়াজ সংরক্ষণে সরকারের কোনো গুদাম না থাকায় মৌসুমে সস্তায়ই বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষকরা। আর কৃষকের ঘর পেঁয়াজশূন্য হলেই পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হয়ে পরে দেশ। বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির মূল উৎস ভারত হঠাৎ রপ্তানি বন্ধ করায় পেঁয়াজের কেজি ২৭০ টাকায় উঠে।
এ বিষয়ে টিসিবির কর্মকর্তারা জানান, তেল, গম, ডাল, আলুর জন্য দেশে গুদাম রয়েছে। কিন্তু পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য কোনো গুদাম নেই। পেঁয়াজের দাম নিয়ে নানা সময়ে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করলেও সরকারের কিছুই করার থাকে না। এবার পেঁয়াজের কেজি আড়াইশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পরই সরকার গুদাম নির্মাণের কথা চিন্তা করে।
বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন জানান, মৌসুমের সময় কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজ যাতে সংরক্ষণ করা যায়, সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গুদাম নির্মাণ করতে প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। এসব গুদামে পেঁয়াজ সারা বছরই সংরক্ষণ করা যাবে। এতে ভরা মৌসুমে কৃষককে যেমন কম দামে বেঁচতে হবে না, তেমনি মৌসুম শেষে ব্যবসায়ীরা চাইলেই এবারের মতো দাম বাড়াতে পারবে না।
ভবিষ্যতে মৌসুম শেষ হলেও যাতে দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ থাকে সেজন্য এসব গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। বাঁশ ও রড-সিমেন্ট দিয়ে এমনভাবে গুদামগুলো নির্মাণ করা হবে, যাতে সারা বছরই গুদামে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজ এসব গুদামে রেখে পরে যেকোনো সময় তা বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। ছয়টি গুদাম নির্মাণে ব্যয় হবে ২৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম, রংপুর ও মৌলভীবাজার এই তিন জেলায় ছয়টি গুদামঘর নির্মাণ করবে টিসিবি। সংস্থাটির নিজস্ব জমিতে এসব গুদাম নির্মাণ হবে। ১ ডিসেম্বর, রবিবার পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, মাগুরা, মেহেরপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুর ও রংপুরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি। তাহলে অন্য তিন জেলায় গুদাম নির্মাণ করা হবে কেন- এর জবাবে টিসিবি’র সচিব এনামুল হক বলেন, ‘ওই তিন জেলায় টিসিবির নিজস্ব জমি আছে। তাই জমি অধিগ্রহণের ঝামেলায় যেতে হবে না। অল্প সময়ের মধ্যে গুদামগুলো নির্মাণ করা যাবে।’
তিনি আরো জানান, এসব গুদামে দুভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হবে। প্রথমত, কৃষক থেকে কিনে এনে গুদাম ঘরে রাখা হবে। দ্বিতীয়ত, সরকার চাইলে গুদামঘর ভাড়াও দিতে পারে। সেখানে কৃষকরা পেঁয়াজ রাখতে পারবে। তবে এর কোনোটিই এখনো চূড়ান্ত নয়। গুদাম নির্মাণ শেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। এসব গুদামে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, দেশে এখন বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ থেকে ২৫ লাখ টন। দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৮ লাখ টন। আমদানি করতে হয় ছয় লাখ টনের মতো। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয় দাবি করে আসছে, পেঁয়াজের উৎপাদন ২০ লাখ টনের বেশি। পেঁয়াজ সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় প্রতি বছর কৃষকের উৎপাদিত ২৫ থেকে ৩০ ভাগ পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য মতে, তিনটি জেলায় ছয়টি গুদাম নির্মাণে মোট খরচ ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এই টাকা জোগান দেয়া হবে। প্রকল্পটি যেহেতু ৫০ কোটি টাকার কম খরচ হবে, তাই এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় যেতে হবে না। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান নিজ ক্ষমতাবলে প্রকল্পটি অনুমোদন করতে পারবেন। রবিবারের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় যেহেতু প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে, তাই শিগগিরই প্রকল্পটি পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন মিলতে পারে। তারপর যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলছেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) সাহিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে এতদিন পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ছয়টি গোডাউন নির্মাণকাজ হলে সেখানে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। কৃষক তার পেঁয়াজ এসব গুদামে রাখতে পারবেন। এতে ব্যবসায়ীরাও ইচ্ছামতো দাম বাড়াতে পারবে না।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন