‘৩জি প্রযুক্তি চালু ও ২.৫জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ
বেড়েই চলেছে ডলারের দাম। আর এর ধাক্কা লাগছে উন্নয়ন প্রকল্পে। শুধু ডলারের দাম বাড়ায় একটি প্রকল্পে গচ্চা যাচ্ছে ৩৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য যে ব্যয় ধরা হয়েছিল, এখন তা বেড়ে গেছে। ফলে অতিরিক্ত এ টাকা খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে। ‘৩জি প্রযুক্তি চালু ও ২.৫জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ফেজ-২)’ প্রকল্পে এমনটি ঘটছে। প্রকল্পটির বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) ২৩ অক্টোবরের সভায় এ বিষয়টি তুলে ধরে বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদও বাড়ছে ৬ মাস।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, এটা অবশ্যই গচ্চা। কেননা আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম না বাড়লেও শুধু ডলারের দাম বাড়ার কারণে এ বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। তাই একে গচ্চাই বলা যায়। তাছাড়া প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়ন না হলে এরকম হতে পারে। প্রকল্পের কস্ট ওভার রান (ব্যয় বৃদ্ধি) হয়। এই কষ্ট ওভার রানের ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য ভূমিকা রাখে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (টেলিকম) মো. মুহিবুর রহমান বলেন, এটিকে গচ্চা বলা যাবে না। যে কোনো প্রকল্পের ক্ষেত্রেই এমনটি হতে পারে। বিদেশ থেকে কোনো জিনিস কিনতে হলে এরকম হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাছাড়া ডলারের দাম তো ধরে রাখার ব্যাপার নয়। এটা সবসময় বাড়ে-কমে। একটা প্রকল্প যখন তৈরি হয়, তখন থেকে বাস্তবায়ন পর্যায় পর্যন্ত অনেকদিন সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে ডলারের দাম বেঁধে দেয়া সম্ভব নয়। সূত্র জানায়, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ৩জি প্রযুক্তি চালু ও ২.৫জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ফেজ-২) প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সেসময় ব্যয় ধরা হয় ৬৭৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৬০৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ও টেলিটকের নিজস্ব তহবিল থেকে ৬৮ কোটি টাকা ব্যয় করার কথা। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। ডিপিইসি সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) যখন তৈরি করা হয়, তখন এক মার্কিন ডলারের দাম ছিল ৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। সে অনুযায়ী টেলিটকের যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অংশে ৫৭ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৪৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়। কিন্তু ২৩ অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বেড়ে এক ডলারের দাম হয়েছে ৮৫ টাকা। টেলিটকের যন্ত্রপাতি কেনা খাতে মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে ৩৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। তিনি আরও জানান, অনুমোদিত ডিপিপিতে বৈদেশিক যন্ত্রপাতির সিডি ভ্যাট (আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট ) খাতে গড় হার ১০ শতাংশ দেখানো হলেও ৩০ জুন পর্যন্ত ২৫০ কোটি ১৮ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা অর্থাৎ ১৮ শতাংশ সিডি ভ্যাট বাবদ খরচ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে আরও ২৩৬ কোটি টাকার পণ্য আমদানির জন্য প্রায় ৬৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা অর্থাৎ ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ সিডি ভ্যাট বাবদ ব্যয় করতে হবে। সব মিলিয়ে সিডি ভ্যাট খাতে ব্যয় করতে হবে ১১২ কোটি টাকা। সভায় বিস্তারিত আলোচনার পর বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার পরিবর্তন ও সিডি ভ্যাট খাতে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটির মোট ব্যয় বাড়িয়ে ৭৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ধরে পুনর্গঠিত ডিপিপি বিশেষ সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে ১৩ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো এক চিঠিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৩জি প্রযুক্তি চালু ও ২.৫জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ফেজ-২) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হচ্ছে না। তাই এর মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে কয়েক দফা ডলারের দাম বেড়েছে। বছর শুরুর দিন আন্তঃব্যাংক রেটে ডলারের দাম ছিল ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা। দুই দিন পর ৩ জানুয়ারি ডলারের দাম ৫ পয়সা ও ১১ ফেব্রুয়ারি ১০ পয়সা বাড়ানো হয়, ১৪ ফেব্রুয়ারি ৭ পয়সা বাড়িয়ে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ১২ পয়সা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর বিভিন্ন সময় আরও কয়েকবার ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়ানো হয় ডলারের। সর্বশেষ বুধবার ১ ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন