রাহেলা বেগম গর্ভবতী তখন। গর্ভবতী স্ত্রীকে রেখে সাভারের জিরানী বাজার এলাকায় পোশাক-শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে আসেন স্বামী মো. রবিউল আউয়াল। তারপর রাহেলার কোলজুড়ে এসেছে কন্যা সন্তান। কন্যার নাম মোছা. শিখা আক্তার। এখন তার বয়স চার বছরের বেশি।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার পারলিতলা গ্রামে গর্ববতী রেহেলাকে রেখে সাভার যাওয়ার পর আরেকটি বিয়ে করেন রবিউল। দ্বিতীয় বিয়ে রেহালার অনুমতি ছাড়াই করেছেন তিনি।
রাহেলা আক্তারের অভিযোগ, দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে সংসার খরচ দেয়া বন্ধ করে দেন রবিউল। শিখা আক্তারের আগে তাদের ঘরে আরও দুই সন্তান এসেছে। তাদের নাম মো. রাহাত ও মোছা. রানী আক্তার। সংসার খরচ বন্ধ করে দেয়ায় তিন সন্তানকে নিয়ে মহাবিপদে রয়েছেন তিনি।
শিখার বয়স যখন তিন মাস, তখন রাহেলা তার স্বামীর বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ জেলা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও মুক্তাগাছা আমলী আদালতে একটি মামলা করেন।
রাহেলা আক্তার জাগো নিউজের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘গত দুই মাস আগে রবিউল আরও একটি বিয়ে করেছেন। আমার অনুমতি ছাড়াই তিনি দুই বিয়ে করেছেন। আমি আর তার কাছে থাকতে চাই না। বাচ্চা তিন ছেলেমেয়েকে এভাবে আর খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট দিতে চাই না। রবিউল চাইলে আমি ছেলেমেয়েদেরও দিয়ে দেব। কিন্তু আমি আর তার সঙ্গে সংসার করতে চাই না।’
মামলা পরবর্তী এখন পর্যন্ত রবিউলের কাছে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন রাহেলা।
রবিউল আউয়ালের বাবা মো. আলী ও তার মা মারা গেছেন। রবিউল আউয়াল এখন আর বাড়িতেও আসেন না। ফলে রবিউলের কাছ থেকে টাকাও আদায় করতে পারছেন না বলে জানান রাহেলা।
রাহেলা বলেন, ‘গত কয়েক মাস আগে দ্বিতীয় স্ত্রীকে রেখে রাহেলার কাছে চলে আসেন রবিউল। সিএনজি কিংবা অটোরিকশা কিনে সংসার চালাবে-এই বলে রাহেলার পরিবারের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নেন রবিউল। সেই টাকা নেয়ার পরপরই রবিউল চলে যান এবং আরেকটা বিয়ে করেন। এখন এই টাকা নিয়ে আমাদের পরিবারেই শুরু হয়েছে ঝামেলা।’
মামলার নথি অনুযায়ী, রাহেলা ও রবিউল আওয়ালের বিয়ে হয় ২০০৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। এরপর রবিউল যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে রাহেলাকে নির্যাতন করতে শুরু করেন। ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর রাহেলাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেন রবিউল।
ফোন নম্বর না পাওয়া যাওয়ায় এ বিষয়ে রবিউল আউয়ালের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে রবিউলের আপন চাচি খুদেজার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়। খুদেজা জানান, রবিউল আর রাহেলার সংসারে তিন সন্তান রয়েছে। এই সংসার রেখে রবিউল আরেকটি বিয়ে করেছে। রবিউল কয়েক মাস পরপর বাড়িতে আসে। দুই-একদিন থেকেই চলে যায়। গত প্রায় দুই মাস ধরে রবিউল বাড়িতে আসেন না। আর বাড়িতে আসলেও সবার সামনে খুব একটা আসে না রবিউল। ওই অঞ্চলেরই আরেকজনকে বিয়ে করে সাভারের জিরানীতে থাকত। পাঁচ বছর হয়ে গেছে দ্বিতীয় বিয়ের।
খুদেজা আরও জানান, রবিউলের দুই বিয়ে সম্পর্কে তিনি জানান। তৃতীয় বিয়ে করেছেন কি না, সে সম্পর্কে তিনি জানেন না। তার কাছে রবিউলের ফোন নম্বরও নেই।
তবে রাহেলার অভিযোগ, তাদের বাড়ির মানুষের সঙ্গে রবিউলের যোগাযোগ আছে। কিন্তু তারা কেউ তা স্বীকার করেন না।
এ বিষয়ে মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘তার স্বামী যদি উনার অজান্তে দুইটা বিয়ে করে থাকেন, তাহলে তিনি পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। আবার তিনি আমলি আদালতেও করতে পারেন। আমলি আদালতে তিনি মামলা করেছেনও। আদালত তদন্তের জন্য থানাকে জানালে, আমি কাজ করতে পারব।’
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে নারী ও শিশুদের বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার জন্য একটি সেল গঠন করা হয়েছে। সেখান থেকেও অভিযোগ করলে আইনগতসহ সব বিষয়ে যতটুকু সম্ভব সহায়তা দেয়া হয়। এই সেল রেহালার জন্য ভালো হবে বলেও জানান এই ওসি।
আলী মাহমুদ বলেন, ‘এসপির কার্যালয়ে গঠিত সেলে অভিযোগ করলে উনারা সহায়তা চাইলে আমি অবশ্যই সাহায্য করব। আর ওই সেলকে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) সহায়তা করে। ডিবি তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে আছে। আমাদের চেয়ে দ্রুত ওরা এর সমাধান দিতে পারবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন