পৃথিবীতে প্রায় ১২০ জাতের কবুতর পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রায় ২০ প্রকার কবুতর রয়েছে। কবুতর পালনের জন্য বাংলাদেশের জলবায়ু এবং বিস্তীর্ণ শষ্যক্ষেত্র কবুতর পালনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
কবুতর পালনের প্রয়োজনীয় তথ্যবলী:
প্রাপ্ত বয়ষ্ক কবুতরের দৈহিক ওজন (জাতভেদে) ২৫০-৮০০ গ্রাম, প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার সময়কাল ৫-৬ মাস, কবুতর প্রতিবার ১ জোড়া ডিম দেয় (প্রম ডিম দেয়ার প্রায় ৪৮ ঘন্টা পর দ্বিতীয় ডিম দেয়), বাচ্চা উৎপাদনের বয়সকাল ৫-৬ বৎসর, ৪-৫ দিনে বাচ্চার চোখ ফোটে, ১৭-১৯ দিন বাচ্চা ফোটার জন্য ডিমে তা দেয়, ১০-১২ দিনে পালক গজায়, ২৮-৩০ দিন বাজারজাতকরণের বয়স, জীবনকাল ১৫-২০ বৎসর।
কবুতর পালনের সুবিধা:
বিনিয়োগ কম, প্রতিপালন অত্যন্ত সহজ এবং সংক্ষিপ্ত প্রজননকাল বেকার যুবক এবং দুস্থ মহিলাদের আয় বর্ধনের উৎস হতে পারে অল্প জায়গায় এবং অল্প খাদ্যে পালন করা যায় এবং রোগ বালাই কম মাংশ সুস্বাদু পুষ্টিকর, সহজে পাচ্য এবং প্রাণীজ আমিষের চাহিদা পুরণের উৎস মল জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
কবুতরের বাসস্থান: উত্তম নিষ্কাশন, পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং বায়ুচলাচল আছে এরূপ উঁচু এবং বালুময় মাটিতে কবুতরের ঘর করতে হবে, যা খামারীর আবাসস্থল থেকে ২০০-৩০০ ফুট দুরে এবং দক্ষিণমূখী হওয়া উচিত। মাটি থেকে ঘরের উচ্চতা ২০-২৪ ফুট এবং খাচার উচ্চতা ৮-১০ফুট হওয়া ভাল। একটি খামারের জন্য ৩০-৪০ জোড়া কবুতর আদর্শ।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা: বাচ্চা ফোটার ৪-৫ দিন পর কবুতরের বাচ্চার চোখ ফোটে। ফলে বাচ্চাগুলো কোন দানাদার খাদ্য গ্রহণ করতে পারেনা। এসময় স্ত্রী এবং পুরুষ কবুতর তাদের পাকস্থলী থেকে ঘন ক্রীম বা দধির মত নিঃসরণ করে যাকে কবুতরের দুধ বলে। এ দুধ অধিক আমিষ, চর্বি এবং খনিজ লবণ সমৃদ্ধ যা এক সপ্তাহ পর্যন্ত খেতে পারে। বাচ্চাগুলো নিজে খাদ্য গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্ত্রী এবং পুরুষ কবুতর উভয়ে দানাদার খাদ্যের সাথে দুধ মিশিয়ে ঠোটদিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ায়।
প্রতিদিন ২ বার খাদ্য সরবরাহ করা ভাল। মাঝে মাঝে পাথর, ইটের কণা (গ্রিট) এবং কাঁচা হলুদের টুকরা দেয়া উচিৎ কারণ এ গ্রিট পাকস্থলীতে খাবার ভাঙতে এবং হলুদ পাকস্থলী পরিষ্কার বা জীবাণুমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা: খামার হতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার এবং রোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য খামারের জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ন।
১। কবুতর উঠানোর আগে খামারসহ ব্যবহার্য্য সকল যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রমে পানি দিয়ে পানির সাথে কার্যকরী জীবানুনাশক (০.২-০.৫% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড বা আয়োডিন দ্রবণ) মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে।
২। সুস্থ্য সবল কবুতর সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনে বাহ্যিক পরজীবি নিধনের জন্য ০.৫% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে কবুতরকে গোসল করিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে কবুতরের মুখ এই দ্রবণে ডুবানো যাবে না। হাত দিয়ে মাথায় লাগিয়ে দিতে হবে। অমত্মঃপরজীবি প্রতিরোধের জন্য কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করাতে হবে।
৩। কবুতরের খোপ, দানাদার খাদ্য ও খনিজ মিশ্রণ সরবরাহের পাত্র, পানির পাত্র ও গোসল করার পাত্র এবং কবুতর বসার স্ট্যান্ড নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণুমুক্ত খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।
৪। খামারে মানুষের এবং বন্য পাখি ও ইঁদুর জাতীয় প্রাণী যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রতিবার খামারে প্রবেশ করার পূর্বে এবং খামার হতে বাহির হওয়ার সময় হাত ও পা অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৫। কোনো কবুতর অসুস্থ হলে দ্রুত আলাদা করে ফেলতে হবে। অসুস্থ বা মৃত কবুতর এর রোগের কারণ জেনে অন্যান্য জীবিত কবুতরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
কবুতরের রোগ বালাই: বিভিন্ন প্রকার রোগ জীবাণু দ্বারা কবুতর আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত খাদ্য এবং পানির মাধ্যমে জীবাণু কবুতরের দেহে প্রবেশ করে। তাছাড়া অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডাজনিত পীড়নের কারণেও অনেক সময় কবুতর দূর্বল ও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। কবুতরের সংক্রামক রোগ এবং ছত্রাকজনিত রোগ এছাড়া ভিটামিন বা খনিজ লবণের অভাব জনিত রোগ, বদহজম জনিত সমস্যা, গেঁটেবাত, অন্তপরজীবি যেমন কৃমি এবং বাহ্যিক পরজীবি যেমনঃ মাছি, উকুন ইত্যাদি দ্বারাও কবুতর আক্রান্ত হতে পারে।
কবুতর পালনে আর্থিক লাভ: ৩০ জোড়া উন্নত বা সৌখিন জাতের কবুতর পালনে প্রাথমিকভাবে ১,৯৫,২০০ /- টাকা বিনিয়োগ করে এক বৎসরে ১,০৫,৩০০ /- টাকা লাভ করা যায়। তবে ৩০ জোড়া দেশী জাতের কবুতরের পালনের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ৫,৪০০/- টাকা বিনিয়োগ করে এক বৎসরে ৪,৬০০/- টাকা লাভ করা যায়। পরবর্তীতে স্থায়ী খরচের (ঘর, পানি পাত্র, বালতি, মগ, কবুতরের খোপ, দানাদার খাদ্য ও খনিজ মিশ্রণ সরবরাহের পাত্র, ও গোসল করার পাত্র এবং কবুতর বসার স্ট্যান্ড) দরকার হয় না । ফলে পরবর্তীতে লাভ বেশি হয়।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন