“আজকের সন্ধ্যাতে বাবার সাথে পাশের ক্যাফেতে দেখা করবো। সাতটায়! যখন বিল আসবে তখন বাবা না, আমি বিল দিবো। আজকে বাবার সাথে এভাবে (মাথা নিচু) না, এভাবে (মাথা উচু করে) কথা বলবো। কি স্পেশাল আজকে? আমার প্রথম বেতন! প্রথম বেতন শুধু অর্থ না, এনে দেয় সম্মানও।”–ফেয়ার অ্যান্ড লাভলীর এই বিজ্ঞাপনটিতে ক্যারিয়ারের প্রথম মাসের বা প্রথম বেতনের এই সুখকর অনুভূতির কথা উল্লেখ করলেও মূলত প্রত্যেক মাসের বেতনেই থাকে নানা প্রতিশ্রুতি ও স্বপ্ন পূরণের গল্প। মাসের ১০ তারিখের মধ্যে বাসা ভাড়া, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ অন্যান্য বিল পরিশোধ, অসুস্থ বাবা-মায়ের ওষুধ ও সন্তানের খাবার কেনা এবং ঋণের কিস্তি দেয়াসহ আরো কত কি? জীবনের সব সুখ যেন ওই বেতনে বন্দি!
এদিকে, অলিখিতভাবে মাসের হালখাতার শেষ দিন যেন ১০ তারিখ। এর মধ্যে দেনা-পাওনার মিষ্টিমুখ না হলে তা বড়ই অপমানের কারণ। আসুন জেনে নেই ১০ তারিখ পর বেতন পাওয়া কর্মচারীদের কয়েকটি মানবিক সমস্যা।
বাসা ভাড়া: বাড়িওয়ালারা বড়ই বেরসিক। যেভাবেই হোক ১০ তারিখের মধ্যে ভাড়া পরিশোধ করতে হবে, এ ব্যতীত কোনো অজুহাত চলবে না। কারো কাছ থেকে ধার করে হলেও বাসা ভাড়া দিতে হবে, না হলে ভদ্রলোকের এককথা–‘বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গা দেখেন।’ এবার ভাবুন ১০ তারিখের পর বেতন পাওয়া ওই কর্মচারীর কি অবস্থা?
মা দুদিন কষ্ট করো: অসুস্থ বয়স্ক মা-বাবা। গ্রামে থাকেন। নিয়মিত ওধুষ না হলে প্রাণ বায়ু থমকে যাওয়ার পালা। সব জেনে-বুঝেও নিরুপায় ওই কর্মচারীকে মুঠোফোনে বলতে হয়, “মা, বাবাকে বলো আর দুদিন একটু কষ্ট করতে। এখনও বেতন পাইনি। ১৫-১৬ তারিখে বেতন পেতে পারি। টাকা হাতে পেলেই পাঠিয়ে দেব।”
সন্তানের খাবার: গত মে মাসে সন্তানের জন্য দুধ চুরি করতে গিয়ে এক অসহায় বেকার পিতা খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন। পরে অনেকেই ওই পিতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু ১০ তারিখের পর বেতন পাওয়া পিতার কষ্ট আজও অজানা। সে কিভাবে সন্তানের জন্য খাবার কিনেন বা কি বলে ঘুম পড়ান?
ঋণ পরিশোধ: মহাচিন্তা! ঋণের টাকা ঠিক সময়ে পরিশোধ করতে হবে। যে লোকটি প্রয়োজনের সময় টাকা ধার দিলো, তাকে ঋণ দিতে না পারা যাক, অন্তত ধার শোধের তারিখটাতো ঠিক রাখতে হবে। কিন্তু ভাবুন তো যে কর্মচারীর বেতন পাওয়ার তারিখটাই নির্দিষ্ট না, সে কি পরবর্তী প্রয়োজনে আবার কাউকে পাশে পাবে?
জরিমানা: পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের শেষ সময় যে ১০ তারিখের আগে, তা বিলের কাগজ হাতে নিয়েই জানা গেছে। তবে এই জানায় কোনো লাভ নেই, জরিমানা গুনতেই হবে। পরিশেষে আমার কোনো শখ নেই, আহ্লাদ নেই–আমি ১০ তারিখের পর বেতন পাওয়া একজন কর্মচারী।
এবার শেষ করা যাক রাসুল (সা.)-এর একটি হাদিস দিয়ে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকানোর আগে তার পারিশ্রমিক আদায় করে দাও।’(বুখারি শরীফ)। বিশ্বের সবাই ঘাম শুকানোর আগে বেতন পাক এবং পূর্ণতা পাক তাদের স্বপ্নগুলো।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন