বাংলাদেশের আর্থিক খাতে অস্থিরতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি, মাত্রাতিরিক্তি খেলাপি ঋণ, সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি, টাকা পাচার, পুঁজি বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়া, ব্যাপক দুর্নীতি ও প্রকল্পের নামে ব্যয় বৃদ্ধি ইত্যাদি পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আর্থিক খাত এখন টালমাটাল অবস্থায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে আমানত সংগ্রহের চেয়ে ঋণ বিতরণ হয়েছে বেশি। সাধারণত প্রচলিত ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে ৮২ থেকে ৮৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারে। কিন্তু ব্যাংকগুলো এর চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। ফলে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের ফলে অনেকে নগদ টাকা ব্যাংক থেকে সরিয়ে রাখছে।
এসবের প্রভাবে আর্থিক খাতে নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে কলমানি (একদিনের জন্য এক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যে ধার নেয়) থেকে ধার করার প্রবণতা বাড়ছে। এতে কলমানির রেট বেড়েছে।
গত বছরের ১৬ অক্টোবর কলমানির রেট ছিল তিন দশমিক ৬৭ শতাংশ। ৩০ সেপ্টেম্বরে এ হার বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ। ১৬ অক্টোবর ছিল চার দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ সময়ে কলমানি রেট সাধারণত আরও কম থাকে।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কলমানির হার বাড়লেই বুঝতে হবে আর্থিক তারল্য সংকট হয়েছে। এর কারণেই কলমানি রেট বাড়ে। দীর্ঘ সময় ধরে আর্থিক খাতে তারল্য সংকট রয়েছে। এ সংকট নিরসনে আমানতকারীদের আস্থা ফেরাতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, রেমিটেন্স প্রবাহ সামান্য বাড়লেও রফতানি আয় কমে গেছে- যা তারল্য ও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় চাপ সৃষ্টি করেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় বেড়েছিল ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে তা বৃদ্ধির পরিবর্তে বরং আরও দুই দশমিক ৯৪ শতাংশ কমে গেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় বেড়েছিল ৫৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর এবার সেপ্টেম্বরে সে আয় সাত দশমিক ৩০ শতাংশ কমেছে। এতে রফতানিকারকদের মধ্যে তারল্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট বিরাজ করছে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের ফলে অনেকে টাকা পাচার করছেন। এ কারণে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রায় সাড়ে তিন টাকা বেড়ে গেছে।
এ মাসের শুরুর দিকে কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার বিক্রি হতো ৮৪ টাকা করে। এখন তা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৮৭ টাকা করে। আগে কার্ব মার্কেট ও ব্যাংকে ডলারের দর প্রায় একই ছিল।
আ হ ম মুস্তফা কামাল
বাংলাদেশের অর্থনীতির এখন সুন্দর সময়: অর্থনীতি
এ অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামষ্টিক বিভিন্ন সূচকের উন্নয়নে প্রশংসা করেছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বাংলাদেশের সহজ শর্তের ঋণ বাড়ানোর আশ্বাসও দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভায় যোগদান শেষে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ কথা জানান বলে আজ ঢাকায় খবর প্রকাশ হয়েছে।
ওয়াশিংটনে সংবাদ ব্রিফিং-এ করে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশ ব্যতীত সারা বিশ্বের অর্থনীতি নিম্নমুখী অবস্থায় রয়েছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এটাকে কোনো কল্পকাহিনীর মতো মনে হলেও এটাই বাস্তবতা। আর এসবের স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনীতির ভূয়সী প্রশংসা করেছে। আমাদের অগ্রগতি দেখে তারা অভিভূত। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এখন সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে সুন্দর সময় আমরা এখন পার করছি।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০৩০ সালে দেশে কর্মসংস্থানের কোনো অভাব থাকবে না। এ সময় সবাইকে ডাবল চাকরি করতে হবে। এখন গ্রামে মেশিন দিয়েও ধান কাটার মানুষ পাওয়া যায় না। বর্তমানে বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছে।
ব্যবসা গুটাচ্ছে ফরাসি কোম্পানি
এদিকে, অনৈতিক ব্যবসা পরিবেশের অভিযোগ তুলে ফ্রান্সভিত্তিক ওষুধ কোম্পানি-সানোফি, বাংলাদেশ থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে আজ সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক ও কর্মচারীরা। এ সময় সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডের শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক। জানান, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, প্রায় ১ হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবার।
সানোফির কর্মকর্তারা জানান, এ দেশের বিপণনব্যবস্থা অনৈতিক। ওষুধ কোম্পানিগুলোকে তাদের ওষুধ চালানোর জন্য ডাক্তারদের বড় অঙ্কের কমিশন ও উপহারসামগ্রী ঘুষ দিতে হয়। তবেই শুধু তাঁরা রোগীদের জন্য ওই কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন। কিন্তু এ ধরনের মার্কেটিং সানোফির বৈশ্বিক নীতি অনুমোদন করে না
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন