পিডিবির দুর্নীতির বিষয়টি কি পুরোপুরি হিমাগারে চলে গেছে? প্রশ্ন পিডিবিসহ বিদ্যুৎ খাতের সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। দেশের বিদ্যুৎখাত নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আর তদন্তে বিভিন্ন সময় দুদক উদ্যোগ নেয়ায় এ খাতে স্বচ্ছতা ফিরে আসবে বলে যারা ধারণা করেছিলেন দুদকের নীরবতায় তারা হতাশ, অপরদিকে দুর্নীতিবাজরাও আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বর্তমান সরকার যে খাতে নিজেদের সবচে’ সফল বলে দাবি করে তা হচ্ছে বিদ্যুৎখাত। বিদ্যুৎখাতে অর্জন যতটা তারজন্য জনগণকে মূল্য দিতে হচ্ছে অনেক গুণ বেশি। দুর্নীতি-লুটপাটের কারণে অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্পসহ সর্বত্র। তবে বিদ্যুৎখাত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, এর ভেতরের দুর্নীতি নিয়ে যে অন্ধকার রাজত্ব তা থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালেই। বিদ্যুৎ খাতের প্রধান প্রতিষ্ঠান পিডিবি বরাবরই দুর্নীতিতে অনেক এগিয়ে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যা চরম আকার ধারণ করেছে। সংস্থাটির খোদ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাই এখন লাগামহীন দুর্নীতি-অপকর্মে নিমজ্জিত। তবে পিডিবির একাধিক সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা বলেছেন, পিডিবির অন্ধকার দিকটি আড়ালেই থেকে যাচ্ছে কেন না, এ খাতের দুর্নীতিবাজরা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছেন ঊর্ধ্বতন মহলের। এমনকি দুদকও পিডিবির দুর্নীতির বিরুদ্ধে সক্রিয় নয়। তারা বলেছেন, দেশের বিদ্যুৎখাত নিয়ে যদি কোন দিন শে^তপত্র প্রকাশিত হয় কিংবা টিআইবি বা দুদক ব্যাপকতর অনুসন্ধান চালায় তাহলে বেরিয়ে আসবে পিডিবির দুর্নীতি আর লুটপাটের ভয়ংকর চিত্র।
সিন্ডিকেটের লুটপাট, পিডিবির চেয়ারম্যান সিন্ডিকেটের মূল হোতা
পিডিবির বর্তমান চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্থাটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কাজ করেছেন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয় খালেদকে। এর আগে ২০১৬ সালের আগস্ট থেকে এ পদে আছেন। জানা গেছে, চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখার দোহাই দিয়ে, উচ্চমহলে তদবির করে তিনি নিজের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করেন। পিডিবি চেয়ারম্যানের আগে তিনি এ সংস্থায় বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮১ সালে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে কর্মজীবন শুরু করেন খালেদ মাহমুদ। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন পদ মাড়িয়ে সংস্থাটির প্রধান হয়েছেন। দীর্ঘ ৩৮ বছরের চাকরি জীবনে মাঠ পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞাতা তার নেই বললেই চলে। পিডিবিকেন্দ্রীক দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে তিনি কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বিভিন্ন আকর্ষণীয় পদে কাজ করেছেন। আর সংস্থার চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি নিজেই এখন সিন্ডিকেটের পুরো নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পিডিবিতে যে গ্রুপটি সব সময়ই বিশেষভাবে শক্তিশালী তা হচ্ছে ঠিকাদার গ্রুপ। বস্তুতঃপক্ষে এখানে ঠিকাদার মানেই হচ্ছে একটি সিন্ডিকেটের অংশ। কর্মকর্তা বদল হয়ে নতুন কর্মকর্তা আসলে তাকে হাত করেই নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এই সিন্ডিকেটে শুধু পিডিবির চেয়ারম্যান বা এর কর্মকর্তারাই জড়িত নন, মন্ত্রণালয় বা অন্যান্য স্থানের প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও এই সিন্ডিকেটে আছেন।
চুরি নয় যেন লুটপাট
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ বিভাগের সংস্কারসহ নানা কাজে যে পরিমাণ দুর্নীতি আর লুটপাট হয় তা অকল্পনীয়। সবচেয়ে বড় রকমের চুরি হয়ে থাকে কেনাকাটার টেন্ডারে। যাকে ‘চুরি’ না বলে ‘লুট’ বলেই আখ্যায়িত করে থাকেন অভিজ্ঞমহল। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে রাঘব বোয়ালরা। প্রতিবছর এই ক্রয় খাতে শত শত কোটি টাকা লুট হচ্ছে নানা কায়দায়। যার ভাগ যায় গুটিকয়েক কর্মকর্তা ও সংস্থার বাইরের ব্যক্তিবিশেষের পকেট। খালেদ মাহমুদই ইতিপূর্বে প্রধান প্রকৌশলী থাকার সময় আড়াই হাজার কোটি টাকা লুটপাটের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। এজন্য ২০১৪ সালে দুদকের তদন্ত এবং জিজ্ঞাসাবাদেরও মুখোমুখি হয়েছিলেন। অবশ্য খালেদ মাহমুদ বরাবরই ‘ম্যানেজ মাস্টার’ হিসেবে পরিচিত। ম্যানেজিং সক্ষমতার মাধ্যমে দুদকের সেই তদন্ত কোনো রকমে ধামাচাপা দিয়েছেন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীন বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি ক্রয় ও মেরামত খাতে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। আর একে ঘিরেই গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। পছন্দের কোম্পানিকে কাজ দিতে যে কোন ধরণের অনিয়ম আর কৌশলের আশ্রয় নিতে দ্বিধা করে না এই সিন্ডিকেট। এই বহিরাগতরাও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানির মালিক বা বড় বড় কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতারাও আছেন এই সিন্ডিকেটে। পিডিবির কোন কাজ এলেই দরদাতাদের নিজেদের মধ্যে অলিখিত গোপন সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়, বেশি দর হাঁকিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের লক্ষ্যে। দেখা যায়, কখনো কখনো সবদিক থেকে যোগ্য হওয়ার পরও সর্বনিম্ন দরদাতার দর বিভিন্ন অযৌক্তিক অজুহাত দেখিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। নানান কৌশলে নিম্নদরদাতাকে বাদ দিয়ে উচ্চ ও অস্বাভাবিক মূল্যে মালামাল ক্রয় করা হয়ে থাকে। অতীতে এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে, এখনো ঘটছে।
সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজে উতিপূর্বে বড়পুকুরিয়াসহ পিডিবির বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। একটি ঘটনায় দেখা যায়, বড় পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ’কোল মিল গিয়ার বক্স’ কেনার সময় সব নিয়ম অগ্রাহ্য করে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছ থেকে তা কেনা হয়েছিল। এসময় পিডিবির পরিচালনা বোর্ডের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের যৌক্তিক মতামতকেও উপেক্ষা করা হয়। গিয়ারবক্স সরবরাহের কাজটি সিমেন্সের স্থানীয় এজেন্ট জেএন্ডসি ইমপেক্সকে দেয়ার জন্যই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটি করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, জেএন্ডসি ইমপেক্সের মালিক নূর মোহাম্মদের সঙ্গে চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদের বেশ আগে থেকেই অঘোষিত ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। একজন শীর্ষ সরকারি চাকরিজীবী হয়ে সরাসরি ব্যবসা করতে না পারায় নিজস্ব লোক দিয়ে তিনি সে ব্যবসা দেখাশোনা করান বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। সূত্র জানায়, পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ এবং ক্রয় পরিদফতরের তৎকালীন পরিচালকের নগ্ন হস্তক্ষেপে সর্বোচ্চ দরদাতা জেএন্ডসি ইমপেক্স (সিমেন্সের স্থানীয় এজেন্ট) এর দরই রেসপন্সিভ বলে ঘোষণা করে তাদের কাছ থেকে গিয়ারবক্স ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ধরণের অসংখ্য কাজ নিয়ন্ত্রণ করেছে সিন্ডিকেট, সরকারের শত শত কোটি লুটপাট করেছে এই চক্রটি।
সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাতে সর্বাধিক দুর্নীতি!
পিডিবি সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পিডিবি বছরের পর বছর ধরে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে গত ক’ বছর ধরে এই সিন্ডিকেট হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য। বর্তমান সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে, দেশে উৎপাদনের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও আমদানি করা হচ্ছে বিদ্যুৎ। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিদ্যুৎ বিভাগীয় কর্মকর্তা বলেছেন, সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে এখন নগদ টাকার খেলা। আর এই নগদ টাকার খেলাকে কাজে লাগিয়ে পিডিবির একটি চক্র নিজেদের ভাগ্য বদলাচ্ছে। পিডিবির একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সরকারের সবচে’ আশির্বাদপুষ্ট একটি মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে অর্থ যাতে কখনো সমস্যা না হয়ে দেখা দেয় সেজন্য সরকার সবসময় সতর্ক ও আন্তরিক। সরকারের এই সতর্কতা আর আন্তরিকতাকেই দুর্বলতা বলে ধরে নিয়েছে ওই সিন্ডিকেট। বিদ্যুৎ নিয়ে কোন সংকট দেখা দিলে ’সব দোষ নন্দ ঘোষ’ নীতি নেয় পিডিবি। বিদ্যুৎখাতের নন্দ ঘোষ হচ্ছে ‘লোডশেডিং’।
পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সারাজীবনই পিডিবির প্রধান কার্যালয়ে ডিজাইন, প্রোগ্রাম এবং প্ল্যানিং বিভাগে কাজ করেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পিডিবির এই শাখা সাধারণত দুর্নীতিবাজদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় শাখা হিসেবে পরিচিত। এর কারণ, এগুলো ক্রয় বা কেনা-কাটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বড় দুর্নীতিগুলো হয়ে থাকে এই শাখার মাধ্যমেই। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, চাকরি জীবনের শুরু থেকেই তিনি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন।
এ শাখা যেভাবে ডিজাইন এবং পরিকল্পনা করে দেন টেন্ডারটির স্পেসিফিকেশন সেভাবেই তৈরি হয়। এতে কাজ পায় তাদের পছন্দের ওই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানই। অর্থাৎ কে কাজ পাবে, এটা টেন্ডার আহ্বানের আগেই নির্ধারিত হয়ে যায়। এসব শাখায় নিজের পছন্দের লোকদের শুধু নিয়োগই দেননি, তারা সবাই চেয়ারম্যানের প্রতি অন্ধ অনুগত, কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির লোকজনও এই সিন্ডিকেটের সদস্য।
নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি সবকিছুতেই অনিয়ম
পিডিবির আরেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হচ্ছেন সদস্য (প্রশাসন) জহুরুল হক। তিনি পিডিবিতে নিয়োগ বাণিজ্যের এক মহা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এই সিন্ডিকেট নিয়োগের ক্ষেত্রে চরম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে থাকে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় বা বুয়েটের মতো খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা নেয়া হলেও ফলাফলে অভিনব জালিয়াতি করা হয়। যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, ফলাফল প্রকাশের আগেই তাদের সাথে যোগাযোগ করে এই সিন্ডিকেট, তারপর পাস করিয়ে দেয়ার জন্য চুক্তি করে। পরীক্ষায় স্বাভাবিকভাবে পাস করলেও পরীক্ষার্থীরা জানতেও পারেন না যে তারা মেধার বলেই টিকেছেন, টাকা দেয়ার ফলেই তাদের উত্তীর্ণ করা হয়েছে এমন ধারণা সৃষ্টি করার পর ওই ব্যক্তিরা চাকরি পেতে এই সিন্ডিকেটের কাছে টাকা দিতে আর কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন না। জানা গেছে, জহিরুল হকের সকল অনিয়ম-দুর্নীতিতে সহযোগিতা করছেন তার আত্মীয় মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য।
জহিরুল হক পিডিবিতে চেয়ারম্যানের ডানহাত হিসেবে পরিচিত, বস্তুতঃপক্ষে খালেদ মাহমুদকে ব্যবহার করেই সব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন জহিরুল হক। আর খালেদ মাহমুদ যিনি কার্যতঃ অবসরেই গিয়েছিলেন তিনি আবার নতুন করে নিয়োগ পাওয়াকে ক্রিকেটের ভাষায় ’লাইফ’ পাওয়া বলে মনে করছেন। তিনি তার ঘনিষ্ঠজনদের বলেছেন- ‘লাইফ’ যখন পেয়েছি যতদূর পারি ‘রান’ তুলে নিই। এই ‘রান’ হচ্ছে ‘নগদ নারায়ণ’ এমনটাই বলছেন পিডিবি সংশ্লিষ্টরা।
পিডিবির আরেকটি বড় দুর্নীতির খাত হচ্ছে বদলি বাণিজ্য। বদলি করে যেমন প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেন বদলি সিন্ডিকেটের সদস্যরা। চেয়ারম্যান ও সদস্য (প্রশাসন) এই বাণিজ্য পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করেন বলে জানা গেছে। কাঙ্খিত স্থানে আর কাঙ্খিত পদে নিয়োগ পেতে পিডিবির বহু প্রকৌশলী বছরের পর বছর শ্রম আর মেধা দিয়ে এগিয়ে থাকলেও এই সিন্ডিকেটের কাছে এসে ভেঙে যায় তাদের স্বপ্ন, জয় হয় টাকার, যে যত বেশি টাকা দিতে পারেন তিনি তেমন ভাল জায়গায় বদলি হন বা পদায়িত হন। তবে বদলি হওয়ার চে’ লাভজনক হচ্ছে বদলি ঠেকানো। কোন কোন প্রকৌশলী বছরের পর বছর ধরে একই স্থানে চাকরি করে যাচ্ছেন, পদোন্নতি সুযোগ উপেক্ষা করেও তারা একই পদে থেকে যান, এমন কোন কোন কর্মকর্তাকে বদলি করা হলেও শেষ পর্যন্ত তারা তা ঠেকিয়ে দেন বলে জানিয়েছে পিডিবির একাধিক সূত্র।
থমকে গেছে দুদকের সব তদন্ত প্রক্রিয়া
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে টেন্ডার, কেনাকাটাসহ বিভিন্ন কর্মকা-ে সিন্ডিকেটের তৎপরতা ও লাগামহীন দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে সরকারের শীর্ষমহলেও বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও ইতিপূর্বে তদন্তের জন্য লিখিত নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেইসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বরাবরই কৃতিত্বের সঙ্গে নানা কায়দায় এগুলো ধামাচাপা দিয়েছেন।
পিডিবির ক্রয়ে দুর্নীতি আর অনিয়ম নিয়ে সব সময়ই সরব আলোচনা ছিল। গত বছর পিডিবির ১২টি ক্রয়ে সর্বনি¤œ দরদাতাকে কাজ না দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দেয়ার অভিযোগ উঠলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। নড়েচড়ে বসে দুদক। ওই প্রকল্পগুলোর দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে একজন কর্মকর্তাকে পূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই কর্মকর্তা এসব দরপত্রের বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে যাবতীয় নথি তলব করে। তদন্ত শুরু হলে দেখা যায় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এই কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় যাতে দুর্নীতির বিষয়টি ধরা ছিল সময়ের ব্যাপারমাত্র। তবে শেষাবধি ওই তদন্ত আর বেশি দূর আগায়নি। এই সিন্ডিকেট নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে ওই তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয়। এমনকি তদন্ত কর্মকর্তাকেই ঢাকার বাইরে বদলি করিয়ে দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে এ খাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা। তা না হলে উন্নয়নের সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।
(সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ প্রকাশিত)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন