অভিবাসী নারীদের ওপর যৌন নির্যাতনসহ নানা ধরনের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। অভিবাসী নারী কর্মীরা প্রতিনিয়ত হয়রানি, প্রতারণা, শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ ও বিভিন্ন যৌন নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতনের শিকার নারী অভিবাসী কর্মীরা দেশে ফিরে আসেন কিন্তু তাদের পরিবার গ্রহণ করতে চায় না বলে একটি মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
রোববার বিকালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত অভিবাসী নারী শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ’ করণীয় বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন, অভিবাসনের ক্ষেত্রে যে দালালচক্র সক্রিয় তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে অভিবাসীদের ঝুঁকি কমে আসবে। বিদেশ গিয়ে কাজ করতে যিনি সক্ষম, দক্ষ পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সক্ষম তাকেই পাঠানো উচিত। অভিবাসন প্রক্রিয়াকে গুণগত দিক থেকে উন্নত করতে শুরু সরকার নয়, বেসরকারি পর্যায়েও সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সচিব রৌনক জাহান, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সেলিম রেজা, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক ড. নুরুল ইসলাম, রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. তাসনিম সিদ্দিকী, বাংলাদেশি অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন (বোমসা) চেয়ারম্যান লিলি জাহান, অ্যাম্বাসী অব সুইজারল্যান্ডের মাইগ্রেশন অ্যান্ড লোকাল গভর্নেন্সের প্রোগ্রাম অফিসার নাদিম রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, অভিবাসী নারী কর্মীদের অনেকেই শিক্ষিত নয়, দক্ষতার অভাব রয়েছে। বর্তমানে অনেক সেবা থাকার পরও নারীরা তথ্যের অভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। নারী কর্মীদের কাজ করার পরে বেতন পরিশোধ করা হয়নি, প্রতিনিয়তই মারধর ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে জেলে আটকে রাখছে, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হচ্ছে না, খাবারও দেয় না।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট ৭,৩৪,১৮১ জন অভিবাসী দেশের বাইরে গেছেন যাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১,০১,৬৯৫ জন। বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নারীর অবদান অনেক। গত ১০ বছরে নারী অভিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে। মূলত ৭টি দেশে মূল অভিবাসন হয়। অভিবাসী নারীদের জন্য ৭৩টি কার্যক্রমের কথা বলা হয়েছে যেটি বাস্তবায়ন করতে পারলে অভিবাসী নারীদের জন্য ফলপ্রসূ হবে। পাশাপাশি যে সব নারী কর্মী হিসেবে যাবেন তাদের যাওয়ার পূর্বে কর্মস্থলের বিষয়ে সঠিক ধারণা দিতে হবে। নিজেদের মনোসামাজিক দিকে প্রস্তুতি রাখতে হবে। অন্যদিকে নারী কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সেটি মনিটর করার দিকে জোর দিতে হবে। লেবার উইং এ নারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে যাতে নারী কর্মীরা তাদের বিষয়ে খোলামেলাভাবে আলোচনা করতে পারে।
সভায় অভিবাসী নারী শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে করণীয় বিষয়ে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাম পর্যায়ের অনেক দরিদ্র নারী নিজের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহিলা পরিষদের নেত্রী ডা. ফওজিয়া মোসলেম, ডা. মাখদুমা নার্গিস, মালেকা বানু, সীমা মোসলেম, দিল আফরোজ বেগম, উম্মে সালমা বেগম প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন