এনআরসি আতঙ্কে পশ্চিমবঙ্গে প্রাণ গেল ৪ জনের
ভারতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এখন দেশটির নাগরিকদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তালিকা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় মানসিক চাপে অনেকেই মারা যাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গে এ কয়েক দিনে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বৃহস্পতিবার এনআরসি নিয়ে নিজের আপত্তির কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটল না, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রাণ গেল চারজনের। যে মৃত্যুর সঙ্গে এনআরসির নামও জড়িয়ে গেল।
উত্তর চব্বিশ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হলো ৫২ বছরের আমেনা বেওয়ার। স্বজনরা বলছেন, এনআরসির চিন্তায় পুরনো দলিল খুঁজতে বাঁকুড়ায় বাপের বাড়ি পর্যন্ত দৌড়েছিলেন আমেনা।
কিন্তু প্রয়োজনীয় নথি খুঁজে পাননি। তার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এত দিন বিড়ি বেঁধে সংসার চলত। প্রতিবেশীরা বলছেন, আমেনা ভয় পাচ্ছিলেন-যদি তাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয় তা হলে কোথায় গিয়ে ঠাঁই নেবেন এ বয়সে।
ইটাহারের সোলেমান সরকার এনআরসি শোনার পর থেকেই ভিটে হারানোর উদ্বেগে ছিলেন। শুক্রবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ছেলেরা বলছেন, গত কদিন সমানে প্রমাণপত্র নিয়ে খোঁজ করছিলেন তিনি। উদ্বেগই কাল হলো।
ভিটা হারানোর এই আতঙ্ক যে কতটা মারাত্মক হতে পারে, সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, রাজনীতির এই নোংরা খেলা বন্ধ না হলে এনআরসি আতঙ্কে আরও অনেকের মৃত্যু হবে।
নবান্নে দাঁড়িয়ে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে আশ্বস্ত করেন, ভয়ের কিছু নেই, এই রাজ্যে এনআরসি হবে না।
কিন্তু তার আশ্বাসের আগেই রাজ্যজুড়ে দাবানলের মতো এনআরসি উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের মিলন মণ্ডল (২৭) আত্মঘাতী হওয়ার পরে পরিবারের লোকেরা ভিটা হারানোর ভয়ের কথাই বলেছিলেন।
শুক্রবার জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির বাসিন্দা ৩৯ বছরের অন্নদা রায়ের আত্মহননের পরও একই অভিযোগ তুলেছেন তার আত্মীয়রা।
তারা জানান, চার বিঘা জমি বন্ধক দিয়ে চাষের জন্য টাকা ধার নিয়েছিলেন অন্নদা। এনআরসি নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় তার মনে হয়, কাগজ তো বন্ধক দিয়েছেন, প্রমাণ দেখাবেন কী করে!
স্বজনরা বলেন, এ কথাই বারবার ঘুরেফিরে বলতেন। শেষে বাড়ির পাশের স্টেশনে ওভারব্রিজে গিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
একই উদ্বেগে এ দিন বালুরঘাটে রেশন কার্ড ডিজিটাল করানোর লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ৫২ বছরের মন্টু সরকার। ঠা ঠা রোদে কয়েকশ লোকের পেছনে ছিলেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে বালুরঘাট হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন