সিঙ্গাপুর হ্যাঁ বললেই শুরু প্রবাসে ভোটার নিবন্ধন
প্রবাসেই বাংলাদেশিদের নিবন্ধন করে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার কার্যক্রম গুছিয়ে এনেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর এই কার্যক্রম শুরু হবে সিঙ্গাপুর দিয়ে। দেশটির সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসীদের ভোটার করার বিষয়ে কমিশন চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে সে আলোকে কাজ করছে। একেকটা দেশে একেক রকম ফরম করতে হবে। ইসির ভোটার ফরম-২ তে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। এটি চূড়ান্ত হলে বিধিমালায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে, সেটি করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। এজন্য কমিশন একটি জেনেটিক নীতিমালার খসড়াও করেছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, এরই মধ্যে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে কমিশন। কোন প্রক্রিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করে প্রবাসেই তাদের হাতে এনআইডি দেয়ায় তার একটা পরিকল্পনাও তৈরি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রবাসীদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করার প্রক্রিয়াটি শুরু হবে এভাবে— প্রবাসী ভোটারযোগ্য ব্যক্তি অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে নিবন্ধন ফরম পূরণ করবেন। যারা অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে পারবেন না, তাদের জন্য নিবন্ধনের সময় হেল্পডেস্ক থাকবে। হেল্পডেস্কের দায়িত্বে থাকা অপারেটর সেখানে নিবন্ধন ফরম পূরণ করে দেবেন।
নিবন্ধন ফরম পূরণ করার পর একটি ওয়েবপোর্টালের মাধ্যমে ভোটারের যাবতীয় তথ্য দেশে পাঠানো হবে এবং সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন অফিসার তদন্ত করে আবেদনকারী যে ঠিকানায় ভোটার হতে ইচ্ছুক, সেটি সঠিক কিনা তা যাচাই করে প্রতিবেদন দেবেন। আর এ কাজ তদারকি করবেন আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
আবেদনের সঙ্গে ছবি আপলোডের ব্যবস্থা রাখা হতে পারে এবং প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ সময়সীমা হবে সাত দিন।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে ডাটা/তথ্য সংগ্রহ এবং রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় টিম সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানো হবে। রেজিস্ট্রেশনের কাজ শেষ হলে তথ্যগুলো পুনরায় আবার দেশে এনে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র মুদ্রণ করা হবে। মুদ্রিত কার্ডগুলো সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত দূতাবাসের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্য-প্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটির সভাপতি নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘প্রবাসীদের ভোটার করা ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া সময়ের চাহিদা। আমরা বাংলাদেশের কাজগুলো অনেক এগিয়ে নিয়েছি। সিঙ্গাপুর সরকারের অনুমোদন পেতে চলতি মাসের শুরুতে চিঠি দেয়া হয়েছে। অনুমোদনটা পেলেই আমরা পরিকল্পনা মাফিক কাজ শুরু করব।’
পাইলট প্রকল্প হিসেবে সিঙ্গাপুরকে বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে এই কমিশনার বলেন, ‘সিঙ্গাপুর দেশটি ছোট। সেখানে আমাদের বাংলাদেশি যারা আছেন, তারা বৈধভাবেই আছেন। তাদের সহজে পাওয়া যাবে। সেজন্যই দেশটিকে আমরা বেছে নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা এখন পর্যন্ত যে তালিকা পেয়েছি, প্রবাসে ১ কোটির কাছাকাছি বাংলাদেশি রয়েছেন। এখন কোন দেশে কতসংখ্যক আছেন, তার সঠিক তালিকা তৈরির চেষ্টা চলছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগ নেয় ইসি। এরপর কয়েক দফায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গে বৈঠকও করে।
ওই বছরের ১৯ এপ্রিল প্রবাসীদের ভোটার করার বিষয়ে সেমিনারও করে কমিশন। সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাষ্ট্রদূতসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশ নেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন