রাজধানীর একটি হোটেলে ভারত-বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিষয়ক স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ভারতের বিদ্যুৎ সচিব সুভাষ চন্দ্র গার্গ। ছবি : ইউএনবি
অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় ভারতের ত্রিপুরা থেকে কুমিল্লায় প্রস্তাবিত ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ না কিনে, উত্তরাঞ্চল দিয়ে আমদানির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ভারত-বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিষয়ক স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে এ কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ভারতে রপ্তানির বিষয়েও ইতিবাচক সাড়া মিলেছে বলেও জানান তিনি।
ভারত থেকে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। যার প্রায় পুরোটাই আসে কুষ্টিয়ার ভোড়ামাড়া দিয়ে। প্রতিদিন গড়ে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে। কুমিল্লা দিয়েই আরো ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল।
কিন্তু সেখানকার চেয়ে পঞ্চগড়, দিনাজপুর বা উত্তরাঞ্চল সীমান্ত দিয়ে বিদ্যুৎ আমদানি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ।
বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘বিশ্লেষণের পরে যদি দেখা যায় যে, এটা আমাদের অর্থনৈতিকভাবে খুব বেশি এমনকি কারিগরিভাবেও যদি বেশি লাভজনক না হয় তাহলে আমরা এটাকে ড্রপ করে আমরা আমাদের উত্তরঞ্চলে যেখানে মনে করেন রংপুর, দিনাজপুর বা আপনার পঞ্চগড় এবং সৈয়দপুরে যে আমাদের সংকট আছে সেটাকে মেটানোর চেষ্টা করব। বাংলাদেশে যেটা আনইউজড ক্যাপাসিটি আছে সেটা রপ্তানি করা যায় কীভাবে, এখন এখানে কিন্তু আসলে নতুন করে আমাদের জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটিতে আলোচনা করার কিছু নেই। কারণ তাদের সিআরসি রিগুলেশন অনুযায়ী আমদানি এবং রপ্তানি দুইটাই কিন্তু উন্মুক্ত। অর্থাৎ দুইটা এনটিটি যদি চায় তাহলে ওদের ডেজিগনেটেড অথরিটির পারমিশন নিয়ে কিন্তু সেটা করতে পারে।’
ড. কায়কাউস বলেন, বাংলাদেশ দেখেছে যে প্রস্তাবিত ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি কারিগরি ও আর্থিকভাবে যৌক্তিক হবে না। কারণ ত্রিপুরা থেকে সঞ্চালন ব্যবস্থা ‘দুর্বল’। তিনি জানান, কুমিল্লা অঞ্চলে এখন বাংলাদেশের পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ রয়েছে, যা স্বল্প খরচে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত হচ্ছে।
‘তাই, আমরা চাই প্রস্তাবিত ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রংপুর, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের মতো এলাকার জন্য আমদানি করতে। সেখানে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে উচ্চ খরচে তরল জ্বালানি ব্যবহৃত হয়,’ বলেন বিদ্যুৎ সচিব।ড. কায়কাউস আরো বলেন, যদি উপযুক্ত ক্রেতা পাওয়া যায় তাহলে বাংলাদেশ শীতের অফ-পিক মৌসুমে ভারতে বিদ্যুৎ রপ্তানিও করতে চায়। কারণ, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বা সেখানে রপ্তানি নিয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই। ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এমন বাণিজ্য অনুমোদন করে।
বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ অগ্রগতি অর্জন করেছে জানিয়ে সচিব বলেন, নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাসের মধ্যে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে।
বৈঠকে ভুটান নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানিসহ দুই দেশই লাভবান হয় এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান ভারতের বিদ্যুৎ সচিব সুভাষ চন্দ্র গার্গ। আর এখন পর্যন্ত আলোচিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানানো হয় বৈঠকে।
সুভাষ চন্দ্র গার্গ বলেন, ‘এখানে অনেক সমস্যা নেই। যতখানি আছে সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আশা করছি, যা হবে ভবিষ্যতে দুই দেশের জন্য লাভজনক। ’
গঠনের পর থেকে ছয় মাস পরপর ভারত-বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিষয়ক স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক পর্যায়ক্রমে দুই দেশে হয়ে আসছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন