ছিন্নমূল মানুষ আব্দুর রাজ্জাক থাকেন গুলিস্থানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে। রাত দিন নেতাদের ফরমায়েশ খাটেন। অনেকে পাগলা রাজ্জাক বলেও ডাকেন। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের ভালোবাসাই তার শক্তি। ২০০৪ সালে সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আহত রাজ্জাক। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা করিয়েছেন কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন সহায়তা পাননি তিনি।
গত সোমবার রাতে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ভাইজান গরীবের কথা লিখে আর কি হবে আমাদের তো কোন নেতা নেই, সুপারিশ করার মানুষ নেই এজন্য আপা (শেখ হাসিনা) আমাদের চেনেন না। যারা ওইদিন গুলিস্থান ছিলো না তারাও ভাতা পায় শুনছি।
গ্রেনেড হামলার সময় মনে করে রাজ্জাক কেঁদে ফেলেন আর বলেন, ওই সময় আমাদের ওপর এতো অত্যাচার হয়েছে, টিয়ার গ্যাস আর গুলি ছোড়া হয়েছে। আমরা শুধু আতঙ্কিত ছিলাম শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন কিনা। চারদিশে শুধু লাশের পাহাড়। কেউ ডাকছে মা বাবাকে কেউবা আবার আল্লাহ করছে। কেউ চিৎকার করছে পানির জন্য। পর পর কয়েকটি গ্রেনেড বিস্ফোরনের পর চলতে থাকে গুলি, টিয়ার সেল। যখন হামলাকারীরা নিশ্চিত শেখ হাসিনা বেঁচে আছে তখন তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ওই গুলি মাহবুবের গায়ে লাগে। ট্রাকের নিচে যে গ্রেনেডটি পরেছিলো সেটি বিষ্ফোরিত হলে ওই দিন আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতো।
বিস্ফোরনের সময় কোথায় ছিলেন, জানতে চাইলে রাজ্জাক বলেন, ওই আমি মাটিতে পরে যাই এরপর উঠে দাড়াতে পারিনি। আমার শরীরের ওপর থেকে কয়েকশো মানুষ দৌড়ে যায় এবং আমি জ্ঞান হারাই জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি ঢাকা মেডিকেলের বেডে। কিন্তু কোন চিকিৎসা খরচ বা কোন অনুদান পাইনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে একবার তালিকা হয়েছিলো আমাদের অনেকের ছবি নিয়েছে আর কোন খবর নেই। তবে আর কিছু পাই বা নাপাই শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন এটাই আমার পরম পাওয়া।
চায়ের দোকানী শেখ রুহুল আমিন বাড়ি পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি উপজেলায়। চা বিক্রি করেন প্রায় ৩০ বছর এই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে। তিনি বলেন, সেই দিনের ভয়াবহতা আমার জীবনে আর দেখিনি। মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু ওই দিনের যুদ্ধ দেখেছি। ধান যেভাবে এক সঙ্গে স্তুপ করে রাখে তেমনি ভাবে মানুষের লাশ পরে ছিলো। এখন বেঁচে আছি আল্লাহর দয়ায়। চারদিকে শুধু চিৎকার তার মধ্যে গুলি, টিয়ার গ্যাস, লাঠিচার্জ সেকি অবস্থা বলে শেষ করতে পারবো না।
সরকারি আর্থিক সুবিধা প্রসঙ্গে রুহুল আমিন বলেন, নেতারা যখর তালিকা করছে তখন তাদের নিজেদের মতো করে করেছে আমাদের নাম আর আসেনি।
চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমে রেলওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা হয়। এরপর শুনছি যারা আহত তাদের পুলিশ খুঁজছে তখন পালিয়ে এলাকায় চলে যাই।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান প্রতিষ্ঠিত ২১ আগস্ট বাংলাদেশ আহত, নিহত পরিবারের কেন্দ্রীয় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক নাজিম বলেন, ওইদিন আমি মঞ্চের সামনেই ছিলাম বক্তব্য প্রায় শেষ তখন জিল্লুর রহমান চাচা বললেন পানি খাবেন তখন আমি পানি আনতে যাবো ঠিক এই সময় বিস্ফোরন ঘটে তখন আমি দেখছি আইভি চাচী হেলে পরছেন। আমি দৌড়ে তার কাছে যাই, এর মধ্যে আবার বিস্ফোরন তখন আমার পেটের নাড়ীভুড়ি বের হয়ে যায়, আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। এর পরে আর কিছু বলতে পারবো না। কে বা কারা আমাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেছে বলতে পারবো না। মেডিকেলে নিয়ে আমাকে লাশের সারিতে রাখেন তখন কেউ হয় তো আমার পায়ে পাড়া দেয় তখন আমার জ্ঞান ফেরে, সঙ্গে সঙ্গে ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং চিকিৎসা দেয়। আমার অবস্থা যখন খুব খারাপ তখন আপা (শেখ হাসিনা) খবর পেয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠান। সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এখন পর্যন্ত ২১৫ জনকে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা অনুদান দেন। পুনরবাসনের জন্য ৩৭ ফ্ল্যাট দিয়েছেন।
কিছু ছিন্নমূল মানুষ আহত কিন্তু এখনো যারা কোন সহয়তা পায়নি তাদের ব্যপারে কি করছেন জানতে চাইলে নাজমুল হক নাজিম বলেন, আমার জানামতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ৩১১ জনের তালিকা আছে এছাড়াও অনেকে ভয়ে তখন আসতে পারেনি তারা প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ জানের নাম আছে। হয়তো তারা পর্যায়ক্রমে অনুদান পাবে তবে সঠিক তথ্য দিতে হবে।
এ বিষয় ২১ আগস্ট হামলায় আহত ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, ট্রাকের ওপরে মঞ্চ করা হয় তার সামনেই ছিলাম সমাবেশ প্রায় শেষ তখনই বিস্ফোরন ঘটে এর আগেই ব্যনার গুছয়ে আমি বাটার দিকে যাই। পর পর কয়েকটি বিস্ফোরন ঘটে তখন আমার শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখি সারা শরীর থেকে রক্ত ঝড়ছে। অন্যদিকে পরো এলাকায় লাশের স্তুপ হয়ে যায় ৩ ফুট উচু হয়ে আছে। আমার তখনো জ্ঞান ছিলো, দেখলাম লালবাগের কিছু মহিলা রাস্তায় পরে কাতরাচ্ছে আর আহাজারি করছে বাচাঁও আবার কেউ বাবা, মা, বলে চিৎকার করছে। কোন গাড়ি ছিলো না এক মহিলাকে একটি গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে তাকে অনুরোধ করলে তিনি আমাদের ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যান। এখনো এই কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছি ২ মাস ভালো তো ৩ মাস অসুস্থ। শরীরে অগনিত স্লিন্টার নিয়ে জীবন চলছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন