ই-পাসপোর্ট নিয়ে ধোঁয়াশা, কবে চালু হবে কেউ জানে না
বাংলাদেশে হাতে লেখা পাসপোর্ট থেকে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট বা এমআরপি প্রবর্তনের পর এক দশকও পার হয়নি। কিন্তু এমআরপির ডেটাবেজে ১০ আঙুলের ছাপ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় এক ব্যক্তির নামে একাধিক পাসপোর্ট করার ঘটনা দেখা যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিক ভোগান্তি কমাতে এবং একজনের নামে একাধিক পাসপোর্ট করার প্রবণতা বন্ধ করতে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) চালু করতে উদ্যোগী হয় সরকার। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে ১০ বছর মেয়াদি এই ই-পাসপোর্ট চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। চলতি আগস্ট মাসের শুরু থেকে এটি দেয়ার কথা ছিল। এই উদ্যোগ ২০১৭ সালে নেয়া হলেও বিভিন্ন কারণে নানা জটিলতায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত ই-পাসপোর্ট আলোর মুখ দেখবে কি-না সেটা নিয়েও এখন ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। সবশেষ গত ২৩ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সংসদে বাজেট আলোচনায় বলেছেন, ‘জুলাই মাসের শেষ নাগাদ ই-পাসপোর্ট ও ই-গেইটের কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে।’
ই-পাসপোর্ট সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জুলাইয়ে উদ্বোধনের কথা থাকলেও তা হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আকাশ, জল ও স্থল বন্দরে ই-গেট স্থাপনের কাজ এখানও শেষ হয়নি। এমনকি কিভাবে এর ব্যবহার করা হবে তার প্রশিক্ষণও দেয়া হয়নি ইমেগ্রেশন পুলিশকে।
তবে পাসপোর্ট অধিদফতরের একটি সূত্রে জানা যায়, উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়া সাপেক্ষে যেকোনও চালু হতে পারে ই-পাসপোর্ট।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণারয় জানায়, ইতোমধ্যে দুই কোটি ৬০ লাখ মানুষের হাতে এমআরপি পাসপোর্ট তুলে দেওয়া হয়েছে। ই-পাসপোর্ট সারা বিশ্বে একটি নতুন প্রযুক্তি। জার্মানির একটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান ই-পাসপোর্ট ও ই-গেট নিয়ে কাজ করছে। তারা সব ধরনের কাজ গুছিয়ে এনেছেন। এটা প্রায় রেডি হয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী জুলাইয়ের যেকোনো সময় ই-পাসপোর্টের উদ্বোধন করতে পারবেন।
স্পেশাল পুলিশ ব্রাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) শাহারিয়ার আলম ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘বিমানবন্দরে নতুন করে দুটি ই-গেট বসানোর কাজ চলছে। তবে কালো তালিকাভুক্ত ব্যক্তি, জাল পাসপোর্ট ও ভিসাধারী ব্যক্তি এবং মানবপাচার ঠেকাতে সেখানে করণীয় বা কোনও নির্দেশনা আসেনি। তৈরি হয়নি নীতিমালা। অল্প সময়ের মধ্যে এর কার্যক্রম হয়তো চালু হবে বলে আশা করছি।’
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জার্মানির সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেলে দেশেই ই-পাসপোর্ট সেবা পাওয়া যাবে। প্রথম ৬ মাস জার্মানি সরকার ই-পাসপোর্টর কাজ করে দেবে। তারপর থেকে আমরা নিজেরাই করবো। তবে আগামী ২ বা ৩ বছর জার্মানি সরকার থেকে আমরা এই বিষয়ে রক্ষণাবেক্ষণ সেবা নেবো।’
ই-পাসপোর্ট সেবা নেয়ার জন্য দু’দেশের মধ্যে চুক্তি সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং জার্মানির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিয়েলসন এনেন উপস্থিত থাকবেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
পাঁচ ও ১০ বছর মেয়াদি হবে এ পাসপোর্ট। দুই ক্যাটাগরির পাসপোর্টের একটি ৪৮ পৃষ্ঠার, আরেকটি ৭২ পৃষ্ঠার। যারা ৭২ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট নেবেন তাদের ক্ষেত্রে ফি-ও বেশি হবে।
বর্তমানে সাধারণ ও জরুরি পাসপোর্ট করতে যথাক্রমে ৩ হাজার ও ৩ হাজার টাকা ফি দিতে হয়। ৫ ও ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট নিতে যথাক্রমে সাড়ে ৫ হাজার ও ১১ হাজার টাকা ফি লাগবে। এর সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত হলে সাধারণ পাসপোর্ট করতে ৬ হাজার ৩২৫ টাকা এবং জরুরি পাসপোর্টে ১২ হাজার ৬৫০ টাকা খরচ হবে।
বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় চার হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ২০১৮ সালের জুলাই হতে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। ১০ বছরে মোট ৩০ মিলিয়ন পাসপোর্ট তৈরি করা হবে। এর মধ্যে দুই মিলিয়ন তৈরি হবে জার্মানিতে। ফলে প্রথমে যারা আবেদন করবেন তাদের পাসপোর্ট জার্মানি থেকে তৈরি হয়ে আসবে।
পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডাটা পেজে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। এছাড়া ই-পাসপোর্ট চালু হলেই এমআরপি পাসপোর্ট বাতিল হবে না বলে জানায় পাসপোর্ট অধিদফতর।
তবে নতুন করে কাউকে এমআরপি পাসপোর্ট দেয়া হবে না। যাদের এমআরপির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে তারা নবায়ন করতে গেলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে এমআরপি পাসপোর্ট তুলে নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ১১৯টি দেশের নাগরিক ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করছে। ই-পাসপোর্ট চালু হলে ১২০তম দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম লেখা হবে। ই-পাসপোর্ট ই-গেটের একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখার সঙ্গে সঙ্গে বাহকের পরিচয় নিশ্চিত করবে। নির্দিষ্ট নিয়মে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে দ্রততম সময়ের মধ্যেই ভ্রমণকারী ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। ই-গেটে কোনো তথ্যবিভ্রাট ঘটলেই লালবাতি জ্বলে উঠবে। তখন সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সঠিকভাবে ই-পাসপোর্ট ব্যবহারে সহযোগিতা করবেন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন